অনুভূতি - ২ (পর্ব-৫)




 


কোন কথা চিন্তা করেই আমার পিছন পিছন এই ঘন জঙ্গলে চলে আসলে? রাইসা- তাহলে কি ওই অবস্থায় তোমাকে একলা একলা জঙ্গলের ভিতর ছেড়ে দিতাম? তুমি পারতে আমাকে ছাড়তে? এ্খন পর্যন্ত আমার হাতটা কিভাবে ধরে রেখেছো নিজেই দেখ! আমি মুখে কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম একারনেই স্ত্রীকে অর্ধাঙ্গিনী বলে। রাইসা, আমার অর্ধাঙ্গিনী। রাইসা- তাকিয়ে থেকোনা, এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করো। তোমার হাতের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে, আর ওটা কি গাছ ছিলো আমি চিনিনা। বিষাক্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, ফার্স্ট এইড দিতে হবে আর ফার্স্ট এইড কিটের বক্স গাড়িতে। আমি এখন শতভাগ নিশ্চিত এটা স্বপ্ন বা ভ্রম না, আমি ওয়াকিটকিটা হতে নিলাম। রেডিও সিগ্যালে কারো সাথে যোগাযোগ করলাম না, কারণ এখানে কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্র সশস্ত্র সংগঠনের থাকার বিশেষ সম্ভাবনা আছে। আর ওদের কাছেও ওয়াকিটকি থাকে আর আপনারা তো জানেনই ওয়াকিটকির রেডিও কমিউনিকেশন প্রাইভেট না। তবে স্যাটেলাইট সুবিধা থাকার কারণে GPS coordinates, Map পাওয়া গেলো কিন্তু ঘন জঙ্গলের কারন Direction পাওয়া গেলো না। ঘন গাছপালার মধ্যে ম্যাগনেটিক কম্পাস সেন্সর ঠিক মতো কাজ করেনা তবে একটা নিদৃষ্ট ডিরেকসনে কিছুটা হাটতেই Direction টা পাওয়া গেলো কিন্তু কোন ডিসট্রেস সিগন্যাল পাঠালাম না, কারণ এখানে কিভাবে এসেছি আর আসার কারণ কাউকেই বিশ্বাস করানো যাবেনা। আসলে আসার কারণ আমি নিজেই জানিনা। আমি একটা গাছের গোড়া কিছুটা পরিষ্কার করে সেখানে বসলাম ক্লান্ত লাগছে খুব, রাইসাও পাশে বসলো। তো রাইসাকে বললাম- বান্দরবন-রোয়াংছড়ি সড়কের ৯৯° ডিগ্রী দক্ষিন-পূর্ব দিকে মানে ৫০০ থেকে ৫৭৫ মিটার জ্বঙ্গলের ভিতরে মানে বান্দরবন-রোয়াংছড়ি সড়ক এখান থেকে ৫০০ থেকে ৫৭৫ মিটার ২৭৪° ডিগ্রী উত্তর-পূর্ব দিকে। আর এখন ৩:৪৭ ঘড়িতে বাজছে। কিন্তু গাড়িটা রাস্তার কোথায় রেখে এসেছি সেটা কিভাবে বের করবো? তাছাড়া এই রাতে এই জঙ্গল থেকে বের হওয়াটা সহজ হবে না, এক প্রকার অসম্ভব। কারণ আমাদের কাছে জি.পি.এস থাকলেও কোন টর্চ নেই, মোবাইলের ফ্লাশ লাইট দিয়ে এই ঘন জঙ্গলে কাজ হবেনা তাছাড়া পরিপর্শিক অবস্থাও আমাদের অনুকুলে নেই (ওর পেছনে দেখা ঘন অন্ধকার অবয়বটার কথাটা ওকে আর বললাম না,আমি জানি ওটা এখনো অন্ধকারে ঘাপটি মেরে আমাদের অনুসরণ করছে। অবশ্য বললেও কোন অসুবিধা ছিলোনা। এখন এই আস্বাভাবিকতার খুব কম কম অংশই ওর দেখা বাকি আছে। কিন্তু ওই অন্ধকার, অন্ধকার জগৎ কোনটার সাথে কোন ভাবেই আমি ওর দেখা হতে দিবোনা, কোন ভাবেই না। ওই চাচার ওপর খব রাগ হচ্ছে, আবার মনে হচ্ছে তারই বা কি দোষ)। আর চাঁদের আলো কখনো মেঘে দীর্ঘক্ষনের জন্য ঢেকে যাচ্ছে আবার কখনোবা বেরিয়ে আসছে, ওই আলোর ওপর ভরসা করে এগুনো ঠিক হবেনা। ভোর হতে বেশি সময়ও বাকি নেই, কি বলো তুমি ? রাইসা- ক্যাপটেন সাহেব আমি ডাক্তার, নেভিগেটর নই। এখান থেকে বের হওয়ার পরিকল্পনা আপনি করেন। আচ্ছা আপনার মেবাইলটা কোথায়? আমি- এই আপনি আপনি আপনি করবানাতো! রাইসা- কেন? আমি- পর পর লাগে! রাইসা আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমি- আচ্ছা মোবাইল তো আমার সাথে নেই, আমি কি ঢাকা থেকে মোবাইল নিয়ে এসেছি? রাইসা- হ্যা, মোবাইল তুমি নিয়ে এসেছো। গাড়িতে তোমার মোবাইল চার্জেই ছিলো, তাহলে আসার সময় সম্ভবত খালি ওয়াকিটকিটাই নিয়ে এসেছো। মোবাইল গাড়িতেই ফেলে এসেছো। ওটাতে ফাইন্ড মাই ডিভাইস ফিচাররে মাধ্যমেই গাড়ি খুজে বের করবো। আমি- কিন্তু সেজন্য তো আমাদের কাছে আরেকটা নেটওয়ার্ক আছে এমন ডিভাইস ও তো লাগবে। এই ওয়াকিটকি স্যাটেলাইট কানেক্টেড হলেও এটা দিয়ে ওই কাজ হবেনা। রাইসা- আরে আমার ফোন সাথে আছেতো। আমি- কিন্তু সেটাতে নেটওয়ার্কও তো থাকতে হবে তাইনা? রাইসা- এই আধা কিলোমিটার জঙ্গলের মধ্যে হয়তো নেটওয়ার্ক নেই কিন্তু রাস্তায় তো থাকার কথা। আমি- হুম, তবে এই বান্দরবন-রোয়াংছড়ি সড়কের মতো যায়গায় কি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে!? রাইসা- রাস্তায় গিয়েতো দেখি। আকাশটা ধীরে ধীরে মেঘলা হতে হতে এবার বৃষ্টি নেমেই পড়লো। এবার রাইসা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। কারণ এই বৃষ্টিতে ভিজে আমার না আবার জ্বর এসে যায়! কিন্তু ওর তো কিছু করার নেই, আমাকে এই বৃষ্টি থেকে আড়াল করার মতো কিছু ওর কাছে নেই। শেষ পর্যন্ত নিজের ওরনাটাই আমার মাথায় দিয়ে আমার মাথাটা বৃষ্টি থেকে আড়াল করার চেষ্টা করলো। কিন্তু আমিতো জানি যে বৃষ্টিতে ভীজে আমার জ্বর এসেছিলো না। সে যাই হোক আমি ওকে বললাম এই কি করছো? রাইসা- দেখতেই তো পাচ্ছো, এমনিতেই তো তোমার শরীর ভালো না। আবার যদি অসুস্থ হয়ে পড়ো তাছাড়া এখানে তো তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই যে গায়ে ওরনা না থাকলে অসুবিধা, নাও ওরনাটা দিয়ে তোমার মাথাটা ঢেকে দিচ্ছি। কিছুটা হলেও তো বৃষ্টি থেকে আড়াল হবে। আমি- পাগলী কোথাকার, আমি ওরনাটা ওর কাছ খেকে নিয়ে ওর মাথায় দিলাম আর আরো গা ঘেষে বসে ওর মনের শান্তির জন্য আমার মাথায়ও দিলাম। আপনারা হয়তো ভাবছেন ওর মোবাইল আমার ওয়াকিটকির কথা, ওগুলোতো বৃষ্টিতে ভিজে খারাপ হয়ে যেতে পারে, নাহ্। আমার ওয়াকিটকি মিলিটারি গ্রেডের ওটা এরকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরী আর রাইসার মেবাইল মিলিটারি গ্রেডের না হলেও ওযাটার প্রুফ আর যে কাঁধে ঝোলানো যে ব্যাগের মতো জিনিটার মধ্যে আছে ওটাতেও পানি ঢেকোনা, ওটার ভেতরে ছাতার মতো আরেকটা লেয়ার আছে। যাক এসব যান্ত্রিক কথা, রাইসা আমার এতো কাছে বসার কারণে ওর থেকে একটা সুঘ্রান আমি পাচ্ছি, সুঘ্রান আমার ঘ্রানেন্দ্রিয় ছাড়া অন্য কোন ঘ্রানেন্দ্রিয়ের অনুভব করার সৌভাগ্য হয়নি। হবেও না। এর মধ্যে একটা মাদকতা আছে! আমি অবাক হলাম এই পরিস্থিতিতেও মেয়েটা আমার হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার যে ঘুম আসছেনা তা না, কিন্তু এটা জঙ্গল। পরিবেশটাও অভিশপ্ত। এখানে দুজন একসাথে ঘুমিয়ে পড়লে চলবেনা। কিন্তু যতই এক্স মিলিটারী হইনা কেন প্রায় দুই দিন না ঘুমিয়ে তার ওপর প্রায় ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা ড্রইভ করে এখানে আসার পর ঘুমে দুচোখ বন্ধ হয়ে আসছে, বৃষ্টি আসার আগ পর্যন্ত মশার একটা ঝামেলা ছিলো এখন সেটা একবারে নেই বললেই চলে ফলাফল সরুপ এক পর্যায়ে নিজের অজান্তেই রাইসার মাথায় মাথা দিয়ে ঘুমিয়েই পড়লাম। আমার ঘুম অত্যন্ত গভীর, তবে রাইসার ঘুম খুবই পাতলা। কিন্তু আমার মধ্যে আলাদা একটা একটা ব্যাপার আছে, একটা কথা আছে “Once a soldier, always a soldier”. They have an extra sense of detecting possible danger around. আমার বিষয়টাও সেরকমই। ভোরের আলো সামান্য ফুটতে শুরু করেছে, তখনো আমাদের কারোই ঘুম ভাঙেনি। ওইযে extra sense, ঘুমের মধ্যেই অনুভূত হলো ভয়াবহ একটা বিপদ আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, আর সেটা আমাদের সামনের দিক থেকে। বৃষ্টি প্রায় থেমে গিয়েছে। আমি চোখ খুলে সামান্য খেয়াল করার পর বুঝতে পারলাম আমাদের সামনের দিকের সামান্য ডান কর্ণার, এই ধরুন ডায়াল ওয়ালা গড়ির 2 Oclock পজিশন থেকে ঘাস লতাপাতার নিচ দিয়ে কিছু একটা আসছে। ঘাসের মুভমেন্ট দেখে বুঝলাম এটা একটা সাপ। রাইসা আমার ডান হাত জড়িয়ে এখনো ঘুমোচ্ছে। সেটা সমস্যা না, আমি শুধু একজন Ex Captain’ই না Ex প্যারা কমান্ডো’ও। আমি রাইট হ্যান্ডার হলেও আমার দুই হাতই সমান ভাবে চলে। আমি ওকে জাগালাম না সামান্য আলো ফুটলেও জঙ্গল থেকে বের হওয়ার মতো পরিস্থতি এখনো তৈরী হয়নি। ও আরেকটু ঘুমাক। আমি খালি বাম হাত দিয়ে তরবারিটা শক্ত করে ধরলাম কিন্তু সাপটাকে তাড়ানোর চেষ্টা করলাম না কারণ পরবর্তীতে এটাই যে ঘুরে ফিরে আবার সামনে এসে পায়ের তলে পড়বেনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমি এখানে বসার আগে জায়গাটার আশ-পাশটা বেশটা পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম ঠিক এই আশঙ্কাতেই। সাপটা নজরে আশা মাত্র প্রায় নিশব্দে ওটার মাথাটা আলাদা করে ফেললাম, সাপটার নাম মনে পড়ছেনা তবে জানি এটা সাংঘাতিক বিষাক্ত। তারপর তরবারির আগা দিয়ে একটা ছোট গর্ত খুড়ে মাথাটা মাটিতে পুতে দিলাম। ভাবছেন রাইসাকে না জাগিয়েই এক হাত দিয়ে কিভাবে এই কাজটা করলাম? করা যায়, এটা তেমন কোন কঠিন কাজ না, আর একজন প্যারা-কমান্ডোর কাছেতো একবোরেই না। সাপটার বাকি দেহটা সামনেই পড়ে থাকলো। আমি রাইসার ঘুমিয়ে থাকা নিস্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে খাকলাম, আর ভাবতে থাকলাম কি বিপদেই না ফেলেছি মেয়েটাকে আমি। ভোরের আলো ধীরে ধীরে আরেকটু পরিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টিও বেড়ে গেলো। আলো ফুটছে, কিন্তু মেঘের কারনে অন্ধকারটা খুব একটা কাটছেনা। তবে এখন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু তার পরেও রাইসাকে ডাকতে ইচ্চে করলোনা, ডাকলাম ও না। তবে বৃষ্টি বাড়ার কারনে রাইসার ঘুম ভেঙে গেলো, রাইসা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো এখনো পুরোপুরি ভোর হয়নি? আমি ঘড়ি দেখিয়ে বললাম ৫টা ৪৭ বাজে। মেঘের কারনে অন্ধকার হয়ে আছে তার উপর ঘন জঙ্গল! রাইসা- তো এতক্ষন ডাকোননি কেন? আমি- ভাবলাম, তুমি ক্লান্ত। আরেকটু ঘুমিয়ে থাকলে এমন কোন অসুবিধা নেই তাই ডাকিনি। তাছাড়া তখন আলো আরো কম ছিলো। (আরো একটা কারণ ছিলো, ও এভাবে আমার এত কাছে এর আগে কখনো আশেনি, যদিও এক বিছানায় থাকি কিন্তু এতো বেশি কাছে না। ওর সাথে আমার সম্পর্কটা এখনো মানসিক, আত্মিক ও মায়ার, এছাড়া আমার ঠোট কখনো ওর ঠোট স্পর্শ করেনি। সেটা কপাল বা গাল পরর্যন্তই সীমাবদ্ধ আছে আগেই বলেছি আমি মানুষ হিসেবে রোমান্টিক নই। বিষয়টা আপনাদের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগলেও আমাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এরকমই। তবে এই অসময়ে যে আমার মধ্যে হঠাৎ এই রোমান্টিকতা জেগে উঠবে যেটাও বুঝতে পারিনি। আসলে ওর এভাবে এতটা কাছে এসে হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানো আর ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছিলো, আমি চাচ্ছিলাম সময়টা আরো দীর্ঘায়িত হোক। তাই ইচ্ছে করেই ডাকিনি।) রাইসা ”ও আচ্ছা তাই” বলে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো সেটা দেথেই আমি বুঝতে পারলাম যে ও আমার না বলা কথাটাও বুঝতে পেরেছে। তারপর ও বলেই দিলো, দেখো, আমি তোমার স্ত্রী, আমার কাছে আসতে তোমাকে এতো লুকোচুড়ি কেনো করতে হবে বলোতো? এই কথাটা বলেই ও আমার ঠোটের এতো কাছে চলে আসলো যে আমি ওর প্রতিটা নিঃশ্বাস আর নাকে অনুভব করতে পারছিলাম। না, আপনারা যেরকমটা ভাবছেন তেম কিছুই ঘটেনি। আমি বললাম লুকোচুড়ি আবার করলাম কখন! আমি আবার মিথ্যা বলে ধরা খেলাম। রাইসা এবার আমার লজ্জাপাওয়া দেখে হাসতে লাগলো…আর আমি মাথা চুলকাতে লাগলাম! এমন পরিস্থিতিতে আমি এর আগে কখনো পড়িনি। (খালি একটা কথা মাথায় আসলো যে নিজের স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনীর সামনে এরকম পরিস্থিতিতে একবার কেন হাজার বার পড়লেও কিচ্ছু আসে যায়না) আমি ওর ওই অপার্থিব মিষ্টি হাসির দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। এখন এর চেয়ে সুন্দর কিছু দেখার মতো কোন কিছু এই পৃথিবীতে নেই! রাইসা- এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আগে কখনো দেখনি? আমি- দেখেছি কিন্তু এভাবে না! রাইসা- তাহলে এখানেই থাকার পরিকল্পনা করেছো নাকি? উঠো তো। উঠতে গিয়েই শিরোচ্ছেদ করা সাপটা দেখে ও আৎকে উঠলো। (আৎকে ওঠাটাই স্বাভাবিক, ও তো আর জানেনা যে ওটা মৃত) আমিই বললাম, ভয় পাওয়ার কিছু নাই ওটা মরা। রাইসা- তুমি মেরেছো? আমি- হুমম। কি সাপ দেখো তো চিনতে পারো কিনা? যদিও ওটার মাথা নেই। রাইসা- মাথা নেই মানে? আমি- না ব্যাপারটা সেরকম না, মাথা আগে ছিলো এখন নেই। আমি তরবারিটা দিয়ে সাপটা উল্টাতেই রাইসা বললো, -”শঙ্খচূড়”, ভয়ানক বিষাক্ত। এটার মাথাটা কি করেছো? আমি যে জায়গায় মাথাটা পুতেছি সেটা দেথালাম। রাইসা- তুমি একটুও ঘুমাওনি তাইনা? আমি একটু ভাব ধরে বললাম একটুও না।(যদিও এই মিথ্যাটা না বললেও চলতো) রাইসা- চলোতো এখান থেকে। কোন দিকে দিয়ে যেতে হবে? আমি একটা দিক ইশারা করে বললাম ওই দিকে বলে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে এমন ভাবে হাটতে লাগলাম যেন ও সব সময় আমার ঠিক পিছনে অবস্থান করে। আর ওয়াকিটকির কম্পাস হেডিং এর জায়গাটা দেখিয়ে ওকে বললাম এটা ২৭৪° ডিগ্রী থেকে খুব বেশি এদিক ওদিক যেন না হয়। আর একটু থেমে কিভাবে ডিসট্রেস সিগন্যাল পাঠাতে হয় আর রেডিও কমিউনিকেশন করতে হয় সেটাও শিখিয়ে দিলাম সাথে, কারণ ওরকম আরেকটা সাপ যে বেখোয়ালে আমার পায়ের তলে পড়বে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একারনেই রাইসাকে পিছনে রেখেছি। তারপর আবার তরবারিটা দিয়ে সামনের দিকে শব্দ করতে করতে হাটতে শুরু করলাম। যেত যেতে রাইসা বললো, ফেরার সময় গাড়ি আমি চালাবো। আমি- প্রায় ৪০০ কিলো রাস্তা। অতদুর তুমি পারবেনা, তাছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাও তোমার নেই। রাইসা- তাহলে এই চোখে ঘুম নিয়ে এতদুর রাস্তা তুমি চালাবে? আমি বললাম আজকে ঢাকা ফিরবোই না। চলো কক্সবাজার যাই। এই সুযোগে ঘোরাও হয়ে যাবে। কক্সবাজার এখান থেকে খুব বেশি দূরেও না। রাইসা- এই এক কাপড়ে? তাও আবার বৃষ্টিতে ভেজা! আমি- রাইসা মনে পড়ে যেদিন আমার হত ধরে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলে সেদিনও কিন্তু এক কাপড়েই বেরিয়ে এসেছিলে সেদিনও এরকমই বৃষ্টি ছিলো। সারা রাত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে সেই বৃষ্টি ভেজা কাপড় গায়েই শুকিয়েছে। সেদি হাতে না ছিলো হাতে ভালো মানসম্মত কোন হোটেলের ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা, না রাস্তায় Audi পার্ক করা ছিলো। ওই এক কাপড়েই Toyota Probox এর সেকেন্ড সিটে ২ রাত কাটিয়েছিলে? রাইসা- হুম। তা না করে কি তাহলে বাড়ি থেকে ঠিক করা তোমার মতে (ওই কর্পোরেট ডমেস্টিক অ্যানিমেলটাকে) বিয়ে করতাম? সে পারতো এরকম একটা অভিশপ্ত জঙ্গলের মধ্যে সারারাত তরবারি হতে করে আমাকে সারারাত পাহারা দিতে? আমরা ঘুমটা পর্যন্ত না ভাঙিয়ে ওরকম একটা বিষাক্ত সাপ মেরে চুপচাপ বসে থাকতে? পারতো ? আমি- সে হয়তো তোমাকে এমন পরিস্তিতিতে ফেলতই না, তাছাড়া কর্পোরেটরা কিন্তু অতটাও খারাপ না। বলে যেইনা এটা হাসি দিয়েছি। বৃষ্টির সাথে সাথে আমার ওপর রাইসার কিল ঘুষি বর্ষিত হতে লাগলো। হাতে ওয়াকিটকি থাকায় সবিধা করতে পারছিলোনা। আমি কোন ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে থামালাম আর ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, তোমার কি মনে হয়, ওই অ্যানিমেলটার ক্ষমতা ছিলো আমার চোখের সামনে দিয়ে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার? এবার চলো রাস্তায় গিয়ে আবার গাড়ি খুজতে হবে! আমরা প্রায় দেড়/ দুই ঘন্টা মতো হেটে যখন সবে রাস্তার দেখা পেলাম তখন পেছন থেকে আমার নাম ধরে কেউ ডাকলো। কন্ঠটা একবারেই মৃদু ছিলো, ঠিক আগের বারের মতো। আমি সাথে সাথেই রাইসাকে আমার সামনে নিয়ে এসে একবার জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে রাইসাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমিকি কিছু বা আমাকে কাউকে ডাকতে শুনলে? রাইসা- কই, নাতো! তুমি খুব ক্লান্ত আর যে জ্বর তোমার এসেছিলো তাতে দূর্বলও তার ওপর একভাবে বৃষ্টিতে ভিজছো। তুমি কিছু শুনে থাকলেও ভুল শুনেছো। আমি বললাম তাই হবে হয়তো। কিন্তু আমি জানি আমি ভুল শুনিনি কিন্তু যে অভিশপ্ত অন্ধকার থেকে আমি রাইসাকে একবার বের করে এনেছি আমি আর কখনোই ওকে তার মুখোমুখি হতে দিবোনা, কখনোই না। তবে আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি সেটা আমি জানি। হঠাৎই আমি রাইসাকে জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কাঁদতে লাগলাম। রাইসা আমাকে এর আগে কখনো কাঁদতে দেখেছে বলে আমার মনে পড়েনা। রাইসা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো- কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? আমি- রাইসা আমি খুব ক্লান্ত, শারীরিক ভাবে না, মানসিক ভাবে। এসব আমি আর নিতে পারছিনা। তুমি যাবে আমাকে এসব থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে, অনেক দূরে। যেখানে এই অভিশপ্ততার ছায়া পর্যন্ত থাকবেনা। রাইসা- পারবো, কেন পারবো না? বাচ্চাদের মতো কান্না করছো কেন, আমি আছি তো। (আমি জানি রাইসা পারবে, এর আগেও পেরেছিলো নিজের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে ওই ঘন তরল অন্ধকার যুক্ত মেস থেকে আমাকে নিয়ে এসে, ওই সমস্ত অন্ধকারকে আমার পাশে দাড়িয়ে পার্থিব আগুন দিয়ে জ্বালীয়ে দিয়ে। কিন্তু আমিই নিজেকে এর সাথে আবার জড়িয়েছি। ও আবার ছাড়িয়ে আনবে এবং বেশির ভাগ সম্ভাবনা আমি নিজে থেকেই আবার জড়াবো বা পরিস্থিতি আমাকে জড়াতে বাধ্য করবে। কিন্তু মেয়েটার ধৈর্য আছে, আমি এটুকু নিশ্চিত যে ও হাল ছাড়বে না। ওই অভিশপ্ত অন্ধকারের চেয়ে এই ক্ষেত্রে ও অনেক বেশি শক্তিশালী। নারীরা এমনই, একারণেই জন্ম হয় বেহুলাদের!) আমাদেরকে গাড়ি খুজতে হলো না, কারণ রাস্তায় ওঠার পরই দেখলা ওটা সামান্য দুরেই পার্ক করা। আমি গড়িতে সেকেন্ড সিটে বসে রইসাকে বললাম চলো কক্সবাজারের দিকে যাবো। তুমি হাইওয়ে পর্যন্ত চালাও খালি। ও আমার গতকাল রাতে হতের কেটে যাওয়া অংশে ফার্স্ট এই লাগিয়ে তার পর গাড়ি চালাতে শুরু করলো। রাস্তা শরু হওয়ায় ওকে খুব সাবধানে আর ধীরে চালাতে হচ্ছিলো। তো হাইওয়ে পর্যন্ত যেতে ওর প্রায় দেড়/দুই ঘন্টা। মতো সময় লাগলো। এই সময়টাতে এবার আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, আর এবার রাইসা আমাকে ডাকেনি। রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে বসে ছিলো, আমি ঘুম জড়ানো কন্ঠে সিটটা সেজা করতে করতে রাইসাকে বললাম আমার এখন চা আর সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। রাইসা- আমিও খাবো? আমি- সিগারেট??? রাইসা- আরে নাহ্। রাইসা যে জায়গায় গাড়ি দাড় করিয়েছে জায়গাটা একটু বাজার মতো। সামনেই একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে। আমার একদম হাঁটতে ইচ্ছা করছেনা, কোন রকমে ড্রাভিং সিটে গিয়ে বসে দোকানটা থেকে ফুট চারেক দুরে গাড়িটা থামালাম। দেড় দুই ঘন্টা গাড়িতে থাকার কারনে আমাদের জামা শুকালেও পুরোপুরি শুকায়নি। আমি গিয়ে একটা গোল্ডলিফ রেগুলার নিলাম আর আমাদের দুজনকে চা দিতে বললাম। তো চা পানি খাওয়ার পর আমরা বেরিয়ে পড়লাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে, মেরিন ড্রাইভ ধরতে সময় লাগলো। রাইসা একটা গান চালিয়ে দিলো মিজিক প্লেয়ারে। আমি এর আগে কখনো কক্সবাজার যায়নি, ওখানকার কিছুই আমি চিনিনা। ওখানে পৌছানোর পর প্রথমে একটা মার্কেটে গেলাম, এই জামা কাপড় বদলাতে হবে। জামাকাপড় তো কিনলাম কিন্ত চেঞ্জ করতে হলে তো একটা জায়াগা লাগবে, ওটা আমি গাড়িতেই করতে পারি। অভিজ্ঞতা আছে, আর আমার গাড়ির কাঁচ টিন্টেড। কিন্তু রাইসা ওটা করতে পারবেনা। হঠাৎ একটা ফোন আসলো, আমার এক বন্ধুর। আমি কথা বলতে বলতে...

পরবর্তী পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ