অনুভূতি - ২ (পর্ব-৪)




 


আমরা বাসায় পৌছে গেলাম। রাইসা বাথরুমে গেলো। আমার আর গোসলে যাওয়ার ধৈর্য হলোনা, গাড়িরে এ.সি’র কারনে এমনিতেই কাপড় শুকিয়ে গিয়েছে। ভাবলাম যে কাপড়টা ওয়াশিং মেশিনে নিজেই দিয়ে আসি, সাথে সাথেই আমি বুঝতে পারলাম ঘটনার সুত্রপাত কোথা থেকে “ওয়াশিং মেশিন” “!


[তখনই হলো একটা বড়ো ভুল। গোসল করে এসে গতকালের নোংরা কাপড় গুলো আমাদের নোংরা কাপড় রাখার কমন যে বিনটা আছে ওখানেই ফেলে রেখে সরাসরি বিছানায় গিয়ে পড়লাম। বিনটাতে রাইসার কিছু কাপড় ও একটা অ্যাপ্রোনও ছিলো।


দুপুর ১২টার দিকে ঘুম ভাঙলো, রাইসা সম্ভাবতো ডিউটি শেষ করে বাসায় এসেছে। ও বিনে রাখা সব কাপড় ওয়াসিং মেশিনে দিয়ে কফি বানিয়ে আমাকে ডাকলো। ড্রইংরুমে টিভি দেখতে দেখতে ওর সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে গত রাতের সেই কাপড় পুড়িয়ে ফেলার কথা ভুলেই গেলাম।

]! 


আমি সাথে সাথেই একটা স্ক্রু-ড্রাইভার হাতে করে দ্রুত গেলাম ওয়াশিং মেশিনের দিকে। প্রথমে ওটার ভেতরে একটা শর্ট সার্কিট করে দিলাম, তারপর যেই দেখলাম রাইসা কাপড় হাতে এদিকে আসছে আমি সাথে সাথেই ওয়াশিং মেশিনের সুইচটা অন করে দিলাম আর তার সাথেসাথেই শর্ট সার্কিটের জন্য ঠাস করে একটা শব্দ হয়ে মেশিনটা কেটে গেলো।


রাইসা বললো এটার আবার কি হলো?

আমি বললাম কোন ভাবে পানি ভেতরে গিয়ে হয়তো শর্ট সার্কিট হয়ে ছিলো আমি কাল ঠিক করিয়ে আনবো। ততক্ষন সকাল হয়ে গিয়েছে। আমি রাইসাকে বললাম,

  • তুমি কদিন ছুটি নিতে পারবে?

আমি কিছুটা অনুধাবন করতে পারছিলাম যে রাইসার এই ছুটির দরকার হবে।

রাইসা- আমিও তাই ভাবছিলাম। আর আজকে তো হাসপাতালে যাচ্ছিই না। 


কোথায় ভেবেছিলাম সারাদিন ঘুমিয়েই কাটাবো। তা আর হলোনা, এমন জ্বর আসলো যে চোখের পাতা মেলার পর আমি যে কোথায় আছি সেটা বুঝতেই আমর দুই-চার মিনিট সময় লাগলো। রাইসা মাথায় পানি ঢালছে আর বলছে, গতকালই বৃষ্টিতে ভীজতে না করেছিলাম। এখন দেখছোতো কি অবস্থা, এতক্ষণ একভাবে আবোল-তাবোল বকেছ! এখন কেমন লাগছে?


আমি জানি বৃষ্টিতে ভীজে জ্বর আসার মতো দেহ আমার না। যদিও চাকরী ছেড়ে দিযেছি কিন্তু আমি একজন এক্স আর্মি অফিসার ও প্যারা কমান্ডো। তাছাড়া আমার প্রায়ই মারাত্মক লেভেলের ওভারডোজ অ্যান্টিটাসিভ গেলার একটা বদ অভ্যাস তৈরী হয়েছে (রাইসা এই ব্যাপারটা একেবারেই জানেনা) আর মাইগ্রেনের প্রবলেমের কারণে আমি মুড়ির মতো প্যারাসিটামল খাই। সামান্য বৃষ্টিতে এই মিলিটারি ক্লাস বডিতে আর যাই হোক জ্বর আসবেনা।


আমি রাইসাকে বললাম এখন বেশটা ভালো লাগছে (যদিও কখাটা মিথ্যা, আমি সাধারণত ওকে মিথ্যা কথা বলিনা কিন্তু আমাকে ওয়াশিং মেশিন টা এখনি সরাতে হবে সে যেভাবেই হোক) 

আমি কোন রকমে শার্টটা গায়ে দিতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়েই যাচ্ছিলাম, রাইসা না ধরলে হয়তো পড়েই যেতাম। 

রাইসা বললো এই শরীর নিয়ে কোথাও যেতে হবেনা।

আমি- তুমি বুঝতে পারছোনা, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে। নাহলে আমি নিজেই বের হতাম না। তুমি দুঃশ্চিন্তা কোর না্, আমি খুব তাড়া তাড়াতাড়িই চলে আসবো।


তা অনেক বলে কয়ে ওকে রাজি করালাম। আমি গাড়ির চাবিটা নিয়ে নিচে গিয়ে দারোয়ান কে বললাম আমার বাসায় গিয়ে ওয়াশিং মেশিনটা নিয়ে আসতে, কারণ রাইসা ওটা সহ আমাকে কখনোই বের হতে দিতোনা। আর বলে উনাকে বলে দিলাম আপনার ভাবি জিজ্ঞেস করলে যেন বলে যে আমি যে রাস্তা দিয়ে যাবো সার্ভিসিং সেন্টার ওই রাস্তায় পড়ে তাই নিয়ে যাচ্ছি।

পাঁচ-সাত মিনিট পর দারোয়ান ওয়াশিং মেশিনটা নিয়ে আসলো। আমি উনাকে বললাম ওটাকে গাড়ির বুটে তুলে দিতে।

সে বললো এটাতো বুটে ফিট হবে না।

আমি উনাকে বললাম আপনি বুটে তুলে ওটা শক্ত করে বেধে দিতে, বুটে স্ট্র‌্যাপ আছে। বুট বন্ধ করতে হবেনা।


যখন বের হলাম তখন শেষ বিকেল। আমার প্লান হলো ওযাশিং মেশিনটা পোড়ানো, দিনের আলোতে ঢাকা শহরে সেটা সম্ভব না। জায়গা ঠিক করাই আছে, মিরপুর ডি.ও.এইচ. এস এর পেছনের বৃন্দাবন নামক স্থানে। কিন্তু একটু অপেক্ষা করতে হবে।

তো চলে গেলাম ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে। গাড়িটা পার্ক করে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে প্লাটফর্মে উঠতেই দেখলাম সেই আতরওয়ালা চাচা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।

আমি কিন্তু এবার অবাক হইনি। আমি অনুমান করেছিলাম যে এরকমটাই হবে শুধু জ্বরের প্রভাবে মাথাটা ঘুরছিলো। 

চাচা কপালে হাত দিয়ে বললেন,

  • ইস্ জ্বরে তো গা টা পুইড়া যাইতাছে। আম্মাজানরে খুব ভালোবাসেন তাইনা? আমিও এমনই ভালোবাসতাম তোমার চাচীরে! ১১ বছর বয়সে তারে বিয়া কইরা ঘরে আনছিলাম, তিনি ইন্তেকাল করছেন চাইর বছর আগে তার পর থাইকাই আমার আর কোন ঠিকানা নাই। তারে দাফন কইরা সেই যে আইছি আর ওই ঘরে ফিরিনাই…

আইচ্ছা তুমি একটু বও আমি আইতাছি।

আমি স্টেশনের একটা পিলারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকলাম।

চাচা মিনিট দশেক পরে এসে আমাকে ডাকলেন। হাতে দুটো নাপা ট্যাবলেট। আর পানির বোতল আমার হাতে একটা ছিলোই।

আমি কোন কথা না বলে ঔষধটা খেয়ে নিলাম। চাচা আমার কপালে আর পাজরে শার্টের ওপর দিয়ে একটু ওই অপার্থীব আতর মেখে দিলেন আর জিজ্ঞেস করলেন তোমার গাড়িতে ওই ঠান্ডা করা যন্ত্র আছেনা?

আমি- এসির কথা বলছেন ?

  • হ্যা।

আমি- হ্যা আছে তো।

  • তাহলে গাড়ির ভিতরে গিয়া বসি চলো, ঠান্ডা চালু কইরা বইলে জ্বরডা নাইমা যাইবো। নাইলে জ্বরের ঘোরে ওরা অনেক ভুল-ভাল দৃশ্য দেখাইবো তাছাড়া জ্বরডা নামাডাও তো জরুরী।

আমি- আচ্ছা চাচা, রাইসার কোন ক্ষতি হবেনাতো ?

চাচা আকাশের দিকে ইশারা করে বললেন, তিনি সাথে থাকলে কার সাধ্য আছে আরো ক্ষতি করার?


তিনি আরো বললেন ওই আন্ধারের উদ্দেশ্য আম্মাজান না, খালি ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাহার কারনে জিনিসটা নিজের কাম পুরা করার জন্য আম্মাজানরে ব্যাবহার করতে চাইছে। কিন্তু আম্মাজানের লগে সম্পর্কের যে মাধ্যম তার একটা গতকাল রাইতে পুড়াইছি, আর শেষটা আজকে পুড়বো। আর তুমি ভুল করছো ওই আগুনে হাত দিয়া, তয় সমস্যা নাই। সব ঠিক হইয়া যাইবোগা।


গাড়িতে বসার পর চাচা একটা আতরের শিশি হাতে দিয়ে বললেন-

তোমার গাড়ির যেইহান দিয়া ঠান্ডা বাতাস বাইর হয় ওইহানে এইডা দিয়া দাও। গাড়ির ভিতরে এহনো ওই লাশের দূর্গন্ধ আছে!

যদিও আমি কোন দূর্গন্ধ পাচ্ছিনা তাও আতরের শিশিটা নিয়ে এসির ভেন্ট গুলোতে দিয়ে দিলাম, তবে একটা কথা। এতো সুন্দর নকশা করা শিশি আমি কখনো দেখিনি! শিশিটা থেকে যেন আলো ছড়াচ্ছে। আমি যখন শিশিটা উনাকে ফেরত দিতে গেলাম, উনি নিলেন না। বললেন,

  • ওইটা আম্মাজানরে দিয়েন, খুশি হইবো।

আমি ওটা নিয়ে আর কোন কথা বললাম না আতরের শিশিটা আমার কাছে রেখে দিলাম, আসলেই রাইসা এটা পেলে খুশি হবে। তখন চাচা বললেন,

  • বাজান, তোমার এক বইন যে খুব বিপদে আছে। তার তোমারে খুব দরকার। ওই অন্ধকারের আসল উদ্দেশ্য সে। শয়তানের পুজারী তো শয়তানের হাতে মইরা মর্গে পচতেছে, ভালো কইরা দেখছো লাশটা একবার, জীবন্ত চামড়া ছিলা হাড্ডিগুলা টুকরা টুকরা কইরা ভাইঙ্গা মারছে কিন্তু তার করা কুফরী কালাম নষ্ট হয়নাই ওই পচা গলা লাশের কাছে ভুল অবস্থায় ভুল সময়ে যে যাইবো তারই বিপদ। আর তোমার ওই অসহায় বইনরে সাহাইয্য করবানা? 

আমি সিটটা এলিয়ে দিতে দিতে বললাম, এই কাজটাতো মনে হয় আমারচেয়ে ভালো আপনিই করতে পারবেন। আর ওই লাশের কাছেতো রাইসা একা যায়নি আরো অনেকেই গিয়েছে, তাদের সাথেও তো ঝামেলা হওয়ার কথা। তাহলে তাদের কি হবে ? 


চাচা- সব কাজ তো সবাইরে দিয়া অয়না বাজান! আমিতো তোমার মতো আন্ধারের ভিতরে ডুকতে পারিনা! 


চাচা- আইচ্ছা একটা কথা ওই আন্ধার আন্ধারে অনুসরণ করে, তোমার ওই চট্টগ্রাম থেকে নোংরা কইরা আনা জামা কাপড়ের নোংরা; নোংরা তো না আগুনে গইলা যাওয়া মানুষের হাড়-মাংস আম্মাজানের ওই পুড়াইয়া ফেলা সাদা জামায় লাইগা গেছিলো কোন ভাবে।


আমি বললাম- কাপড় ধেয়ার সময়। ওই কারনেই তো গাড়ির পিছনে ওই কাপড় ধোয়ার মেশিনটা পোড়াতে এনেছি।

চাচা- হইতে পারে ওইখান থেকেই লাগছে আর ওইটার গন্ধেই তো জিনিস টা আম্মাজানেরে খুইজা নিছে আর তার চেয়েও বড় সুযোগটা কথন পাইছে হেইডা তুমার জানার কথা।

আমি- যখন ওই অন্ধকার মর্গে ওই শালা ডোম রাইসকে ওখানে একলা তালা দিয়ে বিড়ি কিনতে যাচ্ছিলো, মুখ খারপ করে ফেললাম চাচা। বেয়াদবী ক্ষমা করবেন।


চাচা- না বাজান, আমি কিচ্ছু মনে করি নাই। বদমাইশটারে তো আইচ্চা মতো মাইর দেওয়া উচিত!

আমার চোখ ভেঙে ঘুম আসছে, আমি ঘুম জড়ানো কন্ঠে ওই চাচাকে বললাম, হুমম। সাহায্য করার চেষ্টা করবো তবে আমাকেতো পুরো ব্যাপারটা জানতে হবে, তোমারে একটা জায়গায় যাইতে হইবো। আর পথই তোমারে ঠিকানা পথ দেহাইবো।

আর এই পুরা সময়ডা পারলে আম্মাজানরে চোখের আড়াল কইরো না। ওই আন্ধার খুব খারাপ আর আম্মাজানেরে ওই আন্ধার গ্রাস করতে পারেনাই কিন্ত আম্মাজান ওই আন্ধারের খুব কাছাকাছি চইলা গেছিলো, গতকাইল সময় মতো না পৌছাইলে যে কি হইতো আল্লাহ্ মালুম!

আমি- তার মানে, বিপদ এখনো কাটেনি?

চাচা- বিপদের আর নাই, তয় একটু সাবধাণ থাকা ভালো।


আমি- তার মানে রাইসাকে সাথে নিয়েই ওখানে যেতে হবে?

চাচা- হ বাজান, আম্মাজানরে এইখানে একলা রাইখা যাইও না। তাছাড়া সম্ভবত আম্মাজানরে তোমার ওইহানে দরকার হইবো। এহন একটু জিরাও, একটু ঘোর লাগবো। কিন্তু ঘোর কাইট্টা যাওয়ার পর তোমার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকবো না।

আমি জ্বরে দূর্বল থাকায় সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করার প্রায় সাথে সাথেই গভীর ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে তার আগে বুকের পাজরে আর কাধে সেই পবিত্র প্রশান্তিদায়ক শীতল অনুভুতিটা ঠিকই অনুভব করতে পারছিলাম আর শুভ্র আলোক? না, ওটা দিনের বেলায় দেখা যায়না।


তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম, মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি আবার মনে হচ্ছে না, যা ঘটছে তা বাস্তব। বাস্তব হলে এই বাস্তবতার মাত্রা আমার মস্তিষ্কের প্রসেস করার ক্ষমতার সামান্য উপরে। অবশ্য আমার অধিকাংশ স্বপ্নই একটু এরকমই lucid dream, মানে আমি যখন স্বপ্ন দেখি আমি বুঝতে পারি আমি স্বপ্ন দেখছি এবং স্বপ্নের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রন করতে পারি। ঘটনা প্রবাহটা বা স্বপ্নটা অনেকটা এরকম (এভাবে বললাম কারণ আমি এখনো নিশ্চিত না এট স্বপ্ন না বাস্তব),


আমি একটা ঘন জঙ্গলে রাইসাকে খুজছি একটা জিনিস মনে আছে যে আমার সাথে আমাদের গাড়িটা ছিলো কিন্তু সেটা কোথায় রেখে এসেছি সেটা মনে পড়ছেনা, আর জায়গাটা মোটেই নিরাপদ না। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা বাঁধলো, জিনিসটা হাতে তুলতেই বুঝতে পারলাম এটা একটা কোষ বধ্য তলোয়ার। কোষ মুক্ত করতেই বুঝতে পারলাম তলোয়ারটা অত্যন্ত ধারালো আর গায়ে আরবীতে খচিত ”লা–ইলা-হা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ   ‘  لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْ لُ الله  ‘   ”। তলোয়ারটার ধারালো দিকটায় চাঁদের আলো পড়ে চিক চিক করছে! হঠাৎ রাইসা পেছন থেকে আমাকে ডাকলো, এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একটা ভয়ানক কাঁটা যুক্ত গাছে ওর জামা আর ওরনা আটকে গিয়েছে। আমি একবার হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম, হলো না! তারপর বের করলাম তরবারিটা, ভাবলাম রাইসার জামা আর ওরনায় আটকে যাওয়া গাছের অংশ গুলো আগে কেটে নি, তারপর ওটা সহজে ছাড়ানো যাবে কিন্তু তরবারিটা যেহেতু বেশ বড় তাই ওটা কায়দা করে ধরে ওই কাঁটাওয়ালা গাছের কাপড়ের সাথে লেগে থাকা অংশটা কাটতে গিয়ে ওই গাছেরই একটা অংশ ছিটকে এসে আমার হতে লাগলো, কাঁটা গুলো এতোই তীক্ষ্ণ ছিলো যে তার আচড়ে আমার হাত কেটে গেলো। আর সেখান থেকে কয়েক ফোটা রক্ত ওই গাছে পড়তেই গাছটাতে আগুন ধরে গেল, নীলাভ সাদা তাপহীন আগুন ওই আগুনে ঠিক ওই অ্যাপ্রোনের মতো কাঁটাওয়ালা গাছটা ছাই হয়ে গেলেও রাইসার কাপড়ের কোন কিছুই হলো না, একটা ফুলকি কাপড়ে পড়লে যতটুকু ক্ষতি হতে পারে ততটুকুও না। তখন মাথায় আসলো আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে, lucid dream এ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা আমার খুব সহজেই খুজে পাওয়ার কথা, মানে আমার ইচ্ছা মতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টা আমার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গিয়েছে। ওই আগুনের কিছুটা আলো তখনো অবশিষ্ট আছে, ওই হালকা নীলাভ শুভ্র আলোয় রাইসাকে বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 

  • রাইসা, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো ?

ও মুখে কোন উত্তর দিলো না, হুট করে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর হৃদস্পন্দন উত্তরটা দিয়ে দিলো। আমার ওর কাছে আর কিছু জানার নেই।

আমি ওর পেছনদিকে হাত দশেক দুরে আমি একটা কালো জমাটবাঁধা অন্ধকার কিছুটা মানুষের মতো আকৃতিকে রাইসার দিকে এগুতে দেখেতে পেলাম, যদিও জঙ্গলটা অন্ধকার তবে ওই আকৃতিটা জমাটবাধা আরো ঘন অন্ধকার। আমি রাইসাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলাম আর আরেক হাতে তরবারিটা শক্ত করে ধরলাম। 

তরবারিটা দেখে সেটা থমকে দাড়ালো, তারপর আবার ধীরে ধীরে সেই অন্ধকারেই হারিয়ে গেলো।


আমার মাথায় খালি এটুকু আসলো রাইসাকে নিয়ে যেভাবেই হোক এই অভিশপ্ত জঙ্গল থেকে এখনি বের হতে হবে, কিন্তু রাস্তা চিনবো কিভাবে, রাতে এই ঘন জঙ্গলে দিক নির্ণয় কঠিন হলেও অসম্ভব না। আমি তারা দেখে দিক নির্ণয় করতে পারি, কিন্তু এই ঘন গাছপালার তলা থেকে তারা দেখা যাবেনা। একটু খোলা জায়গা, সবচেয়ে ভালো হয় একটা উচু জায়গায় উঠতে পারলে। এক হাত দিয়ে তরবারিটা দিয়ে ঝোপ-ঝাড় কিছুটা পরিষ্কার করে যখন একটা রাইসার হাতটা শক্ত করে ধরে নিদৃষ্ট দিকে এগুচ্ছি তখন আরেকটা মেয়ের সাহায্যের আকুতি শুনতে পেলাম, কিন্তু তার কন্ঠটা ঠিক কোন দিক থেকে আসলো তা বোঝা গেলো না কারণ কন্ঠটা খুবই ক্ষীন ছিলো আর কন্ঠটা একবারই শুনতে পেয়েছিলাম আর ঘন জঙ্গলে যখন নিজেই দিকভ্রান্ত তখন অমন ক্ষীন বিভ্রান্তিকর শব্দকে অনুসরণ করার চেষ্টা করা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা, কিন্তু আমি একজন এক্স আর্মি অফিসার (Ex Captain), আমি শিখেছি Never leave a man behind” চাকরী ছেড়ে দিয়েছি ডিসিপ্লিন সহ্য হয়নি তাই কিন্তু কর্তব্যবোধ রক্ত থেকে যায়নি, আমি অবশ্যই ফিরে আসবো। তবে আগে নিশ্চত হতে হবে ওটা কোন মানুষেরই কন্ঠস্বর ছিলো, ওই অভিশপ্ত অন্ধকারের দিক ভ্রান্ত করার কোন কৌশল না, আর এখন আমার প্রথম প্রায়োরিটি আমার স্ত্রী রাইসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমি একবার রাইসাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কারো কন্ঠ শুনতে পাচ্ছো ?

রাইসা- কই নাতো, কেন?

আমি বললাম এমনিতেই, আমার একবার মনে হলো কারো কন্ঠস্বর শুনলাম। ভুল শুনেছি হয়তো।


রাইসা- এখানে এমন অনেক কিছুই হতে পারে। সাবধাণে সামনে পা ফেলো, সাপখোপ থাকতে পারে। আমরা এখানে কেন আসলাম বলতে পারো আর তোমার শরীরের এখন কি অবস্থা? আমার সেই ঢাকা থেকেই মনে হচ্ছে তুমি তোমার মধ্যে নেই।

আমি- ঢাকা থেকে মানে, তুমি ঢাকা থেকে আমার সাথে এসেছো ? আমরা এখন কোথায় তুমি জানো ?


রাইসা অত্যন্ত অবাক হয়ে বললো, তুমি প্রায় ৪০০ কিলো রাস্তা ড্রাইভ করে এখানে এসেছো ! আমি এতোটুকু জানি এটা বান্দরবন-রোয়াংছড়ি সড়কের কোন একটা অংশ। তবে তারপর গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলের ভেতর কতদুর এসেছি আর কোথায় এসেছি জানিনা আর এসব কি হচ্ছে তাও বুঝতে পারছিনা। যতবার জিজ্ঞেস করেছি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি? কোন উত্তর দাওনি, অগত্যা চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলোনা! আর এখন ওরকম শক্তিশালী স্যাটেলাইট ওয়াকিটকি মাজায় গুজে আমাকে জিজ্ঞেস করছো আমরা কোথায়। ও হ্যা, তুমি তরবারিটা পেলে কোথায়, গাড়ি থেকে তো আনতে দেখিনি?



আমি- আর তুমি...


পরবর্তী পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ