অনুভূতি - ২ (পর্ব-৯)


 





ওই গাড়ি ভাঙা থেকে আটকানো পর্যন্ত ও সম্পূর্ণ ঠিক করেছে। এটা ওর ডিউটি। কিন্তু ও আপনাকে পুরোটা বলেনি, আর যে কথাটা বলেনি আমি চাইনা কথাটা আমার স্ত্রী আর তার বাবার সামনে উচ্চারণ করুক, না আর দ্বিতীয়বার কখনোই উচ্চারণ করুক সেটাও আমি চাইনা। তাই আশা করবো, আপনিও ওকে জিজ্ঞেস করবেন না। মাইরটা মাদা৥**দ  ওই জন্যেই খাইছে।


সাব-ইন্সপেক্টর সাহেব একটু কেশে আমার গালি দেওয়ার ব্যাপার টা খেয়াল করিয়ে দিলেন।


আমি- সরি, সাহেদ সাহেব। (সাব-ইন্সপেক্টর সাহেবের নাম সাহেদ, উনি আমার একটু বেশিই পরিচিত)

আর ওই ছেলেটার দিকে উদ্দেশ্য করে বললাম। আচ্ছা তুমি যা বলেছিলে তার জন্য মার খাওয়া উচিত ছিলো কিনা তুমিই তোমার স্যারকে বলো।


সে শুধু বললো সরি স্যার।


আমি সাহেদ সাহেবের সাথে পরিচয় রাইসা আর ওর বাবাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর বললাম তো থানায় যেতে হবে?


সাহেদ সাহেব- আরেহ্ না স্যার।

আমি- তাহলে গেলাম, পরে দেখা হবে।


রাইসার বাবা- আচ্ছা ওই এস.আই তোমাকে স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন কেন?

আমি শুধু বললাম পূর্ব পরিচিত।


রেস্তোরাঁতে গিয়ে দেখলাম দিয়াও এসেছে। দিয়াদের বাসার ওই সমস্যাটা সমাধান করার পর দিয়া প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো, রাইসার কাছে।



আমি কারোর সাথেই কোন কথা বললাম না, শুধু দিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম- কেমন আছো?


দিয়া- ভালো, আচ্ছা ভাইয়া আপনি এমন কেন?

আমি- কিরকম?


দিয়া- এইযে, পরিবারের কারোর সাথেই কোন যোগাযোগ করেন না বললেই চলে। কেন?


আমার চোখের সামনে আমার দুঃসময়ে আমার পরিবারের আচরণের চিত্র গুলো ভেসে উঠলো, প্রতেকটা কথা প্রত্যেকটা অপমান। আমার আবেগ-অনুভূতির প্রতি তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যতা। কিন্তু তখন আমার কিছু করার ছিলোনা কারণ আমার টাকা ছিলোনা। এর মধ্যে আমার জীবনে আসে রাইসা। রাইসার কথা মনে হতেই আরেকটা কথা আমার খেয়াল হলো,

 “ এখানে আসার পর থেকেই ওকে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগছে।” আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাইসা বলেছিলো ” একটু অসুস্থ লাগছে তাছাড়া তেমন কিছু না”


আমি দিয়াকে বললাম- তুমি বুঝবেনা। আমি একটু এরকমই। তাছাড়া ফোনেতো কথা হয়ই।


খাবার চলে এসেছে সবাই খাচ্ছি, রাইসার বাবা প্রশ্ন করলেন,


-তুমি কি করো এখন?


আমি- উবার চালাই।


রাইসার বাবা- আর তোমার আইটি ফার্মটা?

আমি- ওটা চলে। চালাতে হয়না।


আজ রাইসার মাকে একটু চুপচাপ মনে হচ্ছে, কেন বুঝতে পারছিনা। উনার আমাকে অপমান করতেই ব্যাস্ত থাকার কথা। আজ এতোদিন পর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো করতে পারছেন না। আবার এটাও মনে হচ্ছে যে কারণ সেটা না।


এরই মধ্যে রাইসা মাথার ডান পাশে হাত দিলো আমি ভাবলাম হয়তো চুল ঠিক করার কিন্তু ঘটনা সেটা ছিলোনা, পরেক্ষনেই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো, নেহাৎ আমার রিফ্লেক্স ভালো বলে আমি ওর মাথাটা ধরে ফেললাম নাহলে নিশ্চিত টেবিলের কর্ণারে মাথায় লেগে কেটে যেত।


ওকে কোলে নিয়ে ছুটলাম গাড়ির দিকে। ওর বাবা মা আর দিয়াও আসলো পিছন পিছন। আমি রাইসাকে যখন গাড়ির সামেনের সিটে বসাতে যাচ্ছি ওর মা বললেন বাবা আমি আর দিয়া রাইসাকে নিয়ে পিছনে বসি তুমি আর ওর বাবা সামনে বসো আর কাছের কোন হাসপাতালে নিয়ে চলো।


আমি- না আন্টি (এখনো জড়তা রয়ে গিয়েছে, তাই মা বলতে পরিনি) এতোদিন আমি সামলেছি আজও পারবো।


ততক্ষনে রাইসার বাবাও চলে এসেছে, সম্ভবত বিল দিতে গিয়ে উনার আসতে দেরী হয়ে গিয়েছে। সবাই গাড়িতে ওঠার পর আমি যেভাবে গাড়ি টান দিয়েছি তাতে সবািই একটু ভয়ই পেল। আমি ওয়াকিটকিটা হাতে নিয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের চ্যানেলে টিউন করে বললাম ধানমন্ডি - ১ থেকে সংসদ ভবনের পেছন হয়ে জাহাঙ্গির গেইট পরর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ১০ মিনিটের জন্য যেন সকল ঠারাফিক সিগন্যাল গ্রীন আর রাস্তা ফাঁকা থাকে It’s an emergengy. একটা কালো অডি নম্বর ( ঢাকা মেট্রো গ- ** ** ** ) Over the speed limit যাবে গাড়িটা যেন কেউ না থামায় আমি জানি পরিচয় নিশ্চিত না করে ওয়াকিটকিতে শুধুমাত্র এইটুকু বললে পুলিশ ডেফিনিটলি এই গাড়িটা থামাবে তাই বাধ্য হয়ে আমাকে সবার সামনেই আমার রেডিও কোডটা বলতেই হলো। আর কেউ বুঝতে না পারলেও কোডটা রাইসার বাবা ঠিকই বুঝতে পারার কথা, উনি একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তার বুঝতে পারাটা অস্বাভাবিক না। কিন্তু উনি বললেন,

-তুমি যাচ্ছো কোথায় যাচ্ছো বলোতো?


আমি- সি.এম.এইচ এ (Combined Military Hospital (CMH))

রাইসার বাবা- কিন্তু রাইসার তো আমার মেয়ে সি.এম.এই ‘এ চিকিৎসা পওয়ার বয়স নেই। আর তুমি ওয়াকিটকি কোথায় পেলে।


আমি এটুকু বুঝতে পারলাম যে উনি হয়তো টেনশনে আমার রেডিও কোডটা খেয়াল করেননি।


আমি বললাম- সেসব কথা পরে হবে। 


আমার এক ডাক্তার ব্যাচমেট, ব্যাচমেট বটে কিন্তু ওর ক্ষেত্রে বান্ধবী বললেই কথাটা বেশী মানানসই হবে, মেজর ইফফাত ফারজানাকে ফোন করে ইমিডিয়েট সি.এম.এইচ এ আসতে বললাম আর সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখতে বললাম। ও বললো ও সি.এম.এসেই আছে আর দুঃশ্চিন্তা না করতে।


আমি জানি প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সামনে এই লেভেলের ওভার স্পিডিং করা যাবেনা তাই আপনারা ভাবছেন ওভার স্পিডিং মানে ১২০-২৩০। না ওটা আমার কাছে কিছুটা নরমাল বলতে পারেন আমার বর্তমান স্পিড খালি টার্ণ নেওয়ার সময় ছাড়া ২২০-২২২ এর নিচে নামেনি , পুরাতন বিমানবন্দরের পাশ ঘেষে চলে যাওয়া রাস্তাটা ধরলাম।


সি.এম.এইচ এ পৌছাতে ৭-৮ মিনিট সময় লাগলো। এখানে ফারজানা সব রেডি করেই রেখেছিলো ওরা ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল, আমরাও পিছন পিছন গেলাম। বেশ কয়েকটা পরীক্ষা করা হলো।


এরই মধ্যে এম.পি ইউনিটের দুজন সার্জেন্ট এসেছেন, ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এই লেভেলের ওভার স্পিডিং এর আগে কেউ করেছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। তো উনাদের সাথে দেখা করতে বাইরে যাওয়ার সময় রাইসার বাবাও পিছন পিছন আসলেন আর এরই মধ্যে আমার বাবা-মাও এসে হাজির। আমি জানতামনা উনারা ঢাকায় আছেন তবে শুনেছিলাম বাবার পোস্টিং ঢাকায় হতে পারে উনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন!


আমি সার্জেন্ট সাহেব দের উদেশ্য করে বললাম,


-মামলা দিবেন? আচ্ছা ২২০ মানে স্পিড লিমিটের ওপর ১৭০ বেশি তো আর ২টা ট্রাফিক সিগন্যাল ব্রেক তো কি মামালা 

হবে? 

যাই হোক তাড়াতাড়ি দিন, আমার স্ত্রী অসুস্থ।


তখন তাদের মধ্যে একজন বললো- স্যার আমরা আপনার ওভার স্পিড রেকর্ড করিনি, আর এটা মেডিক্যাল ইমারজেন্সি সেটা ম্যাডাম লিখিত দিয়েছেন। আমরা মামলা দিতে আসিনি এসেছি কারণ আপনার গাড়িটা ইমারজেন্সি ইনট্রেন্স এর একদম সামনে রাখা, গাড়িটা সরিয়ে দিলে ভালো হয়।


আমি গাড়ির চাবি দিয়ে বললাম আমি এখন যেতে পারবোনা, আপনারা একটু কষ্ট করে পার্ক করে কাউকে দিয়ে চাবিটা এখানে পঠিয়ে দিয়েন।


ওরা আমার স্পিড লিমিটের ওপর ১৭০ বেশি তো আর ২টা ট্রাফিক সিগন্যাল ব্রেক কিছুই রেকর্ড বা রিপোর্ট করেনি এটা শুনে রাইসার বাবা আর আমার বাবা দুজনেই যথেষ্ট অবাক হয়েছেন, উনারা দুজনই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। কিছুটা অবাক আমি নিজেও হয়েছি, অন্য সরকারি ডিপার্টমেট হলে অবাক হতাম না। কিন্তু আর্মির মধ্যে এটা ইম্পসিবল তাছাড়া তখন এটাযে মেডিক্যাল ইমারজেন্সি, ইভেন এটা যে কোন প্রকার ইমারজেন্সি সেটাই এম.পি ইউনিটের কারো জানার কথা না কারণ ফারজানা লিখিত দিয়েছে সার্জেন্ট দুজনের সি.এম.এইচ এ আসার পর। হিসাব টা মেলানোর চেষ্টা করছি তখন ফারজানা ওর চেম্বারে ডাকলো।


আমি- লিখিত দিয়ে দিয়েছিস ভালো কথা, কিন্তু রাইসার কি হয়েছে বল। সিরিয়াস কিছু?

ফারজানা- তুই ঘামছিস কেন, এ.সি বাড়িয়ে দিবো?


আমি- আরে যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলনা।

ফারজানা- আচ্ছা তুই কি বলতো? এতো ভালোবাসিস ভাবিকে কিন্তু কোন খোজ খবর রাখিস না। তেমন কিচ্ছু হয়নি ভাবির। সম্ভাবত ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না। আর হঠাৎ মানসিক চাপের কারণে এমনটা হয়েছে। আমি মেডিসিন লিখে দিয়েছি। আর অ্যাডমিট করে দিয়েছি। থাক কয়দিন তোর কাছথেকে দূরে, তুইও বোঝ।


এরই মধ্যে একজন নার্স এসে বললেন ম্যাডাম উনার জ্ঞান ফিরেছে। আমরা উনাকে কেবিনে শিফট করে দিয়েছি, স্যলাইন চলছে আর ফাইল রেডি করে উনার কেবিনে দিয়ে এসেছি।


আমি- সর্বনাশ করেছেন। ফাইল কোথায় রেখেছেন?

নার্স- উনার বেডের পাশে। কোন সমস্যা স্যার?

আমি- না। ধন্যবাদ।


ফারজানা- কি ঘটনা বলতো? ফাইল নিয়ে কি সমস্যা ?

আমি- তুই আয় আমার সাথে, নিজেই দেখতে পাবি। তুই আর ও একই জাতের?


ফারজানা- মানে?

আমি- রাইসাও ডাক্তার। যদি তোর এমন হতো আর তোর পাশে ওই ফাইল পড়ে থাকতো তুই কি করতি?


ফারজানা- পড়ে দেখতাম তাতে কি হয়েছে। তাতে সমস্যা কি?

আমি- আয় গেলেই দেখতে পাবি।


তো যেতে যেতে একটা ফোন আসলো (কার ফোন সেটা কফিডেনসিয়াল)


-ইমারজেন্সি সলভ হয়েছে।

আমি- জ্বী স্যার। আপনি কি করে জানলেন?

-তোমার রেডিও কোড, সৌভাগ্য বসত সে সময় আমি তোমার ইমারজেন্সি ম্যাসেজটা আমিও পিক করেছি। আর এম.পি ইউনিট থেকে কোন ঝামেলা করেনিতো?

আমি- না স্যার। ধন্যবাদ।

-আচ্ছা তোমার ইমারজেন্সিটা কি ছিলো?

আমি- স্যার, আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।

-কি বলো !? রাইসা মা এখন কেন আছে?

আমি- এখন কিছুটা ভালো স্যার। স্যার যদি কিছু মনে না করেন একটা প্রশ্ন করতে পারি?

-করো। তোমার কথায় কিছু মনে করে লাভ আছে?


আমি- আপনি রাইসাকে চিনেন?

-হুমম, আমার মেয়ের বান্ধবী। তুমি এখন কোথায়?



পরবর্তী পর্ব


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ