অনুপ্রাণনা




 আমি, আমি একটা মানুষ । কোন সফল মানুষ না। বিভিন্ন ঝামেলায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা একজন সাধারণ মানুষ । তবে একটা দিক থেকে আমি অন্য সকল সাধারন মানুষের থেকে আলাদা, আমি কল্পনা করতে পারি। আমার টাইপের মানুষের সংখ্যা খুব কম, নাই বললেই চলে । এবং প্রতিটা কল্পনা আলাদা আলাদা ডাইমেনসনে এক একটা ইউনিভার্স ( মাল্টিভার্সের মতো ) তৈরী করে সেখানকার চরিত্র গুলো সেই ডাইমেনসনে জীবিত, ঠিক আমাদেরই মতো । তা আমার কা|ছে বাস্তবের মতোই বাস্তব, প্রত্যেকটা ইউনিভার্সেই আমি জীবিত। সেখানে আমার বসবাস আমার স্বপ্নের মধ্যে, সেখানকার চরিত্র গুলো, সেখানকার স্পেস, সময় ও ঘটনা প্রবাহকে আমার ইচ্ছা মতো ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নে প্রায় ৮৭% পর্যন্ত ম্যানুপুলেট করতে পারি আর বাকি ১৩% এর ওপর আমার নিয়ন্ত্রন নেই, কারণ আমি স্রষ্টা নই। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন আল্লাহ্ আমাকে দেন নি। তো আমার মস্তিষ্কের সৃষ্ট কয়েকটা অ্যাকটিভ ডাইমেনশন আছে। আমার এই পাগলের প্রলাপ সাধারণত কেউ শোনেনা, শুধুমাত্র একজন ছাড়া।

রিদা, একটা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকৎসক। বলতে গেলে আমার এক মাত্র শ্রোতা। তার সাথে আমার পরিচয়ের ঘটনাটাও বেশ অন্যরকম। সে কথা পরে হবে। আজ সব বলবো, আমার কথা গুলো আপনাদের কাছে হয়তো খুবই এলোমেলো মনে হচ্ছে অনেকে হয়তো এই লাইন পর্যন্ত আশার আগেই বিরক্তিতে লেখাটাকে ওভারলুক করে চলে গিয়েছেন, যাই হোক শুরু করি, একটা মেয়েকে ভালোবাসতাম,

আমার কাজিন । নাম, অরিন। বয়সে আমার চেয়ে দেড় বছরের বড়ো ছিলো। জানেন ওর প্রতি আমার একটা বিশ্বাস ছিলো যে ও কখনো অন্যকারো হতে পারেনা, ও কখনোই কোন পরিস্থিতিতেই এমনটা করতে পারেনা ( এমনটা বলতে আমি, কোন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারেই না ) আমি ওকে জান্নাতের পবিত্র একটা ফুল মনে করতাম । আমার ধ্যান জ্ঞানে কেবল ওই ছিলো, কখনো অন্য কোন মেয়েদের দিকে তাকাইওনি ১১ টা বছর। কারন আমার জন্য ওতো আছেই। তবে ওকে নিয়ে ওভার থিংঙ্কিং করতাম । ওর একটা বান্ধবী ছিলো, মীম। প্রথমে জানতাম ওর একটা ভাই আছে । আমার দৃড় ধারনা ছিলো এই মেয়ে একটা ঘাপলা করবে । তারপরেও আল্লাহ্’র ওপর একটা ভরসা ছিলো ওর প্রতিও একটা বিশ্বাস ছিলো, ওকে বলেছিলামও আমার এই বিশ্বাসটা ও যেন কখনো না ভাঙে।

নাহ্, সে কথা রাখেনি অখবা আমিই সম্পর্কটা গড়ে তুলতে পারিনি। যদিও আমাদের মধ্যে কোন কথা বার্তা হতোনো, ভাবতাম আমাদের সম্পর্কটা আলাদা । কিন্তু বুঝতেই পারিনি যে আমাদের রাস্তাাটই আলাদা আর অরিন নর্দামার কীট না হলেও, মোটেই জান্নাতের পবিত্র ফুলতো ছিলোই না আর তার সাথে যুক্তছিল ওই মীম আর আমার ঘরের শত্রু বিভিষন ছিলো অরিনের ভাই ।.... [এই অংশটুকু আমি কিভাবে লিখেছি তা কেবল আমিই জানি, এই অংশের লেখাটা অগোছালো হওয়ার জন্য আমি পাঠক গনের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত]

যাক সেসব ইতিহাস, এখন বর্তমানে আসি, এইতো সন্ধ্যা বোলার আগ পর্যন্ত সব ঠিক ছিলো।

হারুন ভাই মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেন আর আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এরই মধ্যে আমার সমগ্র দুনিয়া ওলট-পালটে হয়ে গেলো, বেহাত হয়ে গেল আমার পুরো দুনিয়াটা। আমি এখন অন্তঃসার শুন্য একটা মানুষের খোলস মাত্র। আমি আর হারুন ভাই ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম । উনি যখন মাগরিবের সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে যান তখনই সামাজিক যোগাযোগের কল্যানে ব্যাপারটা আমার দৃষ্টিগোচর হয় । আমার পরিবার তারই বিবাহের অুনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ব্যাপারটা আমার দৃষ্টিগোচর হয় এক দিন পর। যদিও আগে থেকে জানলেও আমি কিছুই করতাম না। এখন যা ঘটেগিয়েছে তা আর কোন ভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব না, সম্ভব হলে যেকোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা পরিবর্তন করতাম ।

খুব ভালোবাসতাম ওকে। আসলে কিছু কিছু জায়গা থাকে সেখানে কাউকে একবার কাউকে স্থান দেওয়া হলে সে স্থানে অন্য কাউকে স্থান দেওয়া যায়না, অনেকটা নন রিরাইটেবল কম্প্যাক্ট ডিস্কের মতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের জোড়া ছবিদেখে আমি স্তম্ভিত, নির্বাক হয়েগিয়ে ছিলাম। প্রথমে নিজের চোখকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু বাস্তব তো বাস্তব । তার পরেও মনে হচ্ছিলো আমি কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি, একটু পরেই ঘুম ভেঙে দেখবো সব আগের মতোই আছে ! নামাজ শেষে বেরিয়ে আশা হারুন ভাইয়ের ডাকে ধাত্বস্থ হয়ে বুঝলাম না, এটা দুঃস্বপ্ন না। রাত ৮টা /৯টা পর্যন্ত ছিলাম হারুন ভাইয়ের সাথে । তারপর যার যার বাসায় চলে যাই দুজনেই । কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই পুরো বারোটা বছরের ওর প্রতি প্রত্যেকটা অুনুভুতি, ব্যাকুলতা সুচের মতো বিঁধতে লাগলো আমার হৃদপিন্ডে, মস্তিষ্কে।

আমি অস্থির হয়ে উঠলাম তখন রাত ২ টা মতো বাজে আমি জানি আমাকে শান্ত হতে হলে আমার দরকার সিডেটিভের আপনাদের কল্পনাতিত ওভারডোজ আর আধালিটার জঘন্য তেঁত অ্যান্টিটাসিভ । তাই গাড়ি আর ল্যাপটপটা সাথে নিয়ে ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেলাম ফার্মেসীর উদ্দেশ্যে । তো সিডেটিভ আর অ্যান্টিটাসিভ গিলে রামপুরা থেকে রাত ২.৩০ এর সময় ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে হাতিরঝিল হয়ে রাতের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে রীতিমতো অস্বাভাবিক গতিতে এয়ারপোর্ট রোডের দিকে যেতে থাকলাম, যদিও কোন নিদৃষ্ট কোন গন্তব্য ছিলো না। এম.ই.এস মোড়ের একটু সামনে এসে মাথাটা অস্বাভাবিক ভাবে ঘুরে উঠলো, হাত থেকে স্টিয়ারিংটা ফসকে গিয়ে ডান দিকে ঘুরে গেলে গতি বেশি থাকার কারনে গাড়িটা স্কিড করে ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা খেতে গিয়ে পাঁচ ছয় আঙ্গুল গ্যাপ রেখে দাড়িয়ে গেল কারণ সৌভাগ্য ক্রমে আল্লাহ্’র রহমতে ব্রেকটা ধরতে পেরেছিলাম আর অনেক রাত হওয়ায় রাস্তা বেশটা ফাঁকা ছিলো। কোন ভাবে গাড়িটা সোজা করে বাইরে নেমেই বমি করে দিলাম। কিছুটা ধ্বাতস্থ হতে আর দ্বিতীয়বার বমির ধাক্কাটা সামলানোর জন্য চোখ বন্ধ করে জোরে নিস্বাস নিতে নিতে কখন যে চলমান রাস্তার কিছুটা ভিতরে চলে এসেছিলাম তা বুঝতেই পারিনি আর বোঝার মতো পরিস্তিতে ছিলামও না। এরই মধ্যে দ্রুতগামী একটা বাস প্রচন্ড ব্রেক কষে এসে আমাকে ধাক্কা দিলো ( ঠিক ওই জায়গাটায় যেখানে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্ট পাবলিক এর দুজন ছাত্র ছাত্রী দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলো, আমার পরিনতিও তাই হতো যদি বাসের ড্রাইভার সাহেব সেদিন সঠিক সময়ে ব্রেক না ধরতে পারতেন অথবা ধাক্কা দিয়ে আমাকে সাহায্য না করে পালিয়ে যেতেন)

আমি ছিটকে পড়ে রাস্তায় থাকা পিলারের সাথে ধাক্কা খেলাম। আঘাত পেয়েছিলাম মাথায় তবে জ্ঞান হারায়নি, দেখলাম রক্তে সাদা শার্ট ভিজে লাল হয়ে যাচ্ছে । বাসের হেল্পার বা সুপারভাইজার আমাকে ধরলেন ।

আমি শুধু এটুকু বললাম, ভাই আমার গাড়িটাতে চাবি লাগানো আছে আর সামনেই কুর্মিটোলা হাসপাতাল... বাকি কিছু বলার আগেই কেউ একজন বললেন

-ভাই আপনি গড়ি নিয়ে চিন্তা কইরেন না, আগে হাসপাতালে চলেন । তারপর বাসেই আমাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হলো। সেখানে গিয়ে আরেক বিপত্তি, কর্তব্যরত আনসার বললো - অ্যাকসিডেন্টের কেইস, পুলিশ কেইস হবে। আমার জ্ঞান ছিলো কিন্তু সমস্যা ছিলো আমি সব কিছু অত্যন্ত ঝাপসা দেখছিলাম, প্রায় না দেখার বরাবর। আমি আনসার সদস্যকে কাছে ডাকলাম, বললাম “ ভাই আমার বাসের সাথে অ্যাকসিডেন্ট হয়নি, উক্ত স্থানে আমার নিজের গাড়ি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বন্ধ হয়ে যায়। আমি সেটাই চেক করছিলাম তখনই ঝোপের আড়াল থেকে কেউ একজন একটা ইট ছুড়ে মারে যা আমার মাথায় লাগে আর আমি রাস্তায় পড়ে যাই আর তখনই এই বাস সেখান দিয়ে যাচ্ছিলো এবং তারা আমাকে সাহায্য করেন নাহলে আরো খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। না, তাও তিনি মানবেন না । একটা শেরাগােল পড়ে গেলো ।

তখন আমি একজনকে বললাম আমার মোবাইলটা বের করতে । আমার এক বন্ধু, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর রাকিব এর নম্বরটা বের করে তাকে কল দিতে বললাম। তার সাথে কথা বলে সে মানলো। হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো। তখন কোন সিনিয়র ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডাক্তার রিদা ছিলেন, নার্সের সাথে সব কিছু শুনতে শুনতে বললেন,

-তুমি আমাকে আগে ডাকোনি কেন ? অনেকটা ব্লিডিং হয়ে গিয়েছে্। রক্ত লাগবে। আর ওই আনসারকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললো (আমি তা শুনতে পাইনি, কারন আমার দেখা ও শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে ক্ষীন হয়ে আসছিলো)

-আমি শুধু এটুকু বললাম বি+। কারন ব্লাড টেস্ট করতে গিয়ে তাতে সিডেটিভ না খুজে পায়, ভয় তো এটাও ছিলো। এতো কমন ব্লাডগ্রুপ হওয়া স্বত্বেও তা পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তখন ডা: রিদা কাউকে বললেন আমার ব্লাড নেওয়ার ব্যাবস্থা করো আর উনার পরিবারের কাউকে খবর দাও। আমি ক্ষীন স্বরে বললাম ওরা থেকেও নাই। তার পর আমার আর কিছু মনে নাই। জ্ঞান ফেরে তার পরের দিন গভীর রাতে। আমার পরিবারের কাউকে যেহেতু জানানো হয়নি তাই তারা কেউ আশেওনি, জানালে হয়তো দায়ে পড়ে আসতো । আমার বন্ধু এস. আই রাকিবকে জানানো হয়েছিলো কিন্তু সে তখন ডিউটিতে, সাকালের তার পক্ষে আসা সম্ভব না তবে একজন এসেছিলো।

ওই ইন্টার্ন ডাক্তার রিদা। উনি এসে বললেন,

-এখন কেমন আছেন ? আমি বললাম সেটাতো আমার থেকে আপনাদের ভালো জানার কথা তবে এটুকু বলতে পারি এখন আমি মনে হয় সুস্থ । এই স্যালাইন আর ওয়্যারিং খুলে নিলে দিব্বি বাড়ি চলে যেতে পারবো আর রক্তের প্রতিদানে ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না। ও আচ্ছা, আমার গাড়িটা ?

রিদা- এটা বুঝলাম আপনার মাথা এখনো ঠিক আছে। আপনার গাড়ি ও হাসপাতালের পার্কিং এ আছে আর বাকি জিনিস পত্র আমার হোস্টেলে আছে। আপনাকে রিলিজ করে দেওয়ার সময় আমি আপনাকে দিয়ে যাবো। আচ্ছা সেদিন আপনার মাথার স্ট্রিস দেওয়ার সময় আপনি অরিন বলে আমার চেপে ধরছিলেন,যদিও আমি উনাকে চিনি কিন্তু উনার নম্বর আপনার ফোনে পাইনি তবে একটা ছবি পেয়েছি আপনার ফোনে সম্ভবত উনার বিয়ের ছবি। কিছু যদি মনে না করেন আমি ব্যাপার টা জানতে চাই, এখনই না তবে জানতে চাই ।

আমি - আমি বেশটা অবাক হয়ে, আপনি ওকে চিনলেন কি করে ? আর আমার ফোনের লকই খুললেন কি করে ?

রিদা - আমি আপনাকেও চিনি। প্রথমে চিনতে একটু দেরি হয়েছিলো কারন আপনার ব্লগে আপনার চশমা পরা ছবি দেওয়া ছিলো তবে ড্রেসিং এর পর আর কোন ডাউট ছিলোনা। আমি আপনার ব্লগের একজন ফলোয়ার আর সেখানেই অরিন কে নিয়ে একটা লেখা ছিলো আর ইন্সটাগ্রামে তার ছবিও ছিলো। আর ফোনের লক ? উনি আমার ডান হাতের তর্জনি আঙ্গুলটা তুলে ধরে এটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট। যদিও কাজটা বেআইনি, মামালা করবেন ? বলে আবারো হাসলেন !

- না, মামলা করবো কেন ? কি যে বলেন ! আচ্ছা আপনার গায়ে অ্যাপ্রোন নেই, সম্ভবত আপনি এখন অন-ডিউটি নন ?

রিদা - না, আপনার ধারনা ঠিক। তবে এখন আসি, আপনি বিশ্রাম নিন ।

- যদি ব্যাস্ত থাকেন তবে যেতে পারেন ।

রিদা - এতো রাতে কি নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো ? কিছু বলবেন ?

- হুমম, আপনিই তো জানতে চাইলেন ।

রিদা - না, সেটা পরে বললেও চলবে ।

- যেহেতু ব্যাস্ত না, তবে শুনুন । (আমি সমস্ত ঘটনা বললাম, বলতে বলতে ফজরের আজান হয়ে গেলো)

রিদা - পুরোটা শুনে বললো, এখন যাই । তবে আপনার কাছে একটা ট্রিট পাওনা রইলো। পরদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিলো, রিদা আমার জিনিসপত্র গুলো দিয়ে চলেই যাচ্ছিলো, আমিই সমস্ত দ্বিধা ভেঙে ফোন নম্বরটা চেয়ে বসলাম । রিদা একটু হেসে একটা কাগজে নম্বরটা লিখে দিলো । এভাবেই ওর সাথে পরিচয় হয়। তারপর বেশ কিছু দিন ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি। একদিন মোবাইলে কারো একটা নম্বর খুজে বের করতে গিয়ে ওর নম্বরটা সামনে চলে আসে, তখনি বুজতে পারি বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে ।

নম্বর খোজাখুজি বাদ দিয়ে সোজা কুর্মিটোলা হাসপাতালের পথে বেরিয়ে পড়লাম। বিকাল সাড়ে-তিনটার দিকে হাসপাতালে পৌছে ওকে ফোন করলাম, ও তখন অন-ডিউটি । ওর কেবিনে গিয়েই বসলাম সেখানে সাধারন ভাবেই কথা শুরু হলো, এই কেমন আছেন; আপনি কেমন আছেন টাইপ । একসময় আমিই বললাম - আপনার একটা ট্রিট পাওনা ছিলো তবে সেটাতো এই কেবিনে দেওয়া সম্ভব না তাহলে কি করাযায় বলুনতো ?

রিদা- না, এখন তো সেটা সম্ভবই না। ডিউটির পরে কিছু একটা প্লান করা যেতে পারে।

আমি- সেটাই ভালো হয়, আমি সাইকেলে এসেছি । দুজনকে কোথাও যেতে হলেতো সাইকেলে যাওয়া যাবেনা, আমি গিয়ে গাড়িটা নিয়ে আসি।

রিদা - সাইকেলে ক্যারিয়ার নাই ?

-আছে, কেন ?

- তাহলে গাড়ি লাগবেনা আপনি এখানেই বসেন, গল্প করি এমনিতেই সময় কাটছে না। আজ কাজের চাপও নেই।

- তাও মন্দ হয়না । (কথা বলতে বলতেই ওর ডিউটির সময়টা খুব তাড়াতাড়িই পার হয়ে গেল ও আমাকে ক্যান্টিনে ওয়েট করতে বলে হোস্টেলে গেলো ফ্রেসহয়ে আসতে) দশ পনের মিনিট পরেই ও ফিরে আসলো। দুজনে ক্যান্টিনে বসে ঠিক করতে লাগলাম যে কোথায় যাওয়া যায়। তো অনেক চিন্তা ভাবনার ঠিক করলাম মিরপুর ডি.ও.এইচ.এস এর পিছন দিয়ে দিয়া বাড়ির দিকে যে রাস্তাটা গিয়েছে ওদিকে যাবো । আমরা যখন রওনা দিলাম তখন সাড়ে চার টা মতো বাজে। সিডেটিভ সাথেই ছিলো আর বাকি যেটা লাগে সেটা এক ফার্মেসি থেকে কিনে নিলাম, ও শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার এই অনৈতিক কাজ গুলোর স্বাক্ষী হচ্ছিলো কিন্তু কিছু বলছিলো না ওর এই কথা না বলাটাই আমার কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছিলো । তারপর আমরা মিরপুর ডি.ও.এইচ.এস এর পিছন দিয়ে দিয়া বাড়ির দিকে যে রাস্তাটা গিয়েছে ওই রাস্তায় গিয়ে সাইকেল থেকে নেমে, হাটতে শুরু করলাম ওই প্রথম বললো -এগুলো খান কেন ?

আমি- মস্তিষ্কের নিউরন গুলোকে ওভারক্লক করার জন্য, অনেকটা কম্পিউটারের সি.পি.ইউ ওভারক্লক করার মতো। আর এই আপনাদের জগৎ, মানে অত্যন্ত প্রতিযোগিতা মূলক অসুস্থ সমাজ থেকে নিজেকে ঘন্টা খানেকের জন্যও যদি আলাদা হতে পারি তাই ।

রিদা - এভাবে এগুলো খেয়ে কয়দিন বাঁচবেন ?

আমি- আমার বাঁচার খুব একটা ইচ্ছা নেই এখন, আমার মনে হয় না জীবনে নতুন কিছু দেখার বাকি আছে। জীবনটা মাত্রাতিরিক্ত বোরিং হয়ে গিয়েছে, কোন কিছুই আর ভালো লাগেনা... রিদা- আচ্ছা আপনাকে একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করি, অরিনের সাথে আপনার সম্পর্কটা কেমন ছিলো ? কথাবার্তা হতো ? আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললাম শেষ কথা হয়েছিলো ৫ বা ৭ বছর আগে। তারপর কথা বলতাম মনে মনে, টেলিপ্য়াথি কিসিমের কিছু একটা কল্পনা করতাম। ওদিকে শালার জানতামই না যে তার অ্যান্টেনা সে অলরেডি অন্য ফ্রিকোয়েন্সিতে টিউন করে রেখেছে। নিজেকে নিজেই একটা ধোকার মধ্যে রেখেছিলাম। সত্যি বলতে কি, এখন নিজেকে অনেকটা উন্মুক্ত লাগাছে। এতোদিন আমি ওর মধ্যেই আবদ্ধ ছিলাম, বাইরের দিকে চোখ মেলে দেখার ইচ্ছাই জাগেনি কখনো। তবে এই উন্মুক্ততা বা স্বাধীনতা আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরনা দেওয়ার পরিবের্তে আরো হতাশ করছে। জীবন থেকে ১১ টা বছর নাই হয়ে গিয়েছে।

রিদা - তো এখন কি করবেন ? মরে যাবেন ? না, সেরকম পরিকল্পনা নেই আপাতত। কিন্তু এই শহর, পরিচিত সকল লোকজন থেকে অনেক দুরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করছে । রিদা - কোথায় যাবেন ? জানিনা, যাওয়ার তেমন কোন জায়গা নেই । তবে রামপুরার বাসাটা আজ কালের মধ্যেই বদলাবো। ওখানকার আবহাওয়া আর সহ্য হচ্ছেনা।

রিদা- ঢাকার বাইরে শিফট করবেন নাকি ? ঢাকার বাইরে না, তবে শহর থেকে একটু বিচ্ছিন্ন থাকতে চাই। আমার পথে পথে অনেক আত্মীয় আছে যাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মার সম্পর্ক আছে । তেমনি একজন আছে বিরুলিয়ায়,উনাকে বলে একটা জায়গা খুজে নিবো। খুব একটা সমস্যা হবেনা। আর পরিচিত লোকজনের সাথে হয়তো যোগাযোগ অনেকটাই কমে যাবে, ইদানিং কারো ফোন আসলে খুব অস্বস্তি লাগে । ধরি না। তারা হয়তো আমার ওপর রাগই করে, করাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু কথা বলার মতো মন-মানসিকতা এখন আমার নেই ।

আমি- আচ্ছা সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত । সেদিনকার মতো ওকে হোর হোস্টলে ফিরিয়ে দিয়ে আমি বাসায় ফিরলাম, এখানে আমি একাই থাকি। ফিরে বিরুলিয়ার পেথের সেই আত্মীয়কে ফোন করে একটা বাসা দেখার জন্য বললাম। দুদিন পর উনি আমাকে বেশ কয়েকটা বাসা দেখালেন, কিন্তু আমার পছন্দ হলোনা । সেদিনই আবার গেলাম রিদার কাছে। অন্য কারো সাথে আমার কথা বলতে ভালো না লাগলেও এই মেয়েটার সাথে কথা বললে আমার মনটা হালকা হয় ।ওর তখন সবে ডিউটি শেষ,

তো আমরা বেরিয়ে এসে ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে বসলাম । আমার মাথায় কিন্তু একটা প্রশ্ন ঘুরতো, যে এই মেয়েটা আমার মতো ফিউচারলেস, ক্লাসলেস লোককে কেন সময় দেয় ? আমি মনের মধ্যে প্রশ্ন জমা করে রেখে দিতে পছন্দ করিনা বিশেষ করে যার সাথে আমি সময় কটাচ্ছি।

অন্য সবার ক্ষেত্রে বিষয় টা আলাদা, অধিকাংশ মানুষের মস্তিষ্ক আমার কাছে সচ্ছ কাঁচের মতো । বাংলাদেশ পুলিশের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার (এ.সি) পদে দুই বছর চাকরী করেছিলাম। ছেড়ে দিয়েছি, শালার ডিসিপ্লিন আর পিঠ পিছে মানুষের গালি আমার সহ্য হয়নি। এদের সাথে দু-একটা কথাবার্তা বলা মাত্র তাদের পুরো চিন্তাভাবনা আমি পড়ে ফেলতে পারি । কিন্ত এই মেয়েটা আলাদা, অন্য সবার মতো না। আর মনের মধ্যে সন্দেহ, না ওর ক্ষেত্রে প্রশ্ন বলাই ভালো; হ্যা প্রশ্ন নিয়ে কথা বলতে গেলে হিসেব করে বলতে হয়। এভাবে সময় কাটানো বিরক্তিকর তাই প্রশ্ন করেই ফেললাম যে আমাকে সময় দেওয়ার কারণ কি ?

রিদা - আচ্ছা আপনার তো পরিচিত অনেকেই আছে, বন্ধু-বান্ধবও আছে তো আপনি কথা বার্তা বলতে আমার কাছে কেন আসেন ?

আমি সত্যটাই বললাম, যে আপনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারিনা মানে আপনার কথা বার্তা প্রেডিক্টেবল না এইটাই কারন । যার মুখ খোলার আগেই জানা যায় যে সে কি বলবে তার সাথে কি কথা বলবো ? আপনি তাদের মতো না, তাই আসি। এই কথা গুলো বলতে বলতেই একটা সিগারেট বের করলাম, তখন খেয়াল হলো লাইটার তো গাড়িতে রেখে এসেছি। লাইটার পকেটে রাখিনা কারন পকেটে মোবাইলও থাকে, স্ক্রাচ পড়ে যায় ।

তো কি করা যায় সেটাই ভাবছিলাম তখন রিদা একটা লাইটার হতে দিলো আর আমি সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করলাম তখন ও বলল,

- আপনার ব্যাপারটাও একটু অন্য রকম, যেমন ধরুন অন্য সকল বা অধিকাংশ মানুষ যে বিষয়ে যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় আপনি তেমনটা দেখান না। আপনাকে অনেকটা সংবেদনহীণ বলা যায় কিন্তু আপনি আসলে তা না। এইযে, আমি আপনাকে লাইটার দিলাম আপনি একটুও বিস্মিত হলেন না বা প্রশ্ন করলেন না আমার কাছে লাইটার কেন। আর আমার ধারনা প্রশ্ন না করার কারন হলো আপনি ইতমধ্যেই আমার কাছে লাইটার থাকার একটা যুক্তিসঙ্গত একটা উত্তর তৈরী করে নিয়েছেন । এরকম আরো একটা বৈশিষ্ট্য হলো আপনার কল্পনার জগৎ, যা আপনাকে অন্যদের থেকে আরো বেশি আলাদা ভাবে প্রেজেন্ট করে আপনি এই যেমন সকলের মধ্যে থেকেও সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন এই ব্যাপারটা আর আপনার কল্পনার জগৎটা আমার মধ্যে একটা কৌতুহল সৃষ্টি করে । ধরুন এটাই কারণ । আার সব কিছুর পিছনে সব সময় কারন থাকেনা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারন না থাকাটাই ভালো। শেষের কথাটা আমার পছন্দ হলো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারণ থাকলে সেটা স্বার্থের সমার্থক হয়ে যায়। আর লাইটারের ব্যাপারে অবাক হওয়ার মতো কিছুনেই কারন লাইটারটা নতুন, ও আজই হয়তো কিনেছে এখানে অবাক হওয়ার মতো কিছু নাই। সে যাই হোক আমি বললাম

- বাসাতো খুঁজে পাচ্ছিনা, ঢাকায় একজন ব্যাচেলরের বাসা খুজে পাওয়া বেশ কঠিন । তার ওপর সেই লোক যদি আমার মতো হয় তাহলেতো কোন কথাই নেই । ও বললো,

- এ ক্ষেত্রে আমি আপনাকে সাহায্য করেতে পারি। আমার এক বন্ধু আছে ওকে বললে ও একটা ব্যাবস্থা করতে পারবে। আপনি বললে আমি ওর সাথে কথা বলতে পারি । আমি শুধু বললাম, বলেন। আমার আসলে এখন কোন কিছুরই ঠিক নেই, কি বলছি, কি করছি, কেন করছি কোন কিচ্ছু না । এই মেয়েটার সাথে থাকার কারনে কিছুটা না, অনেকটা উপকার হচ্ছে। না থাকলে কি হতো কে জানে... সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অনেকটা অন্যমনস্ক অবস্থায় ছিলাম, তবে এটা বুঝতে ভুল হচ্ছিলোনা যে সামনে দিয়ে যে ট্রেনটা যাচ্ছে ওটা এগারোসিন্দুর গোধুলী, অবচেতন মন ব্যাপারটা ঠিকই ক্যাচ করেছে । এই স্টেশনে দাড়ায়না জেনেও একসময় এই ট্রেনটার অপেক্ষায় বসে থাকতাম, সামনে দিয়ে যখন ক্রস করতো তখন ট্রেনেরে জানালার দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকতাম তবে এখন দৃষ্টি জানালার দিকে নেই, ট্রেন চলার বাতাসে উড়ন্ত ধুলো, পলিথিন কাগজ গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । আজ দৃষ্টি ও মন দুটোই স্থীর।

হঠাৎ রিদা পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে বললো, তাড়াতাড়ি উঠুন কিছু কাজ আছে ।

আমি- চলে যাবেন ?

রিদা - নাহ্, পরিস্তিতির পরিবর্তন করতে হবে ।

আমি-বুঝলামনা ।

রিদা - গাড়িটার কি অবস্থা করে রেখেছেন, ওটা আগে ধুতে হবে।

আমি- তার সাথে পরিস্তিতি মানে কোন পরিস্তিতির কি সম্পর্ক ?

রিদা - সেটা আসতে আসতে বুঝতে পারবেন । এখন চলুন, বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । গাড়িটা কালসীর দিকেরে একটা কার ওয়াসে দিলাম, বহু দিনের ময়লা একটু সময় লাগবে পরিষ্কার করতে। ও নিয়ে গেলো রাস্তার পাশের একটা চায়ের দোকানে । সেখানে গিয়ে দোকানদারকে চা দিতে বললো। চা পান করতে করতে আমি ওকে বললাম আপনি ঠিক কি করতে চাইছেন বলেন তো ?

রিদা - সেটা এখন বলবোনা, সময় হয়নি। তবে আমি এই মুহূর্ত থেকে যা যা বলবো আপনাকে সেটা করতে হবে, করবেন ?

আমি - যদি না করার ইচ্ছেই থাকতো, তাহলে এখানে আসতাম না। কিছুক্ষণ পর, গ্যারেজে থেকে লোক এসে বললো গাড়িকে গোসল করানোর কাজ শেষ। পেমেন্ট করে গিয়ে দেখি ও আগেই গাড়িতে উঠে বসে আছে, আমি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে ও যা বললো তাতে আমি অবাক না হয়ে পারলামনা । [ও বলেছিলো, অরিনদের বাসায় যেতে হবে আর তার আগে একটা বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড প্রিন্ট করতে হবে যেখানে আমার আর ওর নাম লেখা থাকবে ] আমি তারপর জিজ্ঞাসা করলাম ।

-আপনি কি সিরিয়াস ?

রিদা - আপনার কি মনে হয় ? এইভাবে জীবন কাটবে আপনার ? আপনিকি জানেন যে এটা আপনার সেকন্ড লাইফ ? আপনার যে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিলো তাতে আপনার ব্রেইন হ্যামারেজ হয়ে এতোদিন কবরবাসী হওয়ার কথা কিন্তু আল্লাহ্’র অশেষে রহমতে তেমন কিছুই হয়নি । আর আপনি আবোল-তাবোল খেয়ে সেই জীবন ধ্বংস করে যাচ্ছেন কার জন্য, আপনার লিভারের অবস্থা জানেন আপনি ? এমন একটা মানুষের জন্য, আপনি যার চোখের বালি । আচ্ছা সে নিজেকে কি মনে করে ? শুধুমাত্র তার কিছু কথার জন্য আপনার জীবনের ট্রেনটা সম্পূর্ণ ভুল ট্র্যাকে চলে গিয়ে একটা ডেড এন্ডে ধাক্কা মারতে চলেছে আর সে কিনা এরকম একটা অসম্পূর্ণ সিগন্যাল দিয়ে নিজে ডানা মেলে আপনার জীবনের ধ্বংসস্তপের উপর উড়তে চলেছে this is not fair. আমি - এতে হয়তো তার কোন সীমবিদ্ধতা ছিলো।

রিদা - সীমাবদ্ধতা না, ছিলো অবজ্ঞা ও দ্বায়ীত্বজ্ঞানহীনতা । সে শুরুতেই যদি আপনাকে ভুল ট্র্যাকে না তুলে দিতো তাহলে আপনাকে এভাবে বিদ্ধস্ত হয়ে ধ্বংসের পথে ধাবমান হতে হতো না। আমি- কিন্তু আপ... আমাকে থামিয়ে দিয়েই রিদা বললো, আর কোন কথা না সময় নেই।

আমি- কিন্তু আপনি তো আমাকে ঠিকমতো চিনেন বলেও মনে হয়না। এবার রিদার মুখ না, হাত চললো মানে সরাসরি কোন কথা ছাড়া গিয়ার-লিভার ঠেলে দিলো, ভাগ্যিস আমার ব্রেক প্যাডেলে পা ছিলো। এখন ব্যাপারটা আমার ব্রেইনের প্রসেসিং ক্ষমতার বাইরে দিয়ে যাচ্ছে, তাই আমি নিজে কিছু ভাবার চেষ্টা না করে জাস্ট ওর কমান্ড ফলো করে যাচ্ছি।

প্রথমে গেলাম মিরপুর ১০ এ একটা প্রিন্টারের দোকানে । দোকানে যে ছেলেটা কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে সে বেশ দক্ষ দশ পনের মিনিটের মধ্যে একটা দারুন কার্ড ডিজাইন করেফেলেছে সে । কার্ডটা দারুন হয়েছে । একটা কার্ডই প্রিন্ট করা হলো ।

এখন যাচ্ছি অরিনদের বাসার উদ্দেশ্যে মানে যাত্রাবাড়ির দিকে । এই বিজয় সারনীর জ্যামে যখন বসে আছি তখন হঠাৎ মাথাটা ঘুরে বমি আসতে লাগলো । গাড়িতো জ্যামে দাড়ানো, আমি বমি আটকাতে কোন মতে এসিটা বাড়িয়ে সিটা চিৎ করে ফেললাম । রিদা আমার এই কান্ড কারখানা দেখে গাড়ি থেকে নেমে গেল, আমি যে জিজ্ঞেস করবো যে কোথায় যাচ্ছেন এখনি সিগন্যাল গ্রীন হয়ে যাবে সে অবস্থা আমার ছিলোনা । ও এসে ড্রাইভার সাইডের ডোর ওপেন করে বললো,

- একটু কষ্ট করে সেকেন্ড সিটে যান । আমি একটু ধাতস্থ হয়ে বিশেষ এক কায়দায় গাড়িথেকে না বের হয়েই সেকেন্ড সিটে চলে গেলাম । ও বসলো ড্রাইভিং সিটে। ভালোই চালায়। অন্তত আমার মত গাড়ি চালাতে চালাতে গালি-গালাজ করে অন্য বেহুদা ড্রাইভার, আর হুট করে সামনে চলে আসা ব্রেইন লেস পাবলিকের গুষ্টি উদ্ধার করেনা, দেখেন এর মধ্যেই আমার মনে মনে গালি-গালাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সাধারণত এই শব্দ বোমা জনসম্মুখে প্রয়োগ করিনা৷ জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে যাত্রাবাড়ী চলে এসেছি, সেকেন্ড সিটে বসে ওকে ডিরেকশন দিতে মন্দ লাগছেনা। এরই মধ্যে আমার ছোট ভাইকে বলে প্ল্যান অনুযায়ী আব্বুর ফোনটা আব্বুর কাছ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা অরিনদের বাসার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমি রিদাকে জিজ্ঞেস করলাম কাজটা করা কি ঠিক হচ্ছে, মানে এই কাজের অর্থ কি?

রিদা বললো- করেই দেখুননা, বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি অরিন দের বাসার কলিং বেল টিপলাম। এখানে একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করলাম যে আজ আমার মধ্যে কোন উত্তেজনা কাজ করছেনা নিজের ভেতরটাকে সমুদ্রের হাজার মিটার গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন শান্ত নিরব তলদেশের মতো লাগছে অথচ আগে নিঃশ্বাসে তুফান বয়ে যেত৷ আজ অরিন বাসায়ই আছে, ওর রুমের জানালাটা এদিকেই৷ রুমে লাইট জ্বলছে। ওর হাজবেন্ট হারামিটাও সম্ভবত আজ এখানেই আছে। ইচ্ছা করছে M249 light machine gun দিয়ে যতক্ষণ তৃপ্তি না মিটবে ততক্ষণ গুলি চালিয়ে শালার বুক ঝাজরা করে দেই। কিন্তু কিছু করার নেই। রিদা মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি ভাবছেন ?

আমি- কিছু না, তবে আজ এখানে আসা ঠিক হয়নি চলেন ফিরে যাই।

রিদা- কেন ? এতোদুর আসলেন আবার ফিরে যেতে চাইছেন, কি ব্যাপার বলুন তো ?

আমি- আসার সময় তো জানতামনা যে অরিন বাসায় থাকবে আর সম্ভবত ওর হাজবেন্ডও।

রিদা- কি করে বুঝলেন ও বা ওরা বাসায় আছে ?

আমি- অরিনের রুমের দিকে ইশারা করে বললাম ওটা অরিনের রুম, আলো জ্বলছে । ওর রুমে ও বা ওরা ছাড়া এই সময়ে অন্য কারো থাকার কথা না।

রিদা - যদি সত্যিই, কি যেন নাম ? হ্যা অরিনরা বাসায় থেকে থাকে তাহলে ব্যাপাটা আরো ভালো। আমি শুরু থেকেই এটাই ভাবছিলাম যে ওরা যেন বাসায় থাকে। তিনবার বেল বাজানোর পর কারো নেমে আসার আওয়াজ পেলাম । বিভীষন (অরিনের ছোট ভাই) এসেছে দরজা খুলতে। ইচ্ছা করছিলো নাক বরাবর একটা ঘুষি মারি, ইচ্ছা সংবরন করে চেহারাটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করলাম। তবে বিভীষন আমাকে এই সময়ে এখানে আশা করেনি । ওর মুখে ভয় বা কোন অঘটনের আশঙ্কা স্পষ্ট। সে দরজা খুলতে খুলতে বললো,

- ভাইয়া কেমন আছেন ?

আমি - ভালো, অরিনরা বাসায় মনে হয় তাই না ?

- হ্যা ।

আমি- ওর বিয়ের সময় তো আমা দাওয়াত ও দিলেনা ! অনেক দিন কারো বিয়েতে যাওয়া হয়না তাই ভাবলাম নিজেই বিয়ে করে নেই । রিদা কে দেখিয়ে বললাম, তোমার হবু ভাবি রিদা। ওর এক বান্ধবীকে আর তোমাদের সবাইকে কার্ড দিতে আসলাম। রনি (অরিনের ভােইয়ের নাম) রিদাকে সালাম দিয়ে বললো ভিতরে আসুন বাইরে কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবেন ? আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো- আপনার তো জানার কথা, চাচা-চাচীরা তো এসেছিলেন। আপনি আসেননি দেখেই বরং আমি অবাক হয়েছিলাম। বেচারার মুখ দেখে বোঝা গেল এখন সে দুঃশ্চিনতা মুক্ত হলো । ভালোই হলো, ওর ওই ফ্যাকাশে মুখ দেখে ওকে ভুতের মতো লাগছিলো, এখন আর তেমনটা লাগছেনা । ওপরে যেতে যেতে আমি বললাম, জানোতো আমি আলাদা থাকি। আমাকে কেউ জাানায়নি। যাক বাদ দাও । চাচা বাসায় আছেন ?

রনি- হ্যা। দরজা খোলাই ছিলো আর অরিন ওর হাসবেন্ড আর চাচা ড্রইংরুমেই বসে ছিলো। আমাকে দেখে চাচা খুব একটা অবাক না হলেও অরিন ভুত দেখার মতো চমকে গেল আর হাজবেন্ড, ও শালার আমাকে চেহারায় চেনার কথা না তাই সে স্বাভাবিকই থাকলো। আমার চাচাকে সালাম দিতে ইচ্ছা করলোনা তাই সালাম দিলামও না, লোকটা মাত্রাতিরিক্ত দাম্ভিক। কিন্তু রিদা সালাম দিয়ে দিলো।

চাচা- এনাম তোমার তো দেখাই পাওয়া যায়না, অরিনের বিয়েতেও আসলে না। কোন কাজ তো করো না, থাকো কোথায়? আর উনি কে ?

এইযে, খোঁচাটা মারলো এটাই তার স্বভাব। নিজে একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা তাই বাকিদের তিনি মানুষ বলে গোনে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারন আছে এবং ভদ্রভাবে অপমান করায় তার কোন জুড়ি মেলা ভার তবে লোকটা সৎ।

আমি উত্তর দিলাম

- এই ঘুমিয়েই থাকি বেশিরভাগ সময়, কি আর করবো আর মাঝে মাঝে উবার চালাই। [ কথাটা সত্য না, চাকরি ছাড়ার পর আমি যে বিজনেসটা দাড় করিয়েছি সেখানে উনার মেয়ের জামাইয়ের মতো ৫ চাকরী করে ] আর ওর সাথে সম্পর্ক এই কার্ড টা পড়লে বুঝতে পারবেন বলে কার্ডটা উনার হাতে দিলাম। চাচা কার্ডটা রিদাকে বললেন তুমি ডাক্তার!?

রিদা - জ্বী। সে যে অবাক হয়েছে তা তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো? এখন তার ব্রেইন উবার ড্রাইভার আর ডাক্তারের সম্পর্কের সমীকরণ মিলাতে ব্যাস্ত। অরিন প্রথমে সীমাহীন বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। কিন্তু এখন ওর দৃষ্টিভঙ্গী তেমন নেই । এবং সে আমাকে জাস্ট বরাবরের মতো ইগনোর করে  চলেছে এখানে পার্থক্যটা হচ্ছে এইযে তার ইগনোর করাকে আমি এখন থোড়াই কেয়ার করছি ।

চাচা এতক্ষনে আমাদেরকে বলছে তোমরা দাড়িয়ে আছো কেন ? বসো, তাই বলে চাচি কে চা দিতে বললেন।

আমি বললাম - চাচা এমইতেই রাত হয়ে গিয়েছে, অন্য একদিন আসবো ।

চাচা- আরে বসোইনা । ড্রাইভার গিয়ে তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবে।

আমি- ধন্যবাদ চাচা, তবো আমাদের সাথে গাড়ি আছে ।

চাচা- তাহলে আর সমস্যা কি ? আমি গিয়ে বসলাম অরিনের হাজবেন্ডর পাশে আর রিদা আমার দিকেরই একটা সিঙ্গেল সোফায় । চাচা অরিনকে প্রশ্ন করলেন তুমি কোন মেডিকেল কলেজে ছিলে ? রিদা-  এ. এফ. এম. সি [ Armed Forces Medical College ]

চাচা - তোমার বাবা কি করেন ?

রিদা -  আমার বাবা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জরুল ইসলাম।

[ এইবার আমি অবাক না, সিরিয়াস লেভেলের ধাক্কা খেলাম।৷ ওর বাবা মা দুজনকেই আমি খুব ভালো ভাবে চিনি এবং তারাও আমাকে সেভাবেই চেনেন। রিদার মা একটা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল। উনাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের যাবতীয় কাজ আমার কোম্পানি করেছে, ওদের বাসায়ও আমি দু-তিনবার গিয়েছিলাম কিন্তু ওর সাথে কোনবারই দেখা হয়নি। আমি লেখালেখি করি ঠিকই কিন্তু আমার পাঠকের সংখ্যা খুব বেশি না তাই প্রথম দিন ও যখন বলেছিলো "আমি আপনাকেও চিনি। প্রথমে চিনতে একটু দেরি হয়েছিলো কারন আপনার ব্লগে আপনার চশমা পরা ছবি দেওয়া ছিলো তবে ড্রেসিং এর পর আর কোন ডাউট ছিলোনা। আমি আপনার ব্লগের একজন ফলোয়ার" তখন আমার মাথায় একটা প্রশ্ন এসেছিলো যে ও আমার ব্লগের লিংক পাইলো কই ! তার মানে আমাকেও কেবল ব্লগের ছবি দেখেই না, বাস্তবেও আগে দেখেছে । যাই হোক ধাক্কাটা আমি সামলে নিলাম ]

চাচা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন - তো উবার চালিয়ে কিরকম ইনকাম হয় তোমার ?

আমি- কোন ফিক্সড ইনকাম নেই, ফ্ল্যাট ভাড়া আর হাত খরচ উঠে গেলেই চলে । আমার এরকম দ্বায়ীত্ব জ্ঞানহীনের মতো উত্তরে সে আমাকে আরেকটা খোঁচা মারার স্কোপ পেয়ে গেলেন । চাচা- তো ঘরজামাই থাকার পরিকল্পনা নিশ্চয়ই ।

আমি - না । সেরকম পরিকল্পনা নেই । আমি চা পানে মনোযোগ দিলাম, চায়ে চিনি কম হয়েছে ।

সরাসরি অরিনকেই বললাম  চায়ে চিনি আরেকটু লাগবে, দিয়ে নিয়ে আসেন তো । সে কাপটা হতে নিয়ে চলে গেলো । হুম এইবার চিনি ঠিক আছে । আমি অরিনের হাজবেন্ড বললাম যে বোনের বান্ধবী হওয়ার সুযোগটার ভালোই কাজে লাগিয়েছেন । [ আর তার কানের কাছে আস্তে করে দ্রুত বললাম যাতে কেউ শুনতে না পায় সেই প্রথম থেকেই আমার সন্দেহটা ছিলো কিন্তু আপনার আরেক ভাই সম্পর্কে, কারণ আমি আপনাকে চিনতাম না ! ] আমার এই কথায় সবাই চুপ হয়ে গেল, আমি পরিস্থিতি স্বভাবিক করার জন্য বললাম, আরে দুলাভাই আপনার সাথে মজা করলাম। বিয়ের সময় তো আসতে পারিনি.. আরো কিছু বলতে যাবো তখন এক লোক এসে চাচাকে বললো,

স্যার আপনাদের গেস্টের গাড়িটা সরাতে হবে। আরেকটা গাড়ি বের হতে পারছেনা। আমি রিদাকে বললাম তুমি বসো [ওদের সামনে ওকে আর আপনি বললাম না] আমি গাড়িটা সরিয়ে দিয়ে আসি। চাচা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি বসো। আমি ড্রাইভার কে ডাকছি ওকে চাবি দাও ও সরিয়ে দিবে।

আমি ড্রাইভার কে চাবি দিলাম, বেচারা কিছুক্ষণ পর ঘুরে এসে বললো। স্যার এই গাড়ির সিস্টেম আমি বুঝতে পারছিনা। চাচা আমাকে বললেন তোমাদের আগের গাড়িটা না ?

আমি - না চাচা, এটা আমার। কিছুদিন হলো নিয়েছি।

চাচা - কি গাড়ি নিয়েছো ? আমি - Audi A8L [ ২০১৩ মডেল, কেউ আবার মনে করবেননা কোটি টাকার গাড়ি চালিয়ে বেড়াই ]

চাচা - ওই গাড়ি দিয়ে তুমি উবার চালাও !!? আমি - জ্বী চাচা, চলেতো। আচ্ছা চাচা আমরা তাহলে এখন উঠি। পরে আবার আসবো। এখন এই লোকের মাথা সম্পূর্ণ উল্টেপাল্টে গিয়েছে। উনি এখন আমার আব্বুকে ফোন করবেন, কিন্তু ফোনে পাবেন না। কারণ আপনারা জানেনই। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। এখন আমিই ড্রাইভ করছি, আমি ওর ওর হোস্টেলের দিকে যেতে শুরু করতেই রিদা বললো ওদিকে যেতে হবেনা মাওয়া ঘাটের দিকে চলেন।

আমি- আপনি শিওর?

রিদা - আপনার কি মনে হয়? আমি মাওয়া ঘাটের রাস্তাই ধরলাম।। কিছু দুর গিয়েই এতক্ষণের ঘটনা মনপড়ে আমি আর আমার হাসি আটকে রাখতে পারলামনা। আজ আসলে কি করছি, কেন করছি কিছুই মাথায় ঠিক মতো কাজ করছেনা।

রিদা - ব্যাপারটাতে মজা পাচ্ছেন  ?

আমি-  হুমম, আপনার কথায় না ভেবে চিন্তে কান্ডটা ঘটিয়ে ফেললাম ঠিকই । কিন্তু যখন ওরা বুঝতে পারবে যে জাস্ট একটা সাজানো নাটক ছিলো,.......মানে এটাকে ইস্যু করে খোঁচা মারার আরেকটা রাস্তা তৈরী করে আসলাম আর কি! রিদা কিছু বললোনা, আমার ধারণা ব্যাপারটা সেও বুঝতে পেরেছে । আমাদের মাওয়া ঘাটে পৌছাতে খুব বেশী সময় লাগলো না কিন্তু তার পরেও এখন রাত সাড়ে বারোটা বাজে মানে রিদার আজ হোস্টেলে ফেরা সম্ভব না তবে আমার ধারনা ও ব্যাপারটা কোন ভাবে ম্যানেজ করে নিয়েছে বা নিবে,  আমার প্রশ্ন সেইটা না । আমার কথা হলো ও এখনে করবেটা কি ? আমি এখন খুব  বেশী দুরদর্শী চিন্তা বাদ দিয়ে এখন এই মেয়েটার কাান্ড-কারখানা পর্যবেক্ষনে মনোনিবেষ করাটাকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি । অতি নিকটে অপমানের যে ৯৯ শতাংশ সম্ভাবনা তৈরী করে রেখেছি তা নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই, আমার চামড়া যথেষ্ট মোটা ।

আমি একটা পানের দোকানের সামনে আমরা দাড়ালাম, দীর্ঘক্ষন বিড়ি টানা হয়নি । আমি নেমে চায়ের দোকানওয়ালা মামাকে দুটো চা দিতে বলে সিগারেটটা ধরালাম, না রিদার লাইটার দিয়ে না দোকানের লাইটার দিয়ে । রিদা বললো আপনি কি করে বুঝলেন যে আমার এখন চা পান করতে ইচ্ছে করছে ?

আমি - আমি সেটা বুঝতে পেরে দাড়াইনাই । ওইযে সামনে ফার্মেসীটা দেখেছেন, ওইটা দেখে দাড়িয়েছি ।

রিদা- ও, এ্যান্টিটাসিভ ?

আমি- সিডেটিভও লাগবে দু পাতা, এ আমাকে দিবে না। প্রেস্কিপসনের ছবি যে ফোনে ছিলো ওটা একটু আগে চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়েছে, গাড়িতে চার্জে দিয়েছি চাার্জ হয়ে অন হতে সময় লাগবে। আর দুটো এক সাথে নিলে সন্দেহ করবে । আপনার আই.ডি কার্ড সাথে আছেনা আপনি গিয়ে সিডেটিভটা নিয়ে আসেন। পরে আমি যাচ্ছি ।

রিদা- অদ্ভুত লোক আপনি ! তো এই কাজ শেষ করার পর আমি রিদাকে জিজ্ঞেস করে বললাম এখন কি করবেন, কোথায় যাবেন ?

রিদা- কোন নির্জন জায়গায় চলেন, তবে জায়গাটা নদীর  ধারে হতে হবে। চরে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। নৌকায়ও যাওয়া যেতে পারে৷ আমি আলোক দূষণ মুক্ত নক্ষত্র খচিত আকাশ দেখতে চাই। সেই কবে ছেলেবেলায় দাদাবাড়ীতে গিয়ে দেখেছিলাম! রিদা যে আয়োজন করতে বললো তা আসলেই করতে পারলে মন্দ হয়না, তবে ওর নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে।

আর আমার, আমার আবার কিসের নিরাপত্তা ? কি নিবে আমার কাছ থেকে ? গাড়ি ? নাহ্ ওটা নিলেও হজম করতে পারবেনা। মোবাইল বা টাকা পয়শা ? কেন নিবে বলুন তো, নেশা-ভাঙ করার জন্য ? সেরকম হলে আমিই ওদের সাথে বসে যেতাম, ওরা বরং আমার সাথেই মিশে যেত । কিন্তু রিদার ব্যাপারটা আলাদা । গাড়িতে অস্ত্র বলতে একটা লোহার রড ছাড়া কিছু নাই । কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকায় যাওয়ার পরিকল্পনাটাই সিলেক্ট করলাম । কিন্তু এতো রাতে নৌকা আর মাঝি কোথায় পাবো !

টাকা হলে যেমন বাঘের চোখ যেমন পাওয়া যায় তোমনই রাত ১ টার দিকে মাঝি, নৌকা ও খাবার সবই পাওয়া গেলো । ইঞ্জিন ওয়ালা নৌকা । নৌকা চালানোতে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই, তাই বলে একবারে পারবোনা তা না কিন্তু পদ্মার মতো নদীতে আমি কোন রিস্ক নিতে রাজি নই । নৌকা মাঝিই চালাবেন । আমি তাকে নির্দেশনা দিলাম যে নৌকা মাঝ নদী মানে তীর থেকে যতটা সম্ভব দুরে নিয়ে যেতে হবে তারপর ইঞ্জিন বন্ধ করে স্রোতের সাথে ভেসে যতদুর যাওয়া যায় আরকি এবং নৌকাতে কোন আলো জ্বালানো যাবেনা । এই শর্তে শাঝি বললো নৌকায় আলো না থাকলে বড় সাইজের নৌজান এসে ধাক্কা মেরে একটা দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে । আমি বললাম, আমাদের নৌকায় আলো থাকবেনা । কিন্তু যে নৌযান ধাক্কা মারতে আসবে তাতেতো আলো থাকবে, সেটা দেখে নৌকার দিক পরিবর্তন করে নিবেন এবং প্রয়োজন বোধে নিরাপদ দুরত্ব বজায় থাকতেই আলো জ্বেলে অপর নৌযানকে সতর্ক করে দিবেন, কি বলেন ক্যাপ্টেন সাহেব ?

উনাকে ক্যাপ্টেন সাহেব বলায় তিনি বেশ খুশি হয়েছেন তা বোঝা গেল উনার চোখ দেখেই । তো আমরা গাড়িটা ক্যাপ্টেন শফিক সাহেবের বাসায়ই রেখে উনার সাথে রওনা দিলাম, সাথে চললো উনার সহকারী চীফ ইঞ্জিনিয়ার সেলিম । অন্ধকার পথে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সেই আমাদের ঘাটে বাঁধা নৌকার দিকে নিয়ে যেতে লাগলো । এরই মধ্যে চীফ ইঞ্জিনিয়ার সেলিম কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যাবস্থা করবে নাকি জিজ্ঞেস করলো । আমি না করলাম, এখন হুঁস হারানোর সময় না । এখানে রিদার নিরাপত্তার ব্যাপারটা জড়িত ।

তো আমরা নৌকায় গিয়ে উঠলাম, আমি আর রিদা নৌকার একেবারে সামনে গিয়ে বসলাম । চীফ ইঞ্জিনিয়ার সেলিম , ইঞ্জিন চালু করলো আর ক্যাপ্টেন শফিক হাল ধরে বসলেন । এই মুহুর্তে রিদা আমাকে যা বললো তাতে আমার মতো লোকেরও শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো, এই মেয়ে সাঁতার জানে না আর নৌকা এতক্ষনে যে জায়গায় এসেছে সেখানে পানির গভীরতা কম করে হলেও ৮০/৯০ ফিট ! আমি এক সময় কল্পনা করতাম যে অরিন যদি এরকম গভীর পানিতে পড়ে যায় তখন আমি কি করবো, সাঁতারের যতটুকু এখন আমার আয়ত্ত আছে তাকে সাঁতার জানা বলে না। তখন মনে হতো সাঁতার জানি আর না জানি সাথে সাথে আমিও ঝাপ দিবো । ব্যাপারটা ভাবলে বুকের পাজরে অদ্ভুত একটা ব্যাথা অনুভুত হতো । আজ ঠিক সেই অনুভুতিটা রিদার জন্য হচ্ছে... ধুর শালা কি যে ভাবি আমি !

আমি বললাম- চীফ ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, ম্যাচ দাও । বিড়ি ধরাবো । সে বেশ খুশি হয়েই ম্যাচ দিলো আমি একটা ধরালাম আর সে নিজে একটা ধরিয়ে আবার পেছনে চলে গেলো ।

রিদা- সিগারেট ধরিয়ে তার ধোঁয়ায় যা আড়াল করতে চাচ্ছেন তা কিন্তু আমি বুঝতে পারছি ?

আমি - কি বুঝতে পারলেন ?

রিদা - আপনার আশঙ্কা এবং ঘটতে পারে এমন কোন দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ার উপায় আপনার হাতে না থাকায় আপনার মস্তিষ্কে সৃষ্ট অসহায়ত্ব যা আপনি আড়াল করতে গিয়েই ধরা পড়লেন, আপনি যদি এই আড়াল করার চেষ্টাটা না করতেন তাহলে হয়তো ধরতে পারতাম না ।

আমি - আমার দুঃশ্চিন্তা কিন্তু আপনাকে নিয়ে। আপনি সাঁতার জানেনা সেটা আগে বললে আর কিছু না হলেও পাঁচ-সাতটা দুই লিটার পানির বোতল খালি করে সাথে নিয়ে আসতাম । রিদা - তারপর কি করতেন ওই বোতল গুলো আমার সাথে বেধে আমাকে বসিয়ে রাখতেন ?

আমি- না, ঠিক তা নয়, তবে বিপদ হলে কাজে তো আসতো তাই না ?

রিদা - আর আপনি কি করতেন ? ভাবেননি তাইতো ?

-সত্যি বলতেকি আমি অন্য সব সময় যেমন ধরুন, একবার আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের শশুরবাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম । সেখানে যেতে হলে তখন ছোট লঞ্চে পদ্মানদী পাড়ি দিতে হতো, তখন কিন্তু আমি মুখে কিছু না বললেও আমার ও আমার চাচাতো ভাই দুজনের জন্যেই আপদকালীন পরিস্থিতি সামলানোর পরিকল্পনা তৈরী করে রেখেছিলাম । কিন্তু এইবার আমি আমার নিজের জন্য কোন পরিকল্পনাই করিনি । এমন একটা ভাব যেন, কি আর হবে... আমি বললাম - আমি এখন এমন একটা মানসিক অবস্থায় আছি যে আমার না আছে কোন কিছু হারানোর ভয়, না আছে নতুন করে কোন কিছু পাওয়ার আশা ! আসমান আমার কাছে ছাদ আর জমিন হলো বিছানা । এরকম মানসিক অবস্থায় উপভোগ করার মতো কিছু বিষয়ও আছে, এই দৃষ্টিকোন থেকে পৃথিবীটাকে  দেখলে পৃথিবীর অন্য একটা রুপ দেখা যায় । সামনের ঘটনা গুলোকে বড্ড কৃত্তিম মনে হয় । নিজেকে মনেহয় চারপাশের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন একজন অবজারভার । মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক গুলোকে খুবই মেকি মনে হয় । এই অবস্থায় পৌছালে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্’র খুব নিকটে মনে হয় । যেন তিনি এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করে দিয়ে আমাকে বলছেন দেখ বান্দা দেখ কি জিনিস আমি বানিয়েছি ! আল্লাহ্’র এত নিকটে থাকলে নিজেকে নিয়ে কোন পরিকল্পনা করতে হয়না, তিনিই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী। তিনি যা পরিকল্পনা করে রেখেছেন তা ঘটবেই, এই পরিস্থিতিতে তাঁর নিখুঁত পরিকল্পনা সমূহ বাস্তবায়ীত হওয়ার দৃশ্য উপভোগ করাই শ্রেয় ।

রিদা - তাহলে আগে নিজেকে নিয়ে পরিকল্পনা করতেন কেন, তখন কি আল্লাহ'র থেকে দুরে ছিলেন ? আর আমাকে নিয়েই বা দুঃচিন্তা কেন, আমি কি আল্লাহ্'র নিকটে নই ?

আমি - আপনার প্রথম প্রশ্নটার উত্তর আমি আগেই দিয়েছি আপনি হয়তো খেয়াল করেননি, সেটা হলো আগের ও বর্তমান সময়ের পরিস্থিতির পরিবর্তন । আমি প্রথমে মনে করতাম যে আমি যেটা যেভাবে ভাববো সেটাই হবে কিন্তু আমি হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে কি হবে, কিভাবে হবে, কখন হবে সেটা নির্ধারনকারী আমি না, আল্লাহ্ । আর দ্বিতীয় প্রশ্নটার উত্তর একটু জটিল কিন্তু আমার ধারনা আপনি বুঝতে পারবেন । কারণ আপনার চিন্তার গন্ডি আর পাঁচটা সাধারন মেয়ের মতো সীমিত না, সীমাহীন। তাহলে উত্তরটা শোনেন,

[এরই মধ্যে মাঝীর সহকারী কি যেন নাম ছেলেটার ? হ্যা সেলিম, সেও আমাদের পাশে এসে বসেছে ।] তার চোখে মুখে কিছুটা বিশ্ময়ের ছাপ । সেরকমটাই হওয়ার কথা, কারণ রাত ১ টার সময় মুখে যত সংখ্যা বলা যায় তত টাকা ভাড়া চাওয়া মাত্র দিতে রাজি হওয়া দুজন যুবক যুবতি এরকম উদ্ভট ও কিছুটা অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলার জন্য নৌকায় উঠবে এটা সে আশা করেনি । তো চলুন উত্তরে বিষয়টাতে আশা যাক] আমি বলতে শুরু করলাম - আমি আসলে অদ্ভুত একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করি । আমি আগেই বলে ব্যাপারটা hypothetical, একান্তই আমার নিজের নিছক কল্পনা ।  আমি পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের মধ্যে আমাকে দেখার চেষ্টা করি। এই যেমন ধরেন সেলিম, আমাদের ক্যাপ্টেন শফিক, ওই ফার্মেসীর লোকটা আবার ওই চয়ের দোকানদার । একই মানুষ যেন ভিন্ন ভিন্ন রুপে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতে ।

তবে এই ধারনাটার পেছনে  আমি কোন যুক্তি দাড় করাতে পারিনা কারন অরিনের বরের মধ্যে আমি আমাকে দেখতে পাইনা, ও শালা একটা  NPC (Non-player character) ওইযে, গেইমের মধ্যে থাকেনা কিছু ক্যারেক্টর, আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা। প্রোগ্রাম অনুযায়ী একই কাজ করতে থাকে, প্রোগ্রামের বাইরে এরা কিছু করতে পারেনা এবং করা যেতে পারে তাও চিন্তা করতে পারেনা। অনেকটা ওইরকম। মানে একরকম বলতে পারেন আল্লাহ্ চিন্তা করার মতো বিশেষ ক্ষমতাটা সবাইকে দেননি আর যাদেরকে তিনি এই ক্ষমতাটা দিয়েছেন এই NPC (Non-player character) গুলো তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, এই চিন্তা করার ক্ষমতাওয়ালা মানুষ গুলো ওই চিন্তাশক্তিহীন মানুষ গুলোর জীবনধারাকে ম্যানুপুলেট করতে পারে বিভিন্ন ভাবে । এদের কোন ইন্ডিভিজুয়্যালিটি নেই, এরা একটা ভীড় আকারে থাকে ।

অরিন কিন্তু NPC (Non-player character) না তবে তার সোর্স কোড ইনফেক্টেড কখন যে ওর অজান্তেই ওর বান্ধবী মীম ওর সোর্স কোড ইনফেক্টেড করে ফেলেছে তা ও নিজেও জানেনা , ওর ক্ষেত্রে ওর বান্ধবী মীম একজন হ্যাকারের মতো পারফর্ম করেছে আর এই স্পেশাল প্রিভিলেজ সয়ং আল্লাহ মীম কে দিয়েছেন। এখন ও নিছকই একটা  NPC (Non-player character) । আমি জানতাম অরিন চিন্তাশক্তি সম্পন্ন, তবে ওর সোর্স কোড যে আল্লাহ্ দুর্বল করে তৈরী করেছেন সে তথ্য আমার কাছে ছিলো না অথবা অরিনও আগে থেকেই একটা NPC (Non-player character), আমিই আবেগের বসে ওকে চিন্তাশক্তি সম্পন্ন মনে করেছিলাম, এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।

[ সেলিম কিছুক্ষন মাথা চুলকে পেছনের দিকে চলে গেল]

আমি রিদাকে বললাম, সেলিম চলে গেলো কেন জানেন ? কারন  সে আমার কথা বুঝতে পারছেনা । তার মানে কিন্তু এই না যে সে NPC (Non-player character),  আমি জানি সে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটা নিয়ে ঠিকই চিন্তা করবে । হয়তো কোন এক শেষ বিকেলে মাছের হাটে ভীড় করে থাকা NPC (Non-player character) গুলোর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার কথা গুলো মেলানোর চেষ্টা করবে, তবে নৌকা থেকে নেমে যাওয়ার আগে তাকে আরেকবার বুঝিয়ে যেতে হবে যে NPC (Non-player character) জিনিসটা আসলে কি ? তাহলে NPC (Non-player character) এর সংখ্যা যেহেতু বেশি তাহলে প্রতিটা মানুষের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাওয়ার ধারণাটা ভুল। এখান থেকে শুরু হয় আমার মাল্টিভার্স এর ধাররনা। এটা প্রচলিত মাল্টিভার্স এর থিওরির মতো না। আমি কল্পনা করি এই মাল্টিভার্স এর সংখ্যা ইনফিনিট, এবং প্রত্যেকটা মাল্টিভার্স এ আমিই বিভিন্ন ক্যারেক্টার প্লে করছি আর আমি যা কল্পনা করি সেটা থেকেই আরেকটা ইউনিভার্স এর সৃষ্টি হয় এবং সেখানে সেটাই ঘটে যেটা আমি কল্পনা করি, আপনাকে নিয়ে আমার ভয়টা এখানেই কারণ আমি একবার আশঙ্কা করেছি এই দূর্ঘটনার । ব্যাপারটা যদিও আমি কল্পনা করেছি তেমন নয় কিন্তু তার পরেও একটা ভয় কাজ করছে কোন না কোন ইউনিভার্সে এই দূর্ঘটনা ঘটে না যায় ! এই বিভিন্ন ইউনিভার্সে কখনো কখনো বিচরণকরতে পারি স্বপ্নের মাধ্যমে । তবে আশার কথা হচ্ছে এই মাল্টিভার্সের ধারনাটা কেবলই আমার কল্পনা । আর আল্লাহ্’র সাথে আপনার  নৈকট্যের ব্যাপারটা একান্তই আপনার ও আল্লাহ’র মধ্যেকার বিষয়, সেটা আমার জানার কথা না !

রিদা - তাহলে আপনার মাল্টিভার্সের ধারণা অনুযায়ী কোননা কোন ইউনিভার্সে আপনি অরিনকে পাচ্ছেন, ব্যাপারটা কি সেরকম ?

আমি- অনেকটা সেরকমই কিন্তু সে ক্ষেত্রে হয় ওর বরের কোন একজিস্টেন্সই থাকবেনা অথবা ওই ইউনিভার্সে ওর বরকে আমার জায়গায় মানে আমার বর্তমান ক্যারেক্টার প্লে করতে হবে এটা বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। একারনেই এই ধারনাটাকে পুরোপুরি অমুলক বলতে পারেন।

রিদা - আপনার কথাবার্তা কিন্তু আমার চিন্তা ভাবনাকে ম্যানুপুলেট করছে । তার মানে আমিকি আপনার মতে NPC (Non-player character) ?

আমি- না, যদি তাই হতো তাহলে এই ম্যানুপুলেশনের ব্যাপারটা আপনি ধরতেই পারতেন না । যেহেতু ধরতে পেরেছেন তার মানে আপনার চিন্তাশক্তি এই vulnerability টাকে সঠিক ভাবে আইডেন্টিফাই করতে পেরেছে, সময় বুঝে সে নিজেকে ঠিকই ঝলিয়ে নিবে । আমি নৌকায় চিৎ হয়ে শুয়ে সম্পূর্ণ আলোক দুষণ মুক্ত রাতের আকাশের নক্ষত্ররাজির দৃশ্য দেখতে লাগলাম, রিদা নৌকার এক ধারে পা ঝুলিয়ে বসে আমার ওই উদ্ভট কথা গুলো বোঝার চেষ্টা করছে ও খেয়াল করেছে কিনা জানিনা যে আমি ওর কাপড়ের একটা অংশ বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছি । নৌকার ইঞ্জিন এখন বন্ধ, চাঁদের আলোয় আর নদীর বয়ে চলা স্রোতের কারনে সৃষ্ট পানির শব্দে অদ্ভুত একটা মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। সেই হাজার বছরের পুরনো রাতের কথা মনে পড়ছে ! রিদা- কী ভাবছেন ?

আমি - কিছুনা, তবে এই কথাটা পুরোপুরি সত্য না কারণ আমার মস্তিষ্ক সব সময় কিছুনা কিছু ভাবতেই থাকে, যখন আমি ঘুমাই তখনো, কখনো কখনো বুঝতে পারি যে কি ভাবছি  আবার কখনো কখনো কিছু বুঝতেই পারিনা যে কি হচ্ছে ওখানে. মানে আমার মস্তিষ্কে তখন আমার মনে হয় কেউ ফার্মওয়্যার আপগ্রেশন চলছে । আপগ্রেশন শেষ হওয়ার সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে অগনিত চিন্তা ভাবনা করার বিষয় বস্তু কিন্তু সেটা থাকবে কোড আকারে তারপর ওই  কোডকে ডিকোড করে শাব্দিক রুপ দিবো আমি এইরকম মনেহয় আমৃত্যু ননস্টপ চলতেই থাকবে। সেটা নিয়ে আমার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই । আমাদের সবার মস্তিষ্ক আছে কিন্তু সবার আমার মতো কল্পনার বিশাল একটা জগৎ নেই । আমি আমার মস্তিষ্কের প্রতেকটা নিউরন কে কাজে লাগিয়ে ওই জগৎটাকে তৈরি করবো । কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে আমি সেই জগৎটাকে কাউকে দেখাতে পারবোনা । বাদ দেন এসব আজগুবি কথা এখন ভাবুন আপনার হোস্টেলে আপনি কি কারণ দর্শাবেন কাল, না আজকে সকালে ?

রিদা-  ওসব আমার প্ল্যান করাই আছে । আপাতত ওটা নিয়ে কিছু ভাবতে চাচ্ছিনা । তবে প্রস্তুতি নিয়ে নিন কারন আগামী এক মাসে আপনার ভাষায় আপনার মস্তিষ্ক মানে প্রসেসর এর ওপর দিয়ে হিউজ ডেটা ট্রাফিক বয়ে যাবে । সব কিছু বুঝে করার সময় পাবেন না। তবে মনেহয় শেষে আপনার এই উদ্ভট ডেটা প্রসেসিং এর জন্য আরো একটা অক্সিলারি মেশিন পাবেন । আমি রিদার পুরো কথাটাই শুনেছি, এবং ভাবছি সামনের মাসটাতো রমজান মাস, কি হতে পারে ওই মাসে কিছুক্ষন আন্দাজ করার ব্যার্থ চেষ্টাকরে নিজেই মনে মনে বলরলাম , ধুর..এখানে চিন্তা করার মত বিশেষ কিছু নেই । ৪:১৫ বেজে গিয়েছে ! আমি মাঝিকে বললাম নৌকা ঘুরান  ভোর হয়ে আসছে ! তো সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রিদাকে ওর হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে আমি আমার ফ্ল্যাটে এসে শুয়ে পড়লাম, উদ্দেশ্য ঘুম । ওর শেষের দিকের কথাবার্তা গুলো যদিও আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে কিন্তু আমার ধারনা ব্যাপারটা খুব তাড়াতাড়িই ও আমার কাছে পরিষ্কার করবে অথবা সময়ের সাথে সাথে তা নিজে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাবে....

ইদানিং একটা বিষয় খেয়াল করছি, আমি সাধারণত কারো সাথেই খুব একটা কথাবার্তা বলিনা আর ফোনে আরো কম। তার ওপর অরিনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরতো খুব কাছের মানুষদের সাথেও যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে, ভালো লাগে না কথা বলতে। কিন্তু রিদা প্রায়ই ফোন করে, প্রথম দিকে ও দশটা কল দিলে হয়তো আটটাই ধরা হতো না। এর পেছনে আরেকটা বিশেষ কারণ ছিলো আমার ফোন সব সময়ই সাইলেন্ট থাকে। কিন্তু এই মেয়েটা সম্ভবত আমাকে কিছুটা হলেও বোঝে এবং এই যোগাযোগ বিভ্রাটের কারনে আমি তাকে কখনো বিরক্ত বা রাগান্বিত হতে দেখিনি তাছাড়া রিদা কখনো এর কারণও জিজ্ঞেস করেনা। কিন্তু এখন আমি নিজে থেকেই চেষ্টা করি যেন এই যোগাযোগ বিভ্রাটটা অন্তত ওর ক্ষেত্রে যেন না ঘটে। তো সেদিন ফোন করে বললো আমি যেন ওর সাথে দেখা করি, আমার ছোট উত্তর। আসছি, হাসপাতালের ক্যানটিনে গিয়ে ফোন করবো। তো আমি ক্যান্টিনে গিয়ে পৌছালাম । অপেক্ষা করতে হলোনা ও প্রায় সাথে সাথেই চলে আসলো । এই মেয়ে কে আমি অ্যাপ্রোন ছাড়া যে আমি খুব কম দেখেছি এটা আজকে বুঝতে পারলাম, কারন যখনই আমরা দেখা করতাম ওই জিনিসটা সব সময় ওর সাথেই থাকতো, হয় হাতে না হয় কাধে আজকে বিষয়টা নজরে এসেছে কারন আজকে অ্যাপ্রোনটা সাথে নেই । গাড়ো সবুজ রঙের জামাটায় দারুন মানিয়েছে ওকে । জামা বললাম কারন মেয়েদের জামার বিভিন্ন নাম থাকে এবং সেগুলোর নাম আমার জানা নেই ।

সে যাই হোক, রিদা এসে আমাকে বললো আজকে বাসায় যাবো, সেদিন তো আপনার চাচা [ অরিনের বাবাকে ] বললেনই যে আপনি উবার চালান। তাই ভাবলাম অ্যাপ না ঘেটে আপনাকেই ডাকি ।

আমি- উবার ডাকলেই ভালো করতেন, কারন  অন্য উবার ড্রাইভারকে তো আর কফি খাওয়াতে হতো না । রিদা গিয়ে কফি আনলো আর সিগারেট আমার কাছে সব সময়ই থাকে । আমি আজকে আলাদা মুডে আছি, মানে আমার যা খাওয়ার তা আগে থেকেই খেয়ে নিয়েছি, রোজ রোজ ওর সামনে ওইসব গিলতে ভালো লাগেনা । আসলে সত্যবলতে কি, ওসব আমার কখনোই ভালো লাগেনা, খুবই বিচ্ছিরি স্বাদ ওইসবের । তো আমি কফিটা হাতে নিয়ে সিগারেটটা ধরিয়ে সেকেন্ড সিটে গিয়ে বসলাম, মানে গাড়ি রিদা চালাবে। পৃথিবীতে হয়তো এই রিদাই একমাত্র মেয়ে যার গাড়িতে বসে সিগারেট ধরানোর ব্যাপারে কোন অবজেকশন নেই, সে দিব্বি গাড়ি চালাচ্ছে । ওদের বাসায় যেতে ২০/২৫ মিনিট সময় লাগলো, মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী দের এই বিষয়টা আমি বুঝিনা যে এদের বাসা কাছাকাছি থাকলেও এরা হোস্টেলে কেন থাকে ? যাক সে কথা, ও আমাকে ড্রইং রুমে বসিয়ে ও ভেতরে চলে গেলো । ওদের টিভিটা অ্যানড্রয়েড, আমার ফ্ল্যাটে টিভি নেই। আমি জিনিসটার কনফিগারেশন ঘাটাঘাটি করছিলাম। এরই মধ্যে ওর বাবা মা আসলেন উনাদেরকে আমি যেহেতু আগেথেকেই চিনি তাই কথাবার্তা শুরু করতে কোন জড়তায় পড়তে হলোনা, কিন্তু রিদা এসে বসলো আমার পাশে তখন আমি পড়লাম এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। রিদার বাবা আমাকে বললেন- তুমিতো এর আগেও আমাদের বাসায় এসেছো, তো তোমরা একজন আরেক জনকে চিনো তা আগে বলোনি তো ? আমি- আমি আগে যখন এসেছিলাম তখন ওর সাথে আমার পরিচয়...

আমি কথা শেষ করার আগেই রিদা ওর সাথে হাসাপাতালে কিভাবে আমার পরিচয় হলো তা খুলে বললো। কিন্তু আমার ধারণা ও আমাকে আগে থেকেই চিনে, মানে এর আগে যখন ওদের বাসায় এসেছি তখন থেকেই। রিদার বাবা আমাকে বললেন তোমার বাবা-মা এখন কোথায় আছেন ?

আমি- উনারা এখন যশোর সেনানিবাসে আছেন । তারপর তিনি আমার সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তাই চালিয়ে গেলেন। পরে দুপুরের খাবার খেয়ে আমি আমার বাসার দিকে রওনা দিলাম, রিদা আমার সাথে এসে গ্যারেজ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল আর যাওয়ার সময় বললো আজকে রাতে আপনার ফোনটা খোলা রাখবেন আর ফোন যেন সাইলেন্ট না থাকে। কিছু একটা ব্যাপার যে এখানে আছে তা উনার প্রথম প্রশ্নেই আমি বুঝতে পেরেছি । আমি আর ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলামনা, এখন সামনে কি ঘটবে তা নিয়ে ভবাতে ভালো লাগছেনা। যখন ঘটবে তখন দেখা যাবে। আমার বাসায় এসে ফোনটা চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত ১২ টা ১টার একবার আফিসে যাবো দেখবো প্রোজেক্টের কাজ কতদুর কি অবস্থা তারপর আবার বেরিয়ে যাবো টহল দিতে, মাঝে মাঝে নিজেকে পুরো ঢাকা শহরের নাইট গার্ড মনে হয়! প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে চার দিন এই ডিউটি করা হয়। আপনারা সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন তখন আমি আপনাদের শহরেরই অনুপ্রবেশ করে অলিগলিতে ঘুরে বেড়াই। কি একটা যেন খুজি কিন্তু খোজের শেষ হয়না....

তো ঘুম ভাঙলো রাত ৮ টায়, বাসা থেকে কল এসেছে মানে আম্মু কল করেছে। আম্মু যা বললো তার সারমর্ম হলো উনারা আগামীকাল ঢাকায় আসছেন এবং পরশু দিন আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন রিদাদের বাসায়। আর উনারা এসে থাকবেন কোথায় ? বড় আপুদের (চাচাতো বোন, আমরা দুইভাই) বাসায় !!! 

কারণ আমার ফ্লাটের যে অবস্থা করে রেখেছি আমি সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ফ্লাটের দরজায় এইবলে সতর্কবার্তা ঝুলিয়ে দেয়া যায় যে, সাবধান, প্রবেশ নিষেধ ভেতরে রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট মজুত করে রাখা আছে ।

আমি রিদা ফোন করে বললাম আপনাদের পুরো প্ল্যানটা আমি ঠিক ধরতেই পারছিনা, অনুগ্রকরে আপনি কি আপনার পরিকল্পনাটা আমাকে জানাবেন ?

রিদা - সেটা পরশুদিনই জানতে পারবেন । তবে আমার যতদুর ধারনা আপনি পুরো ব্যাপারটা খুব ভালো ভাবেই ধরতে পেরেছেন, যাক বাদ দেন । আমি একটু ব্যাস্ত । পরে কথা হচ্ছে ইনসা আল্লাহ্ । আমি যদিও ব্যাপারটাকিছুটা আগে থেকেই ধারনা করতে পেরেছি, কিন্তু সেটা ইচ্ছা পূর্বক আমলে নেই নি আর নিতে ইচ্ছেও করছেনা । তো দেখতে দেখতে পরশুদিন চলে এলো, রিদার নির্দেশে গাড়িটা সেভাবেই পরিষ্কার করেনিলাম। তারপর আমার বড় বোনের বাসা বনানী ডি.ও.এইচ.এস এ, ওখান থেকে সবাইকে নিয়ে এই ভেবে রওনা হলাম যে যা আছে কপালে দেখাযাবে সকালে, রিদাদের বাসার উদ্দেশ্য়ে। ওদের বাসায় পৌছালাম । এবার ওদের প্ল্যানটা আমার কছে পুরোপুরি পরিষ্কার হলো, মানে আমার ধারনাটা সঠিক ছিলো, আমার পরিবার রিদাকে দেখতে এসেছে, এবং এই বিশেষ পরিকল্পনাটা রিদার । তো তাদের কথাবার্তার মধ্যে রিদা আলাদা ভাবে আমাকে ডেকে নিয়ে সেদিন কার ছাপনো ফেইক বিয়ের কার্ডটার তারিখটা দেখতে বললো এবং তারিখটা মনেরাখতে বললো । এই জিনিসের সাথে তারিখ মনে রাখার কি সম্পর্ক ? বিষয়টা নিয়ে আর ভাবলামনা। এই আধাঘন্টার মধ্যে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো । আমার, মানে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো, আর বিয়ের তারিখটা আর ওই ফেইক বিয়ের কার্ডের তারিখটা সেইম [ ঈদ-উল-ফিতরের তৃতীয় দিন ]।

মানে চাচার বাসায় যে নাটক আমরা সাজিয়েছিলাম এবং তার আফটার-ম্যাথের ব্যাপারে যে আসঙ্কা করেছিলাম সেটা রিদা আগেই ধরে ফেলেছে এবং সেটা ম্যানেজ করার রাস্তা সে আগে থেকেই তৈরী করে রেখেছিলো। তো ওদের বাসা থেকে বের হওয়ার পর পরিবারের সবাইকে আপুদের বাসায় ড্রপ করে আমি আমার ফ্লাটে আসার আগে একটা চায়ের দোকানের সামনে গাড়ি দার করালাম । একটা সিগারেট ধরিয়ে, বসে বসে ভাবতে থাকলাম; কোথা থেকে কোথায়, কখন, কিভাবে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না !!! সবই আল্লাহ্’র পরিকল্পনা....আমি যখন রাত্রে বেলায় ঘুমাই তখন আমি স্বপ্নে বিভিন্ন অসাধারণ সুর আমার স্বপ্নে তৈরি হতো কিন্তু তার কিছু অপ্রাসঙ্গিক অর্থ আমি আগে তৈরি করতাম বা আমার মনেই তৈরি হতো কিন্তু সেটা ছিল অরিন কেন্দ্রিক যদিও তার ওর বিয়ে হয়ে যাওয়ার আগের দিক দিয়ে তখন আমার কাছে এই টিউন গুলো যে তৈরি হতো আমার মস্তিষ্কে এগুলো কেমন যেন ঠিক ম্যাচ করত না, রিদার আসার পর থেকে সেই টিউন গুলো কেন যেন ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে ম্যাচ করতে শুরু করেছে । এখন বাসাটা বদলাতেই হবে। একটা বড় ফ্ল্যাট দেখতে হবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফ্ল্যাট দেখা হয়ে গেল,ব্যাচেলরদের তো বাংলাদেশে ফ্ল্যাট ভাড়া পাওয়া খুবই কঠিন বিষয় কিন্তু কিন্তু রিদার কারণে ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেল। মিরপুর ডি.ও.এইচ.এস এর যে কর্নার দিয়ে মেট্রোরেলের লাইনটা গিয়েছে ওখানে আমরা একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম কারণ কারণ ফ্ল্যাট কেনার মত সামর্থ্য এখনো হয়নি । দেখতে দেখতে রমজান মাস চলে আসলো তবে এই রমজানের মধ্যে আলাদা ব্যাপারটা ছিল এই যে প্রত্যেকদিন ইফতারের পরে আগে আমি ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে যেতাম ওখানে আমার কিছু বন্ধু বান্ধব ছিল ও বন্ধুবান্ধব পড়লে ভুল হবে ওখানে একটা দোকান ছিল ওই দোকানে একটা ছেলে থাকতো তো ছেলেটার নাম পিয়াস তো পিয়াসের সাথে গল্প গুজব করার জন্য এই সাধারণত ওখানে যেতাম আর ওখানে আমার কিছু ছোট্ট বন্ধু ছিল ওরা রেল স্টেশনে থাকে। তবে এবারের রমজানে ইফতারের পর ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার অনুভূতিটাই ছিল আলাদা, রিদার তো ডিউটি থেকে হাসপাতালে প্রতিদিন হয়তো আসতে পারে না কিন্তু যখন আসে বেশ রাত পর্যন্ত আমরা ওখানে আড্ডা দেই এভাবে দেখতে দেখতে রমজান মাসটা পার হয়ে গেল কিভাবে সেটা আসলেই বুঝতে পারলাম না। তারপর চলে আসলো সেই দিনটা, ঈদের তৃতীয় দিন ।

আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল সেনাকুঞ্জে । অরিন, ওর হাজবেন্ট, ওর বাবা মা সবাইকেই দাওয়াত করা হয়েছিলো । সবাই এসেছিলেনও । এতো বড় পরিসরে অনুষ্ঠান হবে সেটা তিনারা ভাবতেও পারেননি ।

এখানে দুটো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল এক ছিল আমি চলে গিয়েছিলাম একেবারেই নরমাল ক্যাজুয়াল ড্রেসে যেটা খুবই অসুন্দর দেখাচ্ছিল অনুষ্ঠানে যদিও আমি অসুন্দর বা সুন্দরের যে মাপকাঠি সে মাপকাঠি আমার মাথায় কাজ করে না কিন্তু রিদা আমাকে দেখতে পেয়েই বুঝতে পারলাম যে পাগল আরেকটা উল্টোপাল্টা কাজ করে বসেছে তখন সে অতি শীঘ্রই আমার একজন কলিগকে ডাকল সে তিনি তাড়াতাড়ি বিয়ের উপযোগী পোশাকের ব্যবস্থা করে আনলেন । তো এভাবেই অনুষ্ঠানটা শেষ হলো। আর দ্বিতীয় বিপত্তিটা বাজল সেটা হল যে আমাদের বাড়ি হচ্ছে মেহেরপুর, তো এখন এত দূরে তো এত রাত্রে রওনা দেওয়া সম্ভব না এখন তাহলে কি করা যায় তো প্রথমে মুরুব্বীরা ঠিক করলো যে আমার ফ্ল্যাটে যাবেন । রিদার বাবা বললেন যে যে উনাদের বাসায় থাকার জন্য অ্যারেঞ্জমেন্ট করবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো যে আমরা সবাই রাত হয়ে গিয়েছে কোন ব্যাপার না আমরা সবাই মেহেরপুরেই যাবো আমাদের নিজ বাড়িতে। তো আমাদের গাড়িগুলো রওনা হলো আমাদের বাড়ি মেহেরপুর এর উদ্দেশ্যে ,

তো আমি সাধারণত আমার গাড়িটা কাউকে অন্য কাউকে চালাতে দেই না তাই আমার গাড়িতে শুধুমাত্র আমি আর রিদাই, ছিলাম কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর রিদা বলল যে ক্যাপ্টেনের শফিকের নাম্বারটা কি এখনো আপনার কাছে আছে আমি উত্তর দিলাম হ্যাঁ আমার কাছে আছে তো তখন ও বলল যে গাড়ি ঘুরান মাওয়ার দিকে !........ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ