তো আমার আগ্রহ ছিলো ওর ছোট ভাই ইয়াছিন এর প্রতি, ওকে একপ্রকার আমার শিষ্য বলা যেতে পারে। ১৫ তারিখে ওরা সবাই এলো৷ কিন্তু ওরা আসার পর, যে রাইসাকে আমি দেখলাম সে রাইসাকে আমি চিনতে পারলাম না, এ যেন অন্য কেউ। জীবনে প্রথম আমাকে কেউ গিফট দিলো, সেটা রাইসা ! একটা সুইস আর্মি নাইফ। ওর হাসিটা যেন কতটা স্নিগ্ধ ছিলো। আমি প্রথমে ব্যাপারটা পাত্তা দিতে না চাইলেও কেন যেন ওর হাসিটা দেখতে ইচ্ছে করছিলো, ওর কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছিলো। একটা আকর্ষণ অনুভব করছিলাম। তারপর শুরু হলো ওকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা । আমরা ঘুরতাম আমার সাইকেলে । ওদরকে নিয়ে ঘোরা হলো মহস্থানগড়ে, তো ওদের আসার তৃতীয় দিন সবা্রই ঠিক করলো বগুড়া শহরে অবস্থিত মোহাম্মদ আলি প্যালেস যা (নবাব বাড়ি নামে পরিচিত) ওখানে যাবে । কিন্তু ওখানে এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি তাই সেখানে আমার দেখার মতো নতুন কিছু নেই তাই আমি ঠিক করলাম আমি যাবোনা, সবাইকে বলেও দিলাম। তো পর দিন সবাই তৈরী হয়ে সকালের দিকে বেরিয়ে গেল নবাব বাড়ির উদ্দেশ্যে, বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুধু আম্মু আমাকে বললো দরজাটা লাগিয়ে দিতে, আমি আমার ঘরে থেকেই বললাম তুমি ভিড়িয়ে দিয়ে যাও আমি লক করে দিবো। আমি তখন একটা পুরোনো নষ্ট মোবাইলের মাদারবোর্ড নিয়ে কিছু একটা করছিলাম । হঠাৎ ও আমার তথাকথিত ল্যাবে (রুমে) আসলো । আমি এটা জানতামনা যে ও যায়নি তাই আমি বেশ চমকে গিযে বললাম তুমি যাওনি ?ও বললো, না ওরকম পুরাতন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে আমার ভালো লাগে না । আমি কিছু বলার আগেই ও আমার খুব বেশই কাছে চলে আসলো, আমাদের মধ্যে কেটে গেল কিছু ঘনিষ্ট মুহুর্ত । আসলে ভালো সময় গুলো খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। ওদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেল৷ তারপর প্রায়ই আমাদের কথা হতো।।
দিনটা ছিলো ২৩ জুলাই ২০১২ একটা চায়ের দোকানে কয়েকজন বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন ওর একটা ফোন আসে। ও সরাসরি বললো "এনাম, আমি প্রেগন্যান্ট"। ব্যাপারটা প্রসেস করতে আমার ব্রেন কিছুটা সময় নিলো, কিন্তু কতটা আনন্দিত আমি ছিলাম তা লিখে প্রকাশ করা যাবেনা তবে ভীতি যে ছিলোনা তা নয়। আমি শুধু বললাম " আমি আছিতো, আর নিজের যত্ন নিও " ওর একটা পরীক্ষা চলছিল তখন এবং যথেষ্ট অসুস্থও ছিলো, একদিন কলেজে যাওয়ার পথে মাথা ঘুরে পড়ে যায় তখন ওর বান্ধবীরা ওকে বাসায় পৌঁছে দেয় এবং আমাকে ফোনে জানায়। এবং ওই দিনই আমি ঢাকায় রওনা দেই।
ওদের বাসায় যেতে আমার কোন বাঁঁধা ছিলোনা আর এরকম না বলে কয়ে হুটহাট আমি প্রায়ই যেতাম। তো ও যখন পরীক্ষা দিতে যেত তখন আমি ওর কলেজের বাইরে বসে থাকতাম। এরই মধ্যে একদিন চায়ের দোকনে বসে আছি তখন ওর দুজন বান্ধবী এসে আমাকে বললো আমাকে ওদের প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ডেকেছেন আর যেতে যেতে বললো যে ও পরক্ষিার হলে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে আর বমি করে একাকার অবস্থা । ( প্রিন্সিপাল স্যারকে ওর বান্ধবীরা বরেছিলো আমার কথা যে আমাকে আশেপাশেই পাওয়া যেতে পারে)
প্রিস্নিপাল স্যার আমাকে ওর অবস্থা সম্পর্কে বললেন আর তিনি যে আমাকে বিশ্বাস করতে পারলেননা তা আমি বুঝতে পারলাম । তিনি আমাকে আমার ফোন থেকে রাইসার বাবাকে ফোন করতে বললেন । আমি ফোন করে আঙ্কেলকে ওর অসুস্থতার কথা জানালে তিনি প্রিস্নিপাল স্যারকে বললেন রাইসাকে আমার সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিতে । আমি একটা রিক্সাতে ওকে নিয়ে ওদের বাসার দিকে রওনা দিলাম, ও এতটাই অসুস্থ ছিলো যে মাথা সোজা রাখতে পারছিলো না । আমি ওর মাথাটা আমার কাঁধে নিযে নিলাম । এভাবে কিছুদুর যাওয়ার পর একটা ফার্মেসীতে গিয়ে ওর ব্লাড প্রেশার অ্যাবনরমাল। তো আমি ওকে বাসায় যেতে যেতে বললাম যে এই বিষয়টাতো বাসায় জানাতে হবে নাহলেতো যে কোন সময় বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে । বলতে গেলে এই বিষয়টাতেই জীবনে প্রথম ও শেষবার আমার সাথে একমত হলো ।
তো বাসায় যাওয়ার পরে আমি ওকে বললাম ব্যাপারটা ও ওর বাবা-মাকে জানাবে নাকি বলবো ? ও আমাকে তখনকার মতো যেতে বললো, ও কিছুক্ষন বিশ্রাম নিবে আর বললো যে ব্যাপারটা ওই জানাবে। সন্ধ্যার দিকে ও ওর বাবা-মা কে ব্যাপারটা জানালো তাতে ওর বাবা প্রচন্ড রেগে গেলো, তাকে আমি এতোটা রাগতে কখনো দেখিনি । ওদের বাসায় তখন কনস্ট্রাকসনের কাজ চলছিলো । ওর বাবা যেখানে বসেছিলো সেখানে রাখাছিলো একটা স্টিলের পাইপ । উনি রাগের মাথায় সেটা দিয়ে ওকে আঘাত করতে গেলেন । আমি দেখলাম এই অবস্থায় ও এমনিতেই দাড়াতে পারছেনা তার ওপর এমন কিছু হলে ও হযতো বাঁচবেই না । আমি ঠেকাতে গেলাম, পরিপ্রেক্ষিতে আঘাতটা লাগলো আমার মাথায় । জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো জ্ঞান হারালাম, জ্ঞান হারানোর আগে চোখের সামনে ওর মুখটা ঝাপসা হয়ে আসলো ।
আমার জ্ঞান ফিরলো তিন দিন পর, চোখ খুলেই ওকে দেখতে পেলাম । ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুই তিন দিন কিছু খায়নি। ততক্ষনে আমার বাসার সবাইও ব্যাপারটা জেনে গিয়েছে। তো আরো একদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বাসায় ফিরলাম। তখন রাইসার বাবা আমাদের বললেন যে এতো দুর যখন নিজেরা নিজেরাই সিন্ধান্ত নিতে পেরেছো আশাকরি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তগুলোও তোমরা নিজেরাই নিতে পারবে। রাইসার আত্মসম্মান বোধে কথাটা আঘাত করে এবং ওই দিনই আমরা ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি।
মাত্র ১৩৮০ টাকা নিয়ে চলে আসি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে । কারন ঢাকায় তো থাকার যায়গা নেই বা কাউকে চিনিওনা। কিন্তু বগুড়াতে আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব আছে, তাই বগুড়া যাবো । কমলাপুর রেলেওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯ টায় মানে সারা রাত স্টেশনে কাটাতে হবে । ওদিকে আমরা রাইসাদের বাসা থেকে বের হয়েছি শেষ বিকেলের দিকে । কাউন্টারে গিয়ে টিকেট পেলামনা, ব্লাকে প্রায় তিন গুন দামে টিকেট কিনতে হলো । টিকেট কিনে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করতে লাগলাম । এবং ধীরে ধীরে রাত বাড়ার সাথে সাথে আমার আবার জ্বর বাড়তে লাগলো, ভুলভাল দেখতে শুরু করলাম। রাত সাড়ে বারোটা কি সাড়ে বারোটা নাগাদ দুটো লোক এসে ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আপা ভাইয়ার কি হয়েছে? কোথায় যাবেন? সকালের আগেতো কোন ট্রেন নেই, থাকার কোন জায়গা লাগবে কি না?....
আমি সাহায্যের আশায় কোন রকম চোখ খুলে দেখার পর স্টেশনের আলোয় লোক দুটোর নেশাগ্রস্ত লাল বর্ন ধারণকৃত চোখ দেখে লোক দুটোর উদ্দেশ্য বুঝতে আমার অসুস্থ মস্তিষ্ককে বিশেষ বেগ পেতে হলো না। বিপদটা আঁচ করতে পারলাম। জীবনে ওইবারই প্রথম সম্ভবত পুলিশের একজন সদস্যকে দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। আমি উনাকে ডাকলাম, আর সাথে সাথেই লোক দুটো "আইজ-কাইল মানুষের উপকার করতে চাইতে নাই" বলতে বলতে অন্যদিকে যেতে লাগলো।
পুলিশ সদস্য খালি ওদের দিকে চোখ গরম করে একবার ওদের দিকে একবার তাকালো উনাকে সব ঘটনা বলার পর উনি বললেন প্লাটফর্ম টা আমাদের জন্য নিরাপদ না, উনি আমাদের প্লাটফর্মে ডোকার পথে যে বসার জায়গা আছে সেখানে নিয়ে গেলেন আর তার ফোন নম্বর দিয়ে বললেন কোন অসুবিধা হলে জানাতে। আমি এতটাই দূর্বল ছিলাম যে ওর কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেলাম। আমার ঘুম ভাঙলো সকাল সাড়ে আটটার দিকে। ঘুম ভাঙার পর দেখি রাইসা তখনও জেগে আছে, খুব মায়া হচ্ছিল ওর জন্য। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও কিছু খাবে কি না। না, কিছুই খেলোনা। সকাল ১০টার সময় ট্রেন ছাড়লো।
তারপর ভাবতে শুরু করলাম কোন বন্ধু হেল্প করতে পারে ।আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশী না । কয়েকজন কে ফোন করলাম, নাহ্ কোন লাভ হলোনা । অবশেষে আমার এক ক্লাসমেট আরিফকে ফোন করলাম । ও আমার তেমন ক্লোজ ছিলোনা কিন্তু ওইযে আমার এতো উপকারে আসবে তা কখনো কল্পনাও করিনি । আরিফ ফোনে বললো তুই কোন চিন্তা করিসনা । আমি আম্মুকে বলে সব ম্যানেজ করে রাখছি আর আমি তোদের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করবো । আর তার সাথে সাথে ট্রেন কখন বগুড়া ধরবে তা জেনে নিলো । ট্রেন লেট হওয়ার দরুন সন্ধ্যা নাগাদ আমরা বগুড়া পৌছুলাম । ওখানে আরিফ আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলো । আরিফ আমাদের দেখে বললো শেষ খাওয়া-দাওয়া করেছিস কবে? দেখেতো জম্বির মতো লাগছে। চল কোথাও গিয়ে আগে মানুষ হ আর কিছু খা। আমরা "আজিজুল হক কলেজের দিকের একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে ফ্রেস হয়ে কিছু খেলাম, রাইসা প্রায় কিছুই খেতে পারলোনা। খালি আমার কাঁধে মাথা রেখে চোখ৷ বুজে রইলো।।
তারপর আমরা সি.এন.জি অটোরিকশায় আরিফ দের বাসায় গেলাম। আরিফের মা রাইসাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে নিলো। এমন দৃশ্য বা ঘটনা আমার কাছে নতুন নয় কারন আমি বরাবরই একটু ভবঘুরে টাইপের লোক। আমি প্রায়শই মনের খেয়াল খুশি মতো বাড়ি থেকে এদিক সেদিক চলে যেতাম। রক্তের সম্পর্কের নয় কিন্তু তারচেয়েও আপন এমন আত্মীয়ের সংখ্যা আমার নেহাত কম নয়। আমার এদেরকেই প্রকৃত আত্মীয় মনে হয়, কারণ এরা স্বার্থ খোঁজেনা। এদের মধ্যে থাকেনা কোন প্রতিযোগিতা, আবার খোটা দিয়ে কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতেও আসেনা। এদের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয় পথে !
আরিফের বাবা সিভিল ডিফেন্সে চাকরী করতেন । তিনি আসলেন বেশ রাতে । পরের দিন সকালে নাস্তার সময় উনি বলেলেন তোমরাকি বিয়ে করেছ ? আমি বললাম না। উনি বললেন করতে হবে । আজ রাতেই আমি ব্যাবস্থা করছি । নাস্তা শেষে আরিফকে বললাম আমাকেতো কিছু একটা করতে হবে এই সময যথেষ্ট টাকা পয়সার দরকার হবে । আরিফ বললো সেটা নিয়ে ভাবিসনা আমি আছি তো । আমি বললাম তুই আর কত করবি তাছাড়া এভাবে হয় নাকি ?
সেদিন রাতে আরিফের বাবা বললেন বিয়ের জন্য তো কাগজ পত্রের দরকারে হবে সেগুলো কি তোমাদের কাছে আছে ? আমি বললাম কাগজতো নাই । তখন রাইসা আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, আমার কাগজপত্র আমি সাথে এনেছি । আমি নিজে গোছালো সে কথা বলবো না কিন্তু কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জনিত জটিলতা আমি কখনো বাধাইনি। কিন্তু ও যেভাবে বাসা থেকে এসেছে সেভাবে আমি বাসা থেকে আসলে আমার কাগজপত্রের কথা ভুল হয়ে গেলে অবাক হতাম না৷ আমার বিশ্বাস এই মেয়ের কাছে আপদকালীন সময় সামলানোর জন্য যথেষ্ট টাকাও আছে। কারণ ওই পরিস্থিতিতে যার কাগজপত্রের কথা মাথায় থাকতে পারে তার মাথায় টাকার সংকটের চিন্তা-ভাবনা না আসাটাই অস্বাভাবিক ।
সে যাই হোক এখন সমস্যা হলো আমার কাগজপত্র নিয়ে । যদিও আমি যেখানে আছি সেখান থেকে আমার বাসার অটো ভাড়া ২০ টাকা কিন্তু সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবেশের কথা কল্পনা করাও ভীতিকর তাছাড়া আমার মিশন ইম্পসিবল এর টম ক্রুজ হওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু তাতে কি হয়েছে, কাগজ নাই মাগার কাগজে লেখা তথ্য তো মাথায় আছে । হাতের সামনে কম্পিউটার থাকলে পৃথিবীতে এমন কোন ডকুমেন্ট নাই যে আমি ডুপ্লিকেট বানাতে পারবোনা।
আমি আঙ্কেলকে বললাম কাগজের ব্যাবস্থা কাল সকাল নাগাদ হয়ে যাবে। তো পরের দিন দুপুরের মধ্যে আমি সব কাগজ তৈরী করে ফেললাম । এটাকে ডুপ্লিকেট নকল না বলে না বলে কালার ফটো কপিও বলতে পারেন। তার পরের সেদন রাতে আমাদের বিয়ের কাজটাও সম্পূর্ন হলো। আমার এক নানা আছে । ট্রাকওয়ালা নানা , ওনার সাথেও আমার পরিচয় রাস্তায় উনি রংপুরে থাকেন । আমি উনার সাথে যোগাযোগ করলাম । একটা কাজ তো যোগাড় করতেই হবে । কিন্তু খালি আমি পরিকল্পনা করলেই তো হবে না, নানাকেও রাজি করাতে হবে । অনেক কষ্টে ও বহু শর্ত সাপেক্ষে রাজি হলেন, তার মধ্যে প্রধান শর্ত হলো রাইসাকে নিয়ে আমাকে নানাদের বাসায় থাকতে হবে ।
তো মেনে নিলাম সব শর্ত । হেলপার হিসেবে নিয়োগ পেলাম । আমি আসলে মুখে বলা হেলপার ছিলাম, হেলপারের কোন কাজই নানা আমাকে দিয়ে করাতেন না । আমি অধিকাংশ সময়ই বইপত্র নিয়ে টাটা ১৬১৩ মডেলের ট্রাকের কেবিনে সিটের পিছনে যে একটা লম্বা গদি থাকে ওখানে পড়ে থাতাম । অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাটা আমরা বন্ধ করিনি । রাইসার তো স্বপ্ন যে ও ডাক্তার হবে । এদিকে আমি ড্রাইভিংটাও শিখে ফেললাম কিছুটা । নানা আমাদের থাকার জন্য যে ঘরটা দিয়েছিলেন সেই ঘরের জানালা দিয়ে সরাসরি চাঁদ দেখা যেত । যখন রাইসা পাশে ঘুমিয়ে থাকতো তখন ওই চাঁদের দিকে তাকিয়ে কত কিছু কল্পনা করেছি তার হিসাব নাই। এরই মধ্যে আমাদের এই.এস.সি পরীক্ষার সময় এসে পড়লো । বহু চড়াই-উতরাই পার করে আমরা দুজনাই পরীক্ষা দিলাম । আমার রেজাল্ট বরাবরের মতোই এভারেজ হলো কিন্তু রাইসার রেজাল্ট খুব ভালো হয়ে ছিলো ।
তারপর ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে রু করলো, আর আমি ? আমি আমার মতোই চলতে থাকলাম, আমার অতো বড়ো টার্গেট নাই, সাইকোলজি সাবজেক্ট নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম । ক্লাস করার সুযোগ আমার খুব কমই হতো । কারন রাতের পর রাত ট্রাকে থাকতাম । এভাবে চোখেরে পলকে কেটে গেল ৯ মাস ১৭ দিন ।
তখন আমি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জ্যামে আটকে আছি, হঠৎ ফোন আসলো, তখন বাজছে রাত বা ভোর 8টা যাই বলেন রিসিভ করার সাখে সাথেই আমি নানাকে বললাম ”নানা আমাকে এখনই যেতে হবে, নানা বললো কই যাবি ?
আমি শুধু বললাম , বগুড়া, রাইসার কাছে । কিন্তু তখন আমার আর রাইসার মাঝে হিমালয়-সম ট্রাফিক জ্যাম। আল্লাহ্ যে আমাকে ভালোবাসেন সেটা যেনো সেদিন প্রতক্ষ্য করলাম, আমি যখন অস্থির হয়ে এদিক সেদিক করছি যে কিভাবে বগুড়া পৌঁছাবো । তখন যেন আল্লাহ্ ‘র পাঠানো ফেরেস্তা রুপে এগিয়ে আসলো একজন মোটর সাইকেল ওয়ালা ভাই. সব শোনার পর আমাকে বললো আপনি বাইকে ওঠেন আপনাকে বগুড়ায় পৈৗছানোর দ্বায়ীত্ব আল্লাহ্ উছিলাকরেই মনে হয় আমাকে পাঠিয়েছেন, নাহলে আজকে আমার বাইক নিয়ে বের হওয়ার কথা ছিলোনা ।
যখন বগুড়ায় পৌছুঁলাম , বাইক থেকে নেমেই রিসিপসনে জিজ্ঞেস করেই ছুট দিলাম OT'র দিকে, না ওটিতে রাইসানেই ! ওকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । ২১ মে, রাইসা আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও মুল্যবান উপহার, “নাজনীন নিহার অরনি“ আমার মেয়ে , এই সৌন্দর্যের স্কেলের সর্বোত্তম এর পরে আর কোন সৈৗন্দর্য নেই । আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাইরে আসলাম আজান দিতে, আমার মেয়েকে আনার সময় রাইসার মোবাইলটাও সাথে চলে এসেছে খেয়াল করিনি তো একটু পরেই টুপ করে, রাইসার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসলো ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পেয়েছে । ওদিকে আবার দেখছি আমার ও রাইসার বাবা-মা ওর কেবিনে, নাতনীকে পেয়ে খুশির অন্ত: নেই ।
ফিরে আসলাম সেই মেটার বাইকওয়ালা ভাইয়ের কাছে. তিন বললেন দেখলেন ভাই আল্লাহ্ যখন দেন তখন তিনি দিতে কার্পন্য করেন না । বলেই তিনি বাইক স্টার্ট করে চলে গেলেন । আমি উনাকে টাকা দিতে চাইনি, কারন আমি জানি উনি নিবেন না....
WRITTEN BY TANYM BARAKAH
MAY 9, 2022
0 মন্তব্যসমূহ