অনুভুতি - ১


 


 আমি এনাম। দুইটা ব্যাবসা শুরুকরার চেষ্টা করছি । না কোন দোকান খুলে বসিনি, সে ধৈর্য আমার নাই । ব্যাবসাটা অনলাইন ভিত্তিক, মানে চেষ্টাটা চেষ্টা পর্যন্তই আছে । ওয়েব সাইট তৈরী করেছি তবে কোন ইভেস্ট করিনি, কোথা থেকে করবো সেটাও বিস্তর চিন্তার বিষয় ।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যখন ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলাম , শখের বসে কিনে ছিলাম একটা গাড়ি । আমার সাহায় সম্পত্তি বলতে এগুলোই । গাড়ি আছে তো কি হয়েছে বাড়ি কিন্তু নেই । থাকতাম একটা মেসে, গাড়িটা একটা গ্যারেজে মাসিক দুইহাজার টাকা ভাড়ায় রাখতাম । সেনাবাহিনীর চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছি, ওই ডিসিপ্লিন আমার সহ্য হয়নি। আর কর্পোরেট, শালাদের আমি বলি ডমেস্টিক অ্যানিমেল । ইয়েস বসের বাচ্চারা সব ! তো ওপরের বর্ননা থেকে আমার একটা পরিচয় বের করে নিন । আর হ্যা আমার একটা বিশেষ গুন বা দোষ আছে, আমি কোন জায়গায় গেলে সে জায়গায় বিশেষ কিছু একটা অনুভব করতে পারি । অনুভুতিটা ঠিক লিখে প্রকাশ করার মতো না । তারপরেও চেষ্টা করা যাক । যেমন ধরুন কোথাও গেলে বুকের পাজরের হাড় গুলো যেখানে বাঁক নিয়ে মেরুদন্ডের দিকে চলে গিয়েছে, ধরুন পাজরেই আর ঘাড়ের নিম্ন ভাগে গরম অনুভুতি হতে থাকবে অনুভুতিটা অস্বস্তিকর । এটা নেতিবাচক কিছুর আভাস, যা খালি চোখে দেখা যায় না । যা সবাই অনুভব করতে পারেনা বা পৃখিবীতে দ্বিতীয় কেউ পারে কিনা জানিনা । উদাহরন সরুপ একটা ঘটনা বালি, ২০১৪/১৫ সালের দিকের কথা । বাবার চাকরি সুবাদে তখন চট্টগ্রামে থাকতাম । বি.এম.এ (বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির)’র সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইন । স্থানীয় লোকজন বলে ওই লাইনের বিশেষ একটা জায়গা ভালোনা, ওই রেল লাইনের খুব জোর ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার অংশ । তবে কথাটা এতোটাও প্রচলিত না যে রাতের বেলা ওই অংশ দিয়ে কেউ যাতায়াত করবে না । দিনের মতোই রাতও ওখানে স্বাভাবিক । তবে যদি কোন দূর্ঘটনা বা আত্মহত্যার (যদিও সেটাও একটা দুর্ঘটনাই বটে) ঘটনা ঘটে তবে চোখবন্ধ করে বলে দেওয়া যায় যে তা ওই ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই ঘটেছে । আমি আর আমার আরেক বন্ধু হাবিব রেল লাইনের ওই জায়গাটাতেই আড্ডা দিতাম । কখনো আমি একা গিয়েও বসে থাকতাম, শুধু আমি বা আমরাই না মানুষ সাধারণত ওই জায়গাটাতেই বসতো । যেটা দুর্ঘটনা ঘটার অন্যতম বৈজ্ঞানিক কারন । তো ওখানে বি.এম.এ গেইটের রাস্তা থেকে এই ৭০-৮০ গজ দুরে একটা ১৫ বা ২০ ফুট রেলওয়ে কালভার্ট  আছে । এক দিন শুক্রবার বিকালে ওদিক দিয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম জুম্মার নামাজের আগদিয়ে একজন নির্মান শ্রমিক খুব বিশ্রী ভাবে রেলে কাটা পড়ে মারা গিয়েছে । রেল পুলিশ এসে মৃতদেহ বললে ভুল হবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন মাংসের দলা গুলো কুড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে । কৌতুহল হলো, এগিয়ে গেলাম দূর্ঘটনাস্থলে । সব স্বাভাবিক, লোকজন চলাচল করছে তবে ওই জায়গাটাকে একটু এড়িয়ে । ভয় পেয়ে না, কারণ ওখানে তখন রক্ত দুপুরের রোদে শুকিয়ে  যে বোটকা আঁশটে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । ততে ঘটনার কথা জানা থাকলে যে কারো পেটে পাক দিবে, তবে আমি ওদের দলের অন্তর্ভুক্ত নই । এগিয়ে গেলাম সেচ্ছায় তদন্ত করতে (মানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আর কি)। লাইনে লেগে থাক অতি ক্ষুদ্র যা শুধু রেল পুলিশ কেন সবারই চোখ এড়িয়েছে এরকম এককুচি মাংসের টুকরা ও পাথরে লেগে থাকা শুকলো কালচে লাল রক্ত ও এক জোড়া বহুল ব্যাবহৃত রবারের স্যান্ডেল পড়ে ছিলো । তখন আমার একটা নোকিয়া এন ৭৩ মোবাইল ছিলো তা দিয়ে ছবি তুলে নিলাম । স্যান্ডেল জোড়া কুড়িয়ে আনতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু কেন যানি আনলাম না। মনে একটা খটকাও লেগেছিলো, ওখানকার লোকজনের ভাষ্যমতে ওই নির্মান শ্রমিক নাকি রেললাইনে কানে ইয়ার ফোন গুজে বসে ছিল, আর কাটা পড়েছিল ধীর গতিতে চলা মালবাহী ট্রেনের তলায় । কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এটা যে, দুপুর ১টা দেড়টায় চট্টগ্রামের মতো অতি বিষুবীয় অঞ্চলের ছায়াহীন উত্তপ্ত পাথর ও লোহার লাইনে একটা মানুষ কিভাবে কানে ইয়ারফোন গুজে বসে থাকতে পারে । আমি যখন ওখানে গিয়েছি তখন বিকেলের শেষ ভাগ, এমনকি তখনও রেললাইনের উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছে । তখন হয়েছিলো সেই অনুভুতিটা, পাজরে আর ঘাড়ে তীব্র উত্তাপ (আমি প্রেশারের রোগী না)। আরেকটা অনুভুতি একটু অন্য রকম, এটা অনেকটা কানে তালা লাগার মধো। অনেকটা লো ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ একটানা শুনলে যেমন লাগে তেমন । যেন আশে পাশে এমন কিছু আছে যে বা যা কিচ্ছু বলতে চায়না, কোন তরঙ্গই সে উৎপন্ন করতে চায় না যেটা আমি অনুভব করছি সেই তরঙ্গ তার থেকে তার অত্যন্ত অনিচ্ছায় উৎপন্ন হচ্ছে এবং সে সেখানে আমার উপস্তিতি একেবারেই পছন্দ করছে না কিন্তু কিছু করতেও পারছে না, সে যেন চরম শৃঙ্খলিত, স্থীর কিন্তু যেকোন সময় ভেঙে ফেলবে সেই শিকল, বিস্ফোরনের সকল শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে আমার , আমাদের ওপর কিন্তু কিছু করতে পারবেনা আবার সমস্ত শক্তি হারিয়ে আবার, শৃঙ্খলিত হয়ে স্থীর হয়ে যাবে । আপনাদের  ক্ষেত্রে ব্যাপার টা অনেকটা এমন হবে যেন হঠাৎ কোথাও কিছু হলো যা মোটেই ইতিবাচক না, কারো হয়তো মনে হবে কোন অপন জনের কিছু হলোনাতো ! ভয় পাবেন না কারো কিচ্ছু হয়নি, সব ঠিক আছে । এই অনুভুতিটা ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের কিছু অংশে অনুভুত হয়, বিশেষ করে এয়ারপোর্ট রোড বরে পরিচিত অংশ তাছাড়া বগুড়ায় ঢাকা-রংপুর হাইওয়ের রাণীরহাট-ফুলতলা একটা অংশে আমার অনুভুত হয়েছে। আর তৃতীয় অনুভুতিটা হলো প্রথমটার ঠিক উল্টো কিছুটা মধ্যমটার মতো, যেন শীতল একটা শুভ্র আলোক আমার কাঁধে পাজরে স্পর্শ করছে । এটারও একটা উদাহরন আছে, আমি তখন ঢাকায় । আমি যেখানেই থাকি আমার বন্ধুর সংখ্যা বেশি থাকেনা । এই খুব জোর জন তিনেক। আর আমি একলা বা বন্ধুর সাথেই হোক, নির্জন স্থানে থাকতে ভালোবাসি । তেমনি একটা জায়গা হলো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন, পাবলিক প্লেস কিন্তু অনেকটাই নির্জন, বিশেষ করে রাতে । তো আমার এক বন্ধুর সাথে রেলস্টেশনের উত্তর-পূর্ব দিকের শেষ দিকের একটা জয়াগায় বসে আছি, কি একটা বিষয় নিয়ে যেন গল্প করছিলাম আর মাঝে মধ্যে জ্বালাচ্ছিলাম দু-একটা সিগারেট। হঠাৎ এক মুরুব্বী চাচা এসে জীজ্ঞেস করলেন এটা কি বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন কিনা। আমি বললাম না, সেটা এর পরের স্টেশন । বেশীদূর না কিন্তু ঠিক হাটা পথও না । আমি বললাম চাচা আপনি এই স্টেশনের উল্টোদিকের কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনে খেকে বাসে ওঠেন নাহলে পরের ট্রেন ধরতে পারবেন না ওই ইন্টারসিটি ট্রেন এই স্টেশনে দাড়ায়না । তিনি বললেন তাঁর কাছে বাস ভাড়া নেই । আমি আর আমার বন্ধু পড়লাম বিপদে, আমাদের সাথে গাড়ি থাকলেও তাতে ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে আবার সেখান থেকে ঘুরে মেসে যাওয়ার মত জ্বালানী ছিলোনা। আবার ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও ছিলো না । তো ভাবলাম চাচার সাথে গিয়ে কোন বাসে তুলেদিয়ে বাসের হেলপার কে রিকুয়েস্ট করবো । কিন্তু চাচা রাজি হলেন না । বললেন তিনি হেটেই যাবেন । আমি আর আমার বন্ধু বেশ অবাক হলাম। চাচা এতক্ষন পরে বললেন আমরা তাকে কোন টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারবো কিনা । আমি মনে করলাম হয়তো কোন ভবঘুরে ভিক্ষুক । যদিও তার পোষাক দেখে তা মনে হচ্ছিলো না আর তার কাছথেকে অদ্ভুত অপার্থিব একটা সুগন্ধ আসছিলো । আমার কেন জানি মনে হলো তিনি আমার মনের ভাবটা বুঝতে পারছেন এবং তিনি এটাও জানেন যে আমার কাছে কোন টাকাই নেই । আমি আমার বন্ধুকে বললাম যে সিগারেট নেওয়ার পর ওর কাছে আর কোন টাকা অবশিষ্ট আছে কি না ? ও মানিব্যাগ ঘেটে পাঁচ টাকার একটা নোট বার করে দিলো । আমি তা হতে নিয়ে চাচাকে দিলাম । তিনি এই মাত্র পাঁচ টাকা পেযেই যার পর নাই খুশি হলেন । তারপর আমাকে হাত বাড়াতে বললেন, আমি হাত বাড়ালে তিনি হাতে একটা আতরের শিশি থেকে প্রথকে আমার হাতে পরে আমার বন্ধুর হাতে সামান্য আতর দিলেন, সেই অপার্থিব সুগন্ধি আতর ! তারপর প্রায় চোখের পলকে হারিয়ে গেলেন প্লাটফর্মের উত্তর-পূর্ব দিকে বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আধারে । আমি অবাক হয়ে আমার বন্ধুকে বললা উনি এতো কম সময়ে এতো দুর যাবেন কিভাবে । যদিও তখন অদ্ভুত কিছু মাথায় আসেনি । তার প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর রাতের শেষ ট্রেনটি দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল আমাদের সামনে দিয়েই । আমার মাথায় শুধু একটা প্রশ্ন জাগলো কিন্তু বন্ধুকে আর জিজ্ঞেস করলাম না, শুধু শুধু ওর মাথায় দুঃশ্চিন্তার বীজ কেন বপন করবো । প্রশ্নটা ছিলো এই দ্রুতগামী ট্রেনটা ওই বৃদ্ধের পেছন দিক থেকে যাবে, উনি যদি খেয়াল না করেন.... উফ আর ভাবতে পারলাম না । ওইদিন বন্ধুর সাথে যে জানা বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম তাও আর চালিয়ে যেতে পারলাম না। কথার মাঝে মাঝে আটকে যেতে লাগলাম । শেষে আমার বন্ধুই বললো, আজকে তুই থাম আমিই বলি যদিও ও অনেক কথাই বললো কিন্তু কি বললো আমি তা মনোযোগ দিয়ে শোনার ভান করলেও আমি কিন্তু কিছুই সেভাবে শুনিনি । না, আতরে কোন চেতনা নাশক ছিলোনা । কারন আড্ডার পর আমি নিজেই ড্রাইভ করে বন্ধুকে বাসায় ছেড়ে মেসে ফিরেছি । আর ট্রেনটা বেরিয়ে যাওয়ার পর সেই শীতল স্নিগ্ধ অনুভুতিটা ছেয়ে গিয়েছিলো আমার মধ্যে । যেটা হয়েছিলো পরের দিন ভোরে যখন গাড়ি নিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনের দিকে ওই চাচার খোজে । না সে চাচাকে আর পাইনি আর পাইনি কোন দুঃসংবাদও । এই ঘটনাটা যখন লিখেছি তখনও এই অনুভুতিটা হয়েছে। চাচাকে খুজে যখন ফিরলাম মেসে, ফোন করলাম আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী রাইসা কে। কিছুদিন হলো একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বের হয়েছে সে। তার পরপরই আমার মতো পঁচা সামুকে পা কেটে নির্বাসিতা হয়েছে নিজ বাড়ি থেকে আর আমি নির্বাসিত হয়েছি আমার বাড়ি থেকে। আমাদের দুজনের বাবার আমাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু মায়েদের অভিমান বুঝি একটু বেশিই হয়। তো রাইসা ফোনে বললো রাত-দুপুরে স্টেশনে কি উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম, বড্ড বেরসিক সে। ডাক্তারি পড়তে গেলে মানুষ বোধহয় এরকম আবেগ অনুভূতি হারিয়ে বসে৷ ওর বাবা বেশ বন্ধু সুলভ মানুষ। আমার সাথে প্রায়ই কথা হয়। ভদ্রলোক সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রাইসাকে বলেছিলেন আমাকে নিয়ে একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে কনসাল্ট করতে। জবাবে রাইসা বলেছিল, "ও অবুঝ হলে সেটা ও অনেক আগেই করতাম, কিন্ত যার দুটো মিডিয়াম সাইজের বুক শেল্ফ ভর্তি হিউম্যান সাইকোলজি ও ক্রিমিনাল সাইকোলজির বই আছে এবং প্রত্যেকটা বই পঠিত তাকে নিয়ে কনসাল্ট করার মতো দক্ষ সাইকিয়াট্রিস্ট এর ঠিকানা আমার জানা নেই" কথাটা খুব একটা মিথ্যা না, সঠিক রাস্তা ধরে পড়লে এতোদিন আমার হয়তোবা সাইকোলজির ওপর একটা ডিগ্রি থাকতো। জবাবে ওর বাবা বলেছিলেন "তোমরা দু'জনেই সাইকো। যাক সেসব কথা, যাদের পরিচয় মর্গের সামনে থেকে শুরু হয়ে এতোদুর পর্যন্ত গড়ায় তাদের সাইকো বললে সাইকোর ডেফিনেশনের সাথে খুব একটা পার্থক্য হবেনা। আচ্ছা রাইসার সাথে আমার পরিচয়টা কিভাবে হয়েছিল সেটা সংক্ষেপে বলি। বছর চারেক আগের কথা। আমি যে তিনটা অনুভূতির কথা বললাম আসলে এই তিনটা অনুভূতি আমার কাছে অনেকটা নেশার মত। আমি সব সময় খুঁজে ফিরি এই অনুভূতি গুলোকে। তেমনি এই অনুভূতি গুলোকে খুঁজতে একদিন বেরিয়েছিলাম প্রচন্ড ঝড়ের রাতে।  প্রতিটা বজ্রপাত শুনে মনে হচ্ছিলো আকাশ টা বুঝি ভেঙে পড়বে। এই সময় একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে গাড়িটা রেখে দাড়িয়ে অনুভব করছিলাম একটা চাপা আক্রোশ মানে মধ্যম অনুভূতিটা। কে যেন আমার এই অনধিকার প্রবেশে একদমই খুশি না৷ সে যেন কৃষ্ণ গহব্বরের মতো শুষে নিতে চায় আমার অস্তিত্ব। কিন্তু আমি যেন এটাতে পৈশাচিক একটা চাঁপা আনন্দ পাচ্ছি, কারণ আমি জানি সে কিছুই করতে পারবে না। কারণ সে কিছু করার ক্ষমতা হারিয়েছে। এমন সময় একটা পার্থিব কৃত্রিম আলো সরাসরি পড়ল আমার ওপর, আঁতকে উঠলাম। আরে ভাই আমিও মানুষ, ভয় ডর আমারো আছে। তো ওপাস থেকে একজন বললো আপনি কে? এখানে কি করছেন? তার ওপর শালা রেইনকোট পরে আছে। না, ভুত-প্রেত না। আনসার সদস্য। বললাম আমার রোগী ভর্তি আছে।  সেখানেতো থাকার জায়গা নেই তাই ঘুরতে ঘুরতে এদিকে চলে এসেছি। মিথ্যাটা বলে ধরা পড়ে গেলাম, আনসার সদস্য বলল তাই বলে মর্গের সামনে এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ভিজছেন? লাশ চুরির ধান্দা নাকি? নাকি দুপুরে যে আত্মহত্যা করা মেয়েটার লাশ এসেছিলো তার সাথে সম্পর্ক ছিলো, বেঁচে থাকতে তো ঠিকই পালিয়ে ছিলেন এখন এখানে কি ?  আসেন আমার সাথে। আমাকে নিয়েগেল কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে, ছেলেটার ইন্টার্নি চলছে বয়সে আমার চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট হবে। আমাকে দেখে বললো, "দেখেতো চোর বাটপার মনে হয়না, কি করছিলেন মর্গের সামনে?" আমি বললাম আমি এখন যাই বলি আপনি বলবেন এসব কথা অনেক শোনা আছে। যদিও আপনাকে কখনোই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি এখনো পরবর্তী কি করনীয় তা নিয়েও ভাবছেন কারন আবাসিক চিকিৎসক সাহেব বেশ রাগী তাকে এরকম তুচ্ছ কারনে ফোন করলে সে আপনার পুরো কথা না শুনেই ধরে নিবেন আমি আসলেই কোন রোগীর আত্মীয় যে ভুল করে ওদিকে চলে গিয়ছিলাম। তার চেয়ে একটা বুদ্ধি দেই শুনেন। এইযে আমি যে আপনাকে এতোগুলা কথা বললাম এই আনসার ভাইয়ের সামনে তাতে নিশ্চয়ই আপনার ইগো হার্ট হয়েছে আমাকে উচিত শিক্ষা দিতে হলে থানায় ফোন করেন, তারা যদি আমাকে ধরে নিয়ে যায় আতে আপনার ইগো কিছুটা স্যাটিসফাই হবে। কথাটা শেষ করতেও পারিনি ঝড়ের মতো একটা মেয়ে রুমে ঢুকলো, ভিজতে ভিজতেই এসেছে মনে হয় ভেজা চুলে কোন মেয়েকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে ভাবতেই পরিনি, আসলে সত্যি বলতে ভাবিইনি তাছাড়া চশমার কাঁচে পানি জমার পরেও সে তার ভেতর দিয়ে কিভাবে ও কি দেখছে সেটাও ভাববার বিষয়। আপাতত সেটা ভাবলাম না, সৌন্দর্যটাই অবলোকন করতে থাকলাম। মেয়েটা মানে রাইসা ছাগলটাকে  আমাকে দেখিয়ে (ওই ইন্টার্ন ডাক্তার) বলল, "ভাইয়া ও আমার আত্মীয়, দেখা করতে এসেছিলো। রাতের ট্রেনে চলে যাওয়ার কথা ও সেই ট্রেন মিস করেছে এখন ওর কাছে টাকাও ছিলোনা তাই বলেছিলাম এসে আমার কাছে থেকে নিয়ে যেতে, এখন এসেছে ঠিকই কিন্তু আসতে আসতে ফোনটা পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করেছে তাই আমাকেও কল করতে পারেনি বলেছিলাম আমাদের হোস্টেলের ওয়েটিং রুমে আসতে পথ ভুল করে ওদিকে চলে গিয়েছিল। আনসার সদস্য কিছু একটা বলতে গেল, রাইসা এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। 

তো এভাবে রাইসা আরো কিছু কথা বানিয়ে বলে আমাকে ওখান থেকে প্রায় ছিনিয়ে আনলো, ওর তখন সম্ভবত থার্ড ইয়ার চলছিলো। তো পরে আমি আমার প্রতি এই দয়ার কারণ জানতে চাইলে ও বললো ও আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। আমি বললাম কিভাবে? রাইসা বললো " সেটা জনা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়" এই নিন আপনার গাড়ির চাবি, এসে যখন আই.সি.ইউ এর সমনে বসে ছিলেন তখন ওখানেই ফেলে এসেছিলেন। আপনি কাল আবার আসবেন, আপনার সম্পর্কে কিছু জানার আছে এখন যান। এটা বলেই চলে গেল। 
পরের দিন সকাল দুইটায়, ও আপনাদের সাথে আমার সময়ের মিল হবেনা । পৃথিবীর আহ্নিক গতির হিসেবে আমার দিন রাত হয়না । আমার সময় আমি আমার খেয়াল খুশি মতো ঠিক করি, সে যাই হোক আমি গেলাম হাসপাতালে, ভেজা চুলে বৃষ্টিরি পানিতে ভেজা ঝাপসা চশমার কাঁচের পেছনের ওই চোখের মধ্যে কোন এটা আকর্ষণ ছিলো যা আমি উপেক্ষা করতে পারিনি, যে চোখ দেখে শিরদাড়ায় খেলে যায় তড়িৎ চুম্বকিয় এক অদ্ভুত তরঙ্গ, যে চোখ দেখে লাঠির আগায় শীতল শুভ্র আলো বিচ্ছুরনকারী প্রস্তর খন্ড দিয়ে বানানো মশাল হাতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে নীলচে অন্ধকার গহীন বনে ।
হাসপাতাল ভবনের গেইটের সামনেই দাড়িয়ে ছিলো ও । আমি গাড়িটা কোন রকমে পার্ক করে এগিয়ে গেলাম ওর দিকে । একটা রাস্তা ধরে কিছুটা নির্জনতার খোজে হাটতে লাগলাম আমরা, আমি অন্যকোন কথা না বলে সরাসরি টু দ্য পয়েন্টে এসে আমার উদ্দেশ্য বিধেও বলতে লাগলাম কারন আমি জানি ও কি জানতে চায় এবং ওযে আমাকে অনেক আগে থেকেই ফলো করেছে তা বুঝতে কোন মনোবিজ্ঞানী হতে হয়না কারন, রাত-দুপুরে হোস্টেলের নিয়ম ভেঙে কোন অপরিচিত একটা লোককে পুলিশি ঝামেলা থেকে বাঁচাতে একটা মেয়ে ভিজতে ভিজতে নিশ্চয়ই যেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো, (ইমারজেন্সি মনে হয়) ওখানে আসবে না । আর আমিও এই হাসপাতালে আজ প্রথম আসিনি, ওই বিশেষ অনুভুতির খোজে আমি প্রায়ই এখানে আসতাম যেমনটা অন্য সব জায়গায় যাই। কখনো রেল লাইনের ধারে, কখনো সুউচ্চ নির্মানাধীন ভবনে কখনোবা অগ্নি ট্রাজেডির শিকার হওয়া কোন ভ্যাপসা দূর্গন্ধ যুক্ত ফ্যাক্টরির ধ্বংসাবশেষে, মানুষের অস্থি-মজ্জা পোড়া ভ্যাপসা দূর্গন্ধ ! বেশিরভাগ সময় প্রথম ও মধ্যম অনুভুতিটা হয় ওসব জায়গায়, প্রচন্ড চাপা শিকলবদ্ধ তীব্র ক্রোধ, আক্রোশ থাকে ওসব যায়গায় । যেন কেউ নিজের সাতে ঘটে যাওয়া অপরাধের সাক্ষ্য দিতে চায় কেউ । কিন্তু অত্যন্ত লো ফ্রিকোয়েন্সি হওযার কারনে আমার সাধারণ শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের পক্ষে তা ডিকোড করা সম্ভব হয় না আর আমি চেষ্টাও করিনা ।
তো এভাবেই পরিচয় রাইসার সাথে । আমার এই অনুভুতি ও তার প্রতিক্রিয়া গুলো শুনে ও বলেছিলো ”কিছুটা অদ্ভুত উত্তরই আশা করেছিলাম আমি, তবে তা এতোটা অদ্ভুত হবে তা ভাবিনি” আর বলেছিলো ”আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন ওইরকম কোন জায়গায় ?” আপনাদের ক্ষেত্রে মনে হতে পারে আমার প্রতি ওর অ্যাপ্রোচটা খুব বেশি হাই ছিলো, আমারো তেমনটাই মনে হয়েছিলো ।
নাহ্, নিয়ে যাইনি কখনো ওরকম কোন জায়গায় । সাহস হয়নি । যাকে বুকের পাজর দিয়ে দূর্গ বানিয়ে আগলে রাখতে চাই তাকে কিভাবে অমন অশুভ যুদ্ধের ময়দানে উন্মুক্ত করে দেই ।
যাক সে কথা, একদিন ফেইসবুক স্ক্রল করছিলাম । হঠাৎ একটা খবর চোখে পড়লো । একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে । আর পুড়ে কয়লা হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক হতভাগা শ্রমিক। আগুন লাগার পর কেউ তালা লাগিয়ে দিয়েছিল বের হওয়ার রাস্তায়। তো আমি ঠিক করলাম আমি যাবো সেখানে। ঘটনার দুদিন পরে একরাতে সে সুযোগ হলো। গাড়ির হেডলাইট নিভিয়ে অত্যন্ত ধীরে যতটা সম্ভব কম শব্দ করে রাখলাম ফ্যাক্টরির এক ধারে। এ ফ্যাক্টরিটা শহর থেকে একটু দুরে। 
এখন এখানে কেউ নেই, ছোট্ট একটা টর্চ হাতে পুলিশের ডু নট ক্রস সাইন যুক্ত টেপ জাতীয় বাঁধা এড়িয়ে ঢুকে পড়লাম ভেতরে, পাঁচতলা ফ্যাক্টরি। তৃতীয় তলায় ঘটেছে সর্বাধিক মৃত্যু, ১২৭ জন। এখনো ধোঁয়া উঠছে, ফায়ার ব্রিগেডের আগুন নেভানোর জন্য দেয়া পানিতে মানুষের অস্থিমজ্জা মিশে তৈরী হয়েছে পানির চেয়ে সামান্য ঘন তরল যা কিনা ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার পা, আর স্যান্ডেলটাকে করে তুলছে পিচ্ছিল। তরলটার ছবি তুলার জন্য পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম । তার প্রায় সাথে সাথেই রাইসার কল । অত্যন্ত অস্বস্থি বোধ করলাম । আমার এই ঘন তরল অন্ধকার জগৎ থেকে আমি ওকে অনেক দুরে রাখতে চাই, অনেক দুরে । আমি চাইনা এই জগৎ থেকে সামান্য ফোনালাপের মাধ্যমেও  ওর কোন যোগ সুত্র তৈরী হোক ।
তাই ফোনটা না ধরে অ্যারোপ্লেন মুডে সুইচ করে দিলাম । অর্থাৎ এটা আর কোন রেডিও তরঙ্গ বিকিরন করছে না । প্রায় সাথে সাথেই ঘর, না ঘর বললে ভুল হবে, বিশাল হল রুমটার পরিবেশ কিরকম বদলে গেলো । সেই বাজে লো ফ্রিকোয়েন্সিটা তীব্র হলো, কিন্তু এখানে কোন আক্রোশ নেই, আমার উপস্থিতিতে কোন তাদের কোন ক্ষোভ ( তাদের বললাম এই কারনে, যে ব্যাপারটা আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে, দূর্বোধ্য মানসিক অ্যালগরিদম রচনা করার মতো ধৈর্য বা ইচ্ছে শক্তি কোনটাই এখন অবশিষ্ট নেই)। তারা এখন শীতল হতে চায়, স্থীর হতে চায় । তারা জানে, তাদের জীবনের মুল্য বিশ/পচিশ হাজার টাকা সরকারি সহায়তা । জীবন যুদ্ধ অনেক হয়েছে, এখন হাশরের দিন পর্যন্ত বিশ্রামের সময় । তবে ওই তরঙ্গের মধ্যে কিছু আকুতি যে ছিলোনা তা না । ছিলো, ছিলো এক মায়ের আকুতি, তার সদ্য পুরোপুরি এতিম হওয়া সন্তান দুটোর জন্য । তাদের পিতা তো অনেক আগেই সড়ক দূর্ঘটনায় অতীত হয়েছে । হ্যা, আমার মতো বয়সের একটা ছেলেরও একটা আকুতি ছিলো তার অন্তঃসস্ত্বা স্ত্রীর জন্য। ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলো, কারোর পরিবাই মেনে নেয় নি। ছোট্ট একটা ঘর বাঁধতে চেয়েছিলো, সবকিছুই প্রায় গুছিয়ে নিয়ে ছিলো। আর এখন, ১৮ ঘন্ট ধরে জ্বলা আগুনে সব শেষ । হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই , প্রায় ১৫ ফুট ওপর থেকে পড়লাম নিচে, মানে তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় । আগুনের তাপে লোহা দুর্বল হয়ে কংক্রিট ধসে গিয়েছে এই জায়গাটায় । যখন ক্লাস সেভেনে পড়তাম তখন নুর নামের একটা বন্ধু ছিলো আমার, ও এক দিন বলেছিলো আকস্মিক উচ্চচাপে দেহের কোথাও কাটলে সেখানে যন্ত্রনার অনুভুতি হতে দেরি হয়, অনেকটা ট্রেনে কাটা পড়ার মতো । ব্যাপারটা সত্যি কিনা তা পরীক্ষা করার সুযোগ কখনো হয়নি । তবে আজ মনে হয় পরীক্ষাটা হয়ে গেল ! ওপর থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়েছি তা বুঝতে পেরেছি কিন্তু যন্ত্রনা হচ্ছেনা ।
যখন ওপর থেকে পড়েছি মনে হচ্ছিল সব কিছুকে স্লো মোশনে চলা ভিডিওর মতো ।এটা হওয়ার কারণ হলো মানুষ বিপদে পড়লে মস্তিষ্কের নিউরন গুলো অতিদ্রুত পরিস্থিতিটাকে বিভিন্ন ডাইমেনশন থেকে বিশ্লেষন করে আত্মরক্ষার জন্য সবচেয়ে সেইফ কনফিগারেসনটা বেছে নিতে চেষ্টা করে । একারনে খেয়াল করে দেখবেন কোন দুর্ঘটনার শিকার হলে, ওই দূর্ঘটনা ঘটার সময়কার প্রত্যেকটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিটেইল আপনার মনে আছে । সে যাই হোক ১৫ ফুট ওপর থেকে পড়ার পর যেন সব কিছু থেমে গেলো । আমার চোখ দুটো খোলা, চিৎ হয়ে পড়েছি । হঠাৎ সেই তৃতীয় শীতল শুভ্র আলোক যুক্ত মায়াময় স্নিগ্ধ অনুভুতিটা হতে লাগলো, আস্তে আস্তে সাদা আলোটা সরে গেল চোখে ভেসে উঠলো অগনিত নক্ষত্র খচিত আকাশ যেন আমি আলোক দুষন মুক্ত কোন এক সাদা বালির ছোট্ট দ্বীপে শুয়ে শুয়ে আছি , পায়ে ঠেকছে শীতল সমুদ্রের পানি, সেখানেও আছে তারার মতোন বায়োলুমিনেসেন্স প্লাঙ্কটন। এই আসীম ব্রহ্মান্ড আজ যেন আমাকে কিছু বলতে চায়, দেখাতে চায় । এরই মধ্যে একটা শব্দ হলকা থেকে তীব্র হতে লাগলো, কানে তালা লাগলে যেমনটা হয় শব্দটা ঠিক সেরকম । আস্তে আস্তে অন্ধকার সরে গিয়ে যেন ভোর হচ্ছে । নাহ্ টিক ভোর না, একটা ঝাপসা কাঁচের ওপাশ থেকে কে যেন সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে...
রাইসা, 
ও এখানে এলো কি করে । কে নিয়ে আসলো, কৌতুহল ও রাগ দুটোই হচ্ছে । আরো কিছুক্ষন পর ব্যাপারটা পরিস্কার হলো । আমি হাসপাতালে । না, কিছুই হয়নি । সামান্য আচড় লেগেছে কয়েকটা । কিন্তু এই টুকুতেই সাত দিন হুস মানে জ্ঞান না থাকার কারন খুজে পাচ্ছিলাম না যদিও পরে ভাবলাম ১৫ ফুট উচ্চতা খুব একটা কম ও  না ।রাইসার কি আমার প্রতি বিরক্ত হওয়া উচিত, উচিত বটে কিন্তু ও বিরক্ত না । সত্যিই তো, আমি ওকে আমার প্রতি কখনো বিরক্ত হতে দেখিনি!

মেসটা ছেড়ে দিয়েছি । একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি একটা । রাইসা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে বাসাটা । মেস ছাড়ার ডিসিশন টা ওরই । মেস থেকে কিছুই আনিনি আমি । মেসের জিনিস গুলোর সাথে কেমন জানি একটা তরল অন্ধকার লেগে আছে, পুড়িয়ে ফেলেছি সব । একলা পোড়াতে সাহস পাইনি যেন ওই তরল অন্ধকার কোননা কোন ভাবে আবার আমাকে গ্রাস করবে, রাইসা পাশে দাড়িয়ে ছিলো তখন । ও যখন পাশে থাকে তখন ওই অন্ধকার অদ্ভুত ভাবে দুরে সরে যায় । এখন যে বাসাটাতে থাকি তার বারান্দা থেকে আকাশ দেখা যায় । একদিন ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেলো, রাইসা ঘুমিয়ে আছে । আমি বারান্দায় গেলাম, চাঁদের থেকে আমার তারা দেখতে বেশি ভালো লাগে শুকতারাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম একটা সিগারেট ধরালাম । শীতল বাতাস বইছে । ভাবলাম এখন থেকে আর ওই বিষাক্ত অভিশপ্ত অনুভুতি গুলোকে ধাওয়া করে ফিরবো না । এখন থেকে খুজবো সেই শীতল শুভ্র অনুভুতিটাকে...... 


WRITTEN BY TANYMBARAKAH

AUGUST 27, 2021


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ