নিশাচরের ডায়াল বিহীন ঘড়ী


 


 আমি সাহেদ, কি করি? ঠিক নাই, ফ্রিল্যান্সার বলতে পারেন আবার নাও বলতে পারেন । একটা গাড়ি আছে, ঘুরতে ভালো লাগে তাই কিনে ছিলাম । টাইটেলে দেখলন ডায়াল বিহীন ঘড়ী, ভাবছেন সেটা কিরকম জিনিস হতে পারে ? আসলে ব্যাপারটা হলো সময় টাকে আমি আমার মতো করে নিয়েছি, না । টাইম মেশিন না আর এটা সাইন্স ফিকসনও না। বাাদ দেন, ব্যাপারটা বোঝাই আপনাদের । আমার থাকার ঘরটা এক রুমের একটি ৯ তলা ভবনের দশম তলা মানে ছাদের ওপর অনেকটা লিফট ম্যানের থাকার জায়গা বা চিলেকোঠা বলতে পারেন, সাধারনত এর আসে পাসেও কেউ আসেনা তাদের ধারনা আমি উন্মাদ কিসিমের লোক । আমাকে এই ঘরটা বাড়া দেওয়ায় অন্য ফ্ল্যাটের ভাড়াটিায়ার বাড়িওয়ালা শফিক সাহেবের ওপর বেশ ক্ষিপ্ত। তবে কোন অজানা কারনে তিনি আর বিল্ডিং এর কেয়ারটেকার, সিকিউরিটি গার্ড যাই বলেন সেই সোলাইমান চাচা আমার খুব ভক্ত। এবার আসি ঘরের কথায়, আমার ঘরের ইন্টেরিওয়রটা কালো, জাস্ট কালো এমনকি জানালা গুলোতে পুডিং এর পুরু আস্তরন দিয়ে আমি  কালো রং করে দিয়েছি, মোদ্দা কথা আমার ঘরে কোন আলো প্রবেশ করেনা, আলো আমার ভালো লাগেনা। আর রুমে এসি লাগানো আছে যা সব সময় ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দেওয়া থাকে তাতে ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে আপনি সময় ঠাওর করতে পারেবেন না। ঘরের এক কোনে আছে একাটা টেবিল যার ওপর একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার রাখা, সেটাও কালো। কোন কিচেন বা রান্নার সামগ্রী নাই, আমি বাইরে খাই। আমি রাতের বেলায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরহতে পছন্দ করি, রাত ১২ টার পর, ভাবছেন ঐরকম ঘরে আমি দিন রাত কিভাবে নির্ধারন করি ? আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমার একটা মোবাইলও আছে তাতে ঘড়িও আছে কিন্ত কোন ডায়াল নাই কারন ওটা ডিজিটাল । তো একদিন রাতের বেলায় মানে মধ্য রাতে ঢাকা এয়ারপোর্ট রোড ধরে এয়ারপোর্টের দিকে আ আমার টয়োটা প্রোবক্স ১০৫ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ঘোড়া হাকিয়ে চলেছি উদ্দেশ্যহীন ভাবে ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে । প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, ভিজিবিলিটি অতি সামান্য । রাস্তা ফাঁকা, কোভিড না করোনা কি যেন একটা ভাইরাস এসেছে । আর যাদের এ ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রন করার কথা তারা একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা করে ফেলেছে, তো বাদ দেন সেসব কথা । আমি নবাব ওই লকডাউনের মধ্যে ওই ১০৫ অশ্বশক্তি সম্পন্ন প্রোবক্স ঘোড়া ছুঠিয়ে জন সাধারনের অবস্থা দেখতে বেরিয়েছি । মাত্র লা, মেরিডিয়ান পার হয়েছি, হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে একটা থেমে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ির প্রায সামনে চলে আসলো,

ব্রেক কষতে কয়েক মিলিসেকেন্ড দেরি হলে এই মেয়ে নির্ঘাত হাসপাতালে আর আমি সরকারী রেস্ট হাউজে (জেলে) পৌছে যেতাম । গাড়িটা খানিকটা বেঁকে গিয়ে ভেজা রাস্তায় বেসটা স্কিড করে থামলো। আমি আঙ্কিত হইনি তবে অবাক হয়েছি এটা দেখে যে মেয়েটাও আতঙ্কিত হয়নি । গোলগাল ফর্সা বা শ্যামলা এসবের স্কেল আমি বুঝিনা চশমা পরা, বৃষ্টির পানি তার চশমার কাঁচে লেগে আছে আর তার ওপর গাড়ির হেডলাইটের আলো পড়ে ঝিকমিক করছে । আমি ভাবছি ও ওই চশমা পরে থেকে দেখছে কিভাবে ! যাই হোক আমি গাড়ি আগে পিছে করে অবারো রাজ্য পরিদর্শনে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমি এমনই, অনুভুতি নাই । মেয়েটা গাড়ির কাঁচে নক করলো । আমি ভাবলাম সে আমাকে কিছুক্ষন আপাদমস্তক ঝাড়বে এই বৃষ্টির মধ্যে রাতের বেলায় সানগ্লাস চোখে দিয়ে সর্বচ্চো গতিসীমা ৪০ কিলোমিটার প্রতিঘন্টার জায়গায় ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় গাড়ি চালানোর জন্য । তাই যতটা সম্ভভ নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ির কাঁচ নামালাম আর বললাম আই এম এক্সট্রিমলি সরি ( যদিও ভেতরে ভেতরে আমি মোটোই দুঃখিত বা বিরক্ত নই কারন আমার অনুভুতি নেই) মেয়েটা আমার সরির তোয়াক্কা নাকরে বললো  আমার বাবাকে বাাঁচান, আ্যাম্বুলেন্সটা নস্ট হয়ে গিয়েছে এবং তাতে থাকা অক্সিজেনের সিলিন্ডার প্রায় শেষের দিকে । পরিস্থিতি অনুধাবন করলাম এক সেকেন্ডও ভাববার সময় নেই । গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিলাম অ্যাম্বুলেন্সের দিকে । তারপর অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও সহকারী অতি কষ্টে ধরাধরি করে যতটা সম্ভব রোগীকে না ভেজানোর চেষ্টা করে আমার গাড়িতে তুললের আর আমি ওই প্রায় শেষ হওয়া অক্সিজেনের সিলিন্ডারটা কাঁধে নিয়ে আমার গাড়িতে তুললাম আর এই কার্য সম্পাদন করার সময় রোগী বাদে আমরা সবাই কাকভেজা ভিজলাম তারপর আবার ছুট । এখন ব্যাপারটা জীবন মরনের, দুটো পুলিশ চেকপয়েন্ট ডজ করে নিয়ে গেলাম উত্তরার এক হাসপাতালে, তবে না সেখানে আই.সি.ইউ তে সিট পাওয়া গেলনা তবে আল্লাহ্’র অশেষ রহমতে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া গেল । আমরা দুজন হাসপাতালের বাইরে বৃষ্টিতে ভিজে ঠকঠক করে কাঁপছি আর মিমের বাবা আমার গাড়িতে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে শুয়ে আছেন ।

ও, হ্যা মেয়েটা যখন তার বাবাকে আই.সি.উতে ভর্তির চেস্টা করছিলো তখন ফরম ফিলআপের জন্য যখন সে তার নাম লিখলো নওরীন জাহান মীম, সেখান থেকেই তার নাম টা জানলাম । ওর চশমার কাঁচে, চোখে এখনো পানি জমে আছে , জানি না তা বৃষ্টির পানি নাকি অস্রু ! একি আমার মধ্যে আবেগ/ অনুভুতি চলে আসছে কেন ? তাই জানতে চাইও না, আমার আবেগ অনুভুতি নাই । রাত সাড়ে তিনটার দিকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানালো তাদের পক্ষে আর কাউকে আই.সি.ইউ তে ভর্তি করা সম্ভব না । অপেক্ষায় থাকা রোগদের আত্মীয় স্বজন গেলো উত্তেজিত হয়ে । তখন আমি মিমের চোখে হতাশা ও ভয়ের কয়েক বিন্দু অশ্রু দেখতে পেলাম । যা আবেগ অনুভুতিহীন হয়েওে উপেক্ষা করতে পারলামনা । ফোনটা গাড়ি থেকে নিয়ে করলাম আমার এক ডাক্তার বন্ধুকে, অনেক চেষ্টার পর সে আই.সি.ইউ তে একটা বেড ম্যানেজ করতে পারলো । এরই মধ্যে মিমের বাবাকে আমার গাড়িতেই নিয়ে গেলাম আমার বন্ধুর সেই হাসপাতালে, ভর্তি করলাম । 

মেয়েটা সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে উত্তরার সেই হাসপাতালে নিচ থেকে ওপর তলা, কখনো লিফটে কখনো সিড়িতে ছুটোছুটি করে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত । একটু আগেই তার কয়েক জন আত্মীয় স্বজনও হাসপাতালে আসলো দেখলাম । অনেকটা অগোচরেই নেমে আসলাম হাসপাতালের করিডর থেকে । এখন মেয়েটার আর আমাকে দরকার নেই আর আমারো ঘুম আসছে, অনেক দিন পর আজ ভোরের নতুন সূর্য দেখলাম ।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনের ওপাশে মিম, বললো না বলেই চলে যাচ্ছেন ?

--হুমম, এখন আমাকে আপনার দরকার নেই । যদি আবার দরকার হয় আমি ঠিক পৌছে যাবো ।

-- কিভাবে

-- যেভাবে আপনি আমার ফোন নম্বরটা পেয়েছেন সেভাবেই ! ফোনটা কেটে দিয়ে চাবিটা হাতে নিয়ে গাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবছি, মিমের চাশমাটা যেন কেমন ছিলো......... বাদ দেন, আমি লেখক নই। তার পরেও লিখতে গিয়ে এই জগাখিচুড়ি পাকিয়েছি এবং আবার পাকাবো । লেখাটা পড়ে যদি আপনার মনে হয় আপনি আপনার জীবনের দুই আড়াই মিনিট নষ্ট করলেন, তাহলে করেই ফেলেছেন । তাতে আমি দুঃখিত নই, কারণ আমার অনুভুতি নেই ।


WRITTEN BY TANYMBARAKAH

AUGUST 15, 2021


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ