অনুভূতি - ২ (পর্ব-৭)




 


-ভেতরে আসুন, দরজাতো খোলাই আছে।


রুমের ভেতরটা বেশ গোছানো, সাধারণত মেয়েদের রুম যেরকম থাকে। মেয়েটা রাইসার বয়সেরই, সে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে তার পড়ার টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছে, ওটা বেশ উজ্জ্বল হলেওে রুমের তুলনায় কিছুটা ক্ষীন। ওয়ালে বেশ কয়েকটা পেইন্টিং টাঙানো সম্ভাবত এই মেয়ের নিজেরই আঁকা। ভালো ছবি আঁকে মেয়েটা। রুমের মধ্যে ওই দূর্গন্ধটা ছাড়া কোন অস্বাভাবিকতাও নেই এবং আমার বিশ্বাস এই মেয়েও বাকিদের মতো দূর্গন্ধটা পাচ্ছেনা তবে একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেলো, একটা রাতে বৃষ্টির মধ্যে ঘন জঙ্গলে  একটা মেয়ে একটা ছেলের হাত জড়িয়ে একটা গাছের গুড়ির মতো কিছু একটার ওপর বসে আছে। চেহারা স্পষ্ট না হলেও আমার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না যে ওটা আমি আর রাইসা, কারণ ছেলেটার বাম হাতে শক্ত করে ধরে রাখা তরবারিটা!


আমি- কেমন আছেন?

-দেখতেই তো পাচ্ছেন!


আসলে এই প্রশ্নটা যে এখানে অ্যাপ্রুপ্রিয়েট না সেটা আমি নিজেও জানি। দেখতেই পাচ্ছি না ঘুমানোর কারণে চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে। এলোমেলো চুল, স্বাস্থ ভেঙে গিয়েছে। যাই হোক এখন এসব মুখ্য বিষয় না।

আমি বললাম আপনার বাবার কাছে আপনার বাবার কাছ থেকে আপনার নামটা জানা হয়নি।

-ইসরাত জাহান দিয়া। আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন, বসুন।


আমি সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললাম শুধু দিয়া বললেই পারতেন ।


দিয়া- আপনর আগে আরো কয়েকজন এসেছিলো, তারা সবাই আমার পুরো নামই জানতে চেয়েছিলো তাই পুরো নামটা আগেই বলে দিলাম। একটা অদ্ভুত বিষয় কি জানেন,? আমি আপনাকে আগে স্বপ্নে দেখেছি। আমি আপনাকে ডেকেছিলামও আপনি ফিরে তাকিয়ে খুজেছিলেনও কিন্তু দেখতে পাননি। আপনার হাতে একটা ক্ষত ছিলো, রক্ত ঝরছিলো আর আপনার সাথে একটা মেয়েও ছিলো।

আমি- আমার সাথে যে মেয়েটা ছিলো সে আমার স্ত্রী। আর আপনি স্বপ্নে সম্ভবত আমাদের একটা ঘন জঙ্গলে দেখেছিলেন, আচ্ছা আপনি কখনো বান্দরবন বা তার আশেপাশে কখনো গিয়েছিলেন?


দিয়া- না তো, কেন বলুন তো।


আমি আমার ডান হাতে সেদিন রাতে হওয়া ক্ষতটা উনাকে দেখালাম। আর বললাম আপনার স্বপ্নটা পুরোপুরি স্বপ্ন ছিলোনা। আর বললাম বাকি কোন কিছুর ব্যাখ্যাই আমার কাছে নেই।


দিয়া ক্ষতটা দেখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে বললো, আসলে আমার সাথে কি হচ্ছে বলুন তো?

আমি- জানিনা।


দিয়া- যে সমস্যা সম্পর্কে জানেনই না তার সমধান করবেন কিভাবে?

আমি- আমিতো আপনার মধ্যে কোন সমস্যাই দেখছিনা, স্বাভাবিকই তো আছেন।


দিয়া তার ঘরের একটা দিকে ইশারা করে বললো সমস্যা দেখতে হলে ওদিকে দেখুন।


আমি সেদিকে তাকিয়ে সেই বিভৎস অন্ধকারটাকে দেখলাম, এবার চমকেও উঠিনি ভয়ও পাইনি। আমি ওটার দিকে এগিয়ে গেলাম, ওটার খুব কাছে। 

দিয়া অবাক হয়ে আমার এই কর্মকান্ড দেখছে।

ওটা বিছানার একটা কর্নারে দাড়িয়ে ছিলো, ঘরটা কিছুটা অন্ধকারচ্ছন্ন হওয়ার কারনে এটাকে প্রথমে চোখে পড়েনি। আমি ঠিক ওটার দিকে ঝুকে বসলাম,

জিনিসটা আমার কাছ থেকে এমন আচরণ একেবারেই আশা করেনি, জিনিসটা কিছুটা পিছিয়ে গেলো।

আমি জিনিসটার কাছে কিছু একটা উত্তর বা হুমকি আশা করেছিলাম। কিন্তু জমাট বাধা ঘন অন্ধকারের কোন জবান থাকেনা, কেবল উদ্দেশ্য থাকে।


আমি অভ্যাসবসত একটা সিগারেট ধরালাম, যদিও ওটার কোন চোখ নেই তবে আকৃতি আন্দাজ করে করে ওটার চোখ বারাবর তাকিয়ে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ওর পরবর্তি পদক্ষেপের অপেক্ষা করতে লাগলাম।


হঠাৎ আমার মনে পড়লো একটা বিশেষ গোত্রের জ্বীনের কথা, এরা সরাসরি শয়তানের উপাসক। এদের যে নিকৃষ্ট উপায়ে আহব্বান করা হয় তা উল্লেখ করার মতো নয়। তবে এদের আহব্বান করা এক প্রকার মৃত্যুকে আহব্বান করা সমান। সামান্য, অতি সামান্য ভুলও আহব্বান কারীর ভয়ংকর মৃত্যুর কারণ হয়। কিন্তু আহব্বান কারীর ভুল হলে এদের যে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এদের আহব্বান করা হয়েছিলো তা এরা পূর্ণ করেনা। আহব্বানকারী তো মর্গে, মানে তার মানে কোন ভুল হয়েছিলো। তাহলে এ এখানে কেন?


{ এই জ্বীনের ও একে আহব্বান করার পদ্ধতির ব্যাপারে আমি কোন ডিটেইলই উল্লেখ করবোনা, কারণ সবার সবকিছু জানার দরকার নেই। }


তো সিগারেটা শেষ করে আমি যেই আয়াত-উল-কুরসী পড়তে পড়তে দিয়ার পড়ার টেবিলের দিকে হাটতে শুরু করেছি তখনি মৃদু আলোতে দেথলাম রাইসা দিয়ার ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে আর টর্চটা ধরেছে সরাসরি আমার দিকে, চোখে হুট করে উজ্জ্বল আলো পড়ায় আমি আমার চোখের উপর হাত দিলাম। এরই মধ্যে আমার আয়াত-উল-কুরসী পড়া শেষ করে ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথেই রুমের আলো জ্বলে উঠলো আর পুরো রুমটা একটা অপার্থিব সুগন্ধে রুমটা ভরে গেল। আলো জ্বলাতে আমি দেখলাম জানালার লোহার গ্রীলের একটা রড তীক্ষ হয়ে এমন একটা অ্যাঙ্গেলে আমার দিকে বেঁকে আছে যে আমি আর এক পা সামনে এগুলেই ওটা সরাসরি আমার বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে যেত! আর পিছন ফিরে দেখলাম ওই ঘন অন্ধকার আকৃতিটাও ওখানে আর নেই।

আমি দিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম গ্রীলের এই রডটা কি এমনই ছিলো?

দিয়া- না, তবে আপনার স্ত্রী আপনার জীবনটা বাঁচিয়ে দিলো কিন্তু।

আমি- বাঁচিয়েছেন আল্লাহ্, ওর উছিলায়।

দিয়া- আচ্ছা একটা সুঘ্রান পাচ্ছেন ?

রাইসাও বললো আমিও পাচ্ছি কিন্তু জানালাতো বন্ধ, হঠাৎ কোথায় থেকে আসছে বলোতো?


কিছু না বলে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম ২ টা ৪৭ বাজে, আমি এটুকু বুঝতে পারলাম এই রুমটা ওদের জন্য নিরাপদ।  আমি রাইসাকে বললাম যাই ঘটুক এই রুম থেকে যেন দিয়াকে না বের হতে দেয়। তারপর রাইসার হাত থেকে টর্চটা হতে নিয়ে নিচ তলায় সিড়ি ঘরে যেখানে দিয়ার বাবা-মা আর ইমাম সাহেব দাড়িয়ে ছিলেন সেখানে গেলাম। উনারা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। 


আমি উনাদের জিজ্ঞাসা করলাম দিয়ার এই সমস্যা কবে থেকে শুরু হয়েছে আর এখানে টাইলস এর কাজ কবে থেকে শুরু হয়েছে?

রশিদ সাহেব টাইলসের কাজ শুরু হওয়ার আনুমানিক ৪-৫ দিন পর থেকে আর তখন থেকেই টাইলসের কাজ বন্ধ। তা প্রায় দেড় দুই মাস হলো।

আমি আরো একটা প্রশ্ন করলাম, যে ওই ৪-৫ দিনের মধ্যে কে কে বাসায় এসেছিলো আর মিস্ত্রি কারা ছিলো?


রশিদ সাহেব বললেন সেভাবে তো মনে নেই তবে একটা ঘটনা ঘটেছিলো। যে বদমাইসটাকে গেইটে ধরেছিলাম টাইলসের কাজ ওকে দিয়েছিলাম। ওর টাইলসের বিজনেস, মিস্ত্রি গুলাও ওরই লোক। ও প্রায়ই কাজ দেখতে আসতো। ও একদিন আমার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমার মেয়ে না করার পর একদিন আমার অনুপস্থিতিতে আমার মেয়ের সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করে তার পর থেকেই কাজ বন্ধ। তারপর একদিন এসেছিলো টাকা চাইতে, আমি বাসায় ছিলামনা তাই দিয়ার মা দরজা খোলেনি। বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে গিয়েছিলো।


ঘটনা আমার কাছে সচ্ছ কাঁচের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তবে এখন আমাকে যা করতে হবে তা করতে ওই জিনিসটা সর্বোচ্চ বাধা দিবে। আমি একটা জিনিস আঁচ করতে পারলাম, সেটা হলো ওই সিড়ির তলের একটা নিদৃষ্ট অংশের বাইরে এর কোন কোন ক্ষমতা কাজ করছেনা। আর ওখানে আমি খোড়াখুড়ি করবো আর সবচেয়ে বড় ঝামেলা হবে খোড়া খুড়ির সময় যদি ওখানে আলো না থাকে। একটা প্লান মাথায় আসলো,

আমি রশিদ সাহেবকে মেইন গেইট টা পুরোপুরি খুলতে বলে আমি গাড়িতে চলে গেলাম। গাড়ি স্টার্ট করে ঘুরিয়ে মেইন গেইট পর্যন্ত আনতে আনতে রশিদ সাহেব গেইট খুলে ফেলেছেন। আমি ঝড়ের মতো গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গিয়ে হার্ড ব্রেক কষলাম, কারণ রশিদ বাড়ির সাহেব সামনে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকলেও রাস্তার ঠিক মাঝখানে রাইসা দাড়িয়ে আছে কিন্তু ওর তো এখানে থাকার কথা না। তারপর আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম হেডলাইটের আলোয় বাড়ির দেয়ালে রশিদ সাহেরে ছায়া পড়লেও রাইসার কোন ছায়া পড়ছে না। তারপরেও গাড়ি রাস্তার বাম সাইডে নামিয়ে দিয়ে রাইসার অবয়ব টাকে পাশ কাটিয়ে গেলাম, মেয়েটাকে অত্যন্ত ভালোবাসি আমি তাই ওর অবয়বের ওপর দিয়েও গাড়ি চালাতে পারলাম না। অবয়ব বলছি কারণ মিররেও কেবল রশিদ সাহেবকে দেখতে পেলাম, রাইসা ওখানে নেই। 


আমি গাড়িটা সোজা করে হেডলাইট হাই-বিমে দিয়ে রাখলে সিড়ি ঘরটা বেশি আলোকিত হতো, পুরো সিড়ি ঘরটা আলোকিত হতো। কিন্তু আমি গাড়িটা বাড়ির রাস্তা থেকে নামিয়ে ৪০° ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল করে রাখলাম। তাতে সিড়ি ঘরের একটা কর্নার আলোকিত হলো।


রশিদ সাহেবেকে বললাম মটর সাইকেলটা এখানে কে রেখেছে? কারণ ঠিক ওই জায়গাটাতেই আমার ওয়াকিটকিটা সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিলো।


রশিদ সাহেব বললেন আমিই রেখেছি।


আমি বললাম, এটা সরান আর একটা কোদাল দিন হাতে সময় খুব কম।

(সময় কম কারণ জিনিসটা আমার, আমাদের উদ্দেশ্য বুঝে গিয়েছে। আমার তো কিছু করতে পারবেনা কারণ আমার সাথে ওটার কোন সংযোগ নেই কিন্তু আজ রাত ৩ টা ৩৬ পার হয়ে গেলে দিয়া কাল রাত ৩ টা ৩৬ আর দেখতে পাবেনা)


রশিদ সাহেব কোদাল নিয়ে আসতেই আমি প্রায় উনার হাত থেকে কোদালটা ছিনিয়ে নিয়ে আগে থেকেই নিদৃষ্ট করে রাখা যায়গাটা সাবধানে খুড়তে লাগলাম আর সাথে সাথেই আমার টর্চ আর বাকি সবার মোবাইলের ফ্লাস এক সাথে বন্ধ হয়ে গেল কিন্তু বাইরে থেকে আসা গাড়ির উজ্জ্বল হেডলাইটের কারনে যাগাটা বিন্দুমাত্র অন্ধকার হলোনা। আমি নিজে নিজেই মনে মনে একটু হাসলাম আর খুড়তে থাকলাম।


সামান্য খুড়তেই একটা তাবিজ, একটা কাগজ তা থেকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কারন তাতে রক্ত দিয়ে কিছু জ্যমিতিক আকৃতি আর তাতে আরবীতে কিছু লেখা আর দুপাশে কিছু চুল আঠালো কিছু দিয়ে লাগানো। এ কারণেই আমি গাড়িতে থাকা রাইসার গ্লাভস পরে এসেছিলাম


ইমাম সাহেব কাগজটা দেখে বললেন ”লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” এটাতো কুফরী কালাম। 

আমি বললাম সেটাতো আমিও জানি কিন্তু কি ধরনের সেটা বলতে পারবেন? এই তাবিজের মাধ্যমে কি ওই নিদৃষ্ট গোত্রের জ্বীনকে দিয়ে কিছু করানো যায়?


উনি বললেন ”না, কারণ এই তাবিজের সাথে এর প্রতিক্রিয়ার কোন মিল নেই” তবে এতে উনার মেয়ের নাম আর উনাদের নাম আর রনি বলে কোন ছেলের নাম আর সম্ভাবত তার বাবা মার নাম লিখা। আর দ্বিতীয় বার ওই গোত্রের জ্বীনের নাম মুখেওে আনবেন না, অন্তত এখন না।


বয়সে তরুন ইমাম সাহেব, না জানারই কথা। আমি বললাম কাগজটার কি করতে হবে আমি জানি। তাবিজটার কি করবো বলুন।


উনি একটা পাত্রে পানি নিয়ে আসতে বললেন । তারপর সেই পানিতে সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিলেন। তারপর আমাকে তাবিজটা ভাঙতে বললেন, ভেতরে একটা কাগজ ছিলো সেটাতেও আরবীতে কিছু লিখা ছিলো। সেটা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে বললেন কিছুক্ষন। তারপর কাগজের লেখাগুলো ঘষে মুছে ফেলে সেটাকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে বললেন আর সাবধান করলেন ওই কাগজ পোড়া ধোঁয়া যেন কোনভাবেই নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ না করে এবং সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গায় তাবিজটা পুড়াতে হবে আর ব্যবহৃত পানিটা ফেলতে হবে।


এবার আমার মাথায় একটা চিন্তা আসলো যে এই টুকরো করা ভেজা কাগজ আমি পুড়াবো কিভাবে? অকটেন দিয়ে কাজটা করা যাওয়ার কথা কিন্তু তাতে এই কাগজ পুড়বে কিনা আমার সন্দেহ আছে কারন অকটেনের আগুন বেশিক্ষন জ্বলবেনা আর কাগজের টুকরো গুলো ভেজা। আর বাসার ভেতর চুলায়ও এই কাজ করা যাবেনা। তখন খেয়াল হলো রশিদ সাহেবের বাসার সামনের চুলার গ্যাস সিলিনন্ডারের কথা আর রাইসার সেই কথাটা যে ”পথই পথের সন্ধান দিবে”।


আমি গিয়ে চুলা থেকে গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপটা খসিয়ে দিলাম, এই গ্যাস সিলিন্ডারটাকেই আমি ব্লোটর্চের মতো ব্যাবহার করবো। 


এদিকটাতে রশিদ সাহেবের বাসাটাই শেষ বাসা আর রাস্তাটা উনার বাসাথেকে ৩০ গজ মত সামনে গিয়ে শেষ হয়েছে তার পরে বিল মতো, নদীও হতে পারে তবে এদিকে মানুষ জন আসেনা। ওখানেই কাজটা করা যায় কিন্ত তার আগে এই নাম লেখা আর চুল লাগানো কাগজটার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে।


তাই আমি খাপ থেকে তরবারিটা বের করলাম, কারণ আমি চাইনা দিয়ার আর ওর বাবা-মা’র নামটা ওই ছেলের নামের সাথে পুড়ুক।


তরবারিটা দেখামাত্র ইমাম সাহেব বললেন এই তরবারি আপনি কোথায় পেলেন?

আমি বললাম রোয়াংছড়ির জঙ্গলে, কেন?

ইমাম সাহেব বললেন খুব যত্ন করে রাখবেন এটা, এটা এই জগৎের তরবারি না, জঙ্গলে পড়েছিলো কিন্তু ধার, উজ্জ্বলতা আর দেখেছেন কোথাও একফোটা মরিচাও পড়েনি।


সেটা আমি আর রাইসাও খেয়াল করেছি তারপরেও ইচ্ছা করেই বললাম ”সেতো স্টেইনলেস স্টিলেও পড়েনা এ আর এমন কি?”


ইমাম সাহেব কিছু বললেনা, আমার প্লান ছিলো আমি ওই তরবারিটা দিয়ে ওই কাগজটা থেকে দিয়া আর ওর বাবা-মায়ের নামটা কেটে আলাদা করে ফেলবো তারপর ওই কাগজ পোড়াবো। এই প্লান আমার মাথায় আসলো কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ওই তরবারি দিয়ে দিয়াদের অংশটুকু কেটে ফেললে ওই কালো যাদু থেকে দিয়া আর তার পরিবারের সংযোগ সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কারণ এই কাগজে আগুন দেওয়ার পর কি ঘটবে তার কিছুই আমি জানিনা, আমি এইসব ব্যাপারে এক্সপার্ট নই। ভালো হোক বা খারাপ হোক আমি কেবল বিষয়গুরো অনুভব করতে পারি!

তো আমি যেই কাগজটা কাটতে যাবো তখন ইমাম সাহেব হঠাৎ বললেন,

-আমি হয়তো ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি।

আমি- কি সেটা তাড়াতাড়ি বলুন সময় নেই।


ইমাম সাহেব- এটা এই মেয়েটাকে ওই ছেলেটার প্রতি আকর্ষিত করার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু কোন একটা ভুলের কারণে এর প্রতিক্রিয়া এমন হচ্ছে! সেই হিসাবে ইতোমধ্যেই একটা মৃত্যু হয়ে গিয়েছে কারণ অতি সামান্য ভুলও কুফরী কালাম কারীর মৃত্যুর কারণ হয়।

আমি নির্বিকার ভাবে বললাম, হুমম মৃত্যু হয়েছে। ওই শয়তানের উপাসকের লাশ হাসপাতালের মর্গে পচছে, আর কিছু?


ইমাম সাহেব- আরো একটা মৃত্যু হবে কাজটা ঠিকমতো করতে না পারলে আপনার আর পারলে যে এই কাজ করেছে তার। আলাহ্ আপনাকে রক্ষা করুক।


আমি সরাসরি উনার চোখের দিকে তাকালাম আর আগের মতোই নির্বিকার ভাবে বললাম হায়াৎ শেষ হয়ে গেলে মৃত্যুতো আর ঠেকানো যাবেনা তবে তেমন কিছু হয়ে গেলে….


নাহ্ আর বললাম না, ওই ডিপোর আগুনে পুড়ে গলে মাটির সাথে মিশে যাওয়া হতভাগা ট্রাক ড্রাইভারের কথা মনে পড়ে গেলো যে বলেছিলো, 


” ভাই, বৌডার লগে কখনো ভালো কইরা কথা কইনাই। মাইনষে কইতো মাইয়া মাইনষেরে লাই দিতে নাই। এহন হিসাবটা মিলতাছে একভাবে, বাইরের মাইনষের কথায় পুরুষ হইতে গিয়া স্বামী হইতে পারিনাই। তয় অরে ভালোবাসতাম খুব কিন্তু কখনো বুঝতে দেই নাই। আমার এই কথাডা যদি অর কাছে পৌছাই দিতেন…


আমি বলেছিলাম এখন আফসোস করে লাভ নেই। আর আপনার এই বার্তাটাও আমি আপনার স্ত্রীর নিকট পৌছে দিবো না। তবে তাদের আপনাকে খোজার ব্যাপারটাতে আমি তাদের সাহায্য করবো, তবে সেটা আমার মতো করে করবো। এর বেশি আমি কিছুই করতে পারবো না।


-আমার শেষ কথাটাও আমার বৌ এর কাছে কেন পৌছায় দিতে পারবেন না?


আমিই উত্তর দিয়েছিলাম ”সহ্য করতে পারবেনা”। “


আমার কিছু হয়ে গেলে আমিও রাইসাকে বলতে বলতাম যে  “ আমি ওকে খুব ভালোবাসি “ আমি জানি রাইসাও এটা সহ্য করতে পারবেনা, এই কথাটার বোঝা আজীবন বয়ে বেড়াবে!


ইমাম সাহেব আমার দিকে এমন ভাবে এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন যেন আমার পিছনে আজরাইল (আঃ) দাড়িয়ে আছেন।


আমি আর সময় নষ্ট না করে কাগজটা তরবারি দিয়ে কেটে ফেললাম। দিয়া আর ওর পরিবারের নাম লেখা অংশটা থাকলো আমার বাম হাতে আর সাথে সাথে আমার দুই হাত এবং ডান হাতে থাকা কাগজের বাকি অংশ আর নিচে পড়ে থাকা তাবিজের কাগজের ছেড়া টুকরো গুলোতে আগুন ধরে গেলো। সেই সাদা নিলাভ আগুন! আর একটা কালো জমাট বাধা অন্ধকার  প্রচন্ড শক্তিতে ঝড়ের মতো ঘর থেকে বিকট শব্দে বেরিয়ে গেল তার সাথে সাথেই বাড়ির সব আলো একসাথে জ্বলে উঠলো আর পুরো বাড়িটা ওই অপার্থিব সুগন্ধে ভরে উঠলো। আমি ঘড়ি দেখলাম, ৩ টা ২৭ বাজছে। তার মানে ওই অভিশপ্ত অন্ধকারে অসতিত্ব এখানে আর নেই।


সবই পুড়ে গেলো, না সব না ওর পরিবারের নাম লেখা অংশটা অক্ষত থাকলো তবে তাতে কোন লেখা বা দূর্গন্ধ যুক্ত আঠালো কিছু দিয়ে লাগানো চুলের কিছুই আর নেই, ওটা শুধুই একটা সাধারণ সাদা কাগজে পরিণত হয়েছে। আর বাকি সব পুড়লো কিন্তু না উঠলো কোন ধোঁয়া না হলো কোন ছাই। ইমাম সাহেব আর রশিদ সাহেব অত্যন্ত আতংকিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ...

পরবর্তী পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ